Apan Desh | আপন দেশ

ইসলামে শ্রমের মর্যাদা, গুরুত্ব ও অধিকার

জুনাইদ হোসেন

প্রকাশিত: ২০:৩১, ১৫ মে ২০২৪

ইসলামে শ্রমের মর্যাদা, গুরুত্ব ও অধিকার

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন একজন শ্রমিকজীবি মানুষ। তিনি শ্রমবিমুখ সমাজকে অত্যন্ত ঘৃণা করতেন। সাহাবিরা তার খেদমত করবেন আর তিনি তাদের খেদমত নেবেন- এ রকম শিক্ষা তিনি কখনো দেননি। তার জীবনে এর কোনো নজিরও পাওয়া যায়নি।

একটা ঘটনা বলা যাক- রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের নিয়ে এক সফরে বের হলেন। এক পর্যায়ে তাদের সবার বিশ্রামে করার সময় হলো। বিশ্রামের ঘাটি তৈরি করার জন্য এক একজনকে এক একটা দায়িত্ব দেয়া হলো।

সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত থাকছেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে দেখা যাচ্ছিল না। হঠাৎ দেখা গেল তিনি জঙ্গল থেকে কাঠ কেটে তা নিজে বহন করে নিয়ে আসছেন। সাহাবিরা তখন বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এটা কেমন হলো? আপনার জন্য শত শত নিবেদিত প্রাণ খাদেম রয়েছে। অথচ আপনি জঙ্গলে গিয়ে নিজের কাঠ কেটে আনলেন, এটার কি দরকার ছিল?

রাসূলুল্লাহ (সা.) সরল ভাষায় জবাব দিলেন- افلا  اكون عبدا شكرا ‘আমি কি কৃতজ্ঞশীল বান্দা হব না?’ আমিও আল্লাহর বান্দা, তোমরাও আল্লাহর বান্দা। এ বান্দা হিসেবে আমরা সবাই সমান। আল্লাহ তাআলা মেহেরবাণী করে আমার নিকট ওহি প্রেরণ করেছেন। এ নেয়ামত প্রাপ্তির পরে আমার তো আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আরও বেশি আদায় করতে হবে। সুতরাং আমি আল্লাহ তা’আলার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্যই তোমাদের সঙ্গে কাজে শরিক হচ্ছি।

অপর একটি ঘটনা থেকে জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এক সাহাবি আসলেন। তিনি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি ক্ষুদা ও পিপাসায় কাতর, আমাকে কিছু দান করুন। রাসূলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, তোমার ঘরে কি কিছুই নেই? সাহাবি জবাব দিলেন, আমার ঘরে শুধুমাত্র একটা দামি বাটি আছে। হুজুর (সা.) বললেন, ঠিক আছে সেটা বিক্রি কর। তিনি সেটা বিক্রি করলেন। 

রাসূল (সা.) এ বিক্রয়লব্ধ টাকার কিছু অংশ দিয়ে আটার রুটি কিনে তার বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন। বাকি অংশ তার হাতে দিয়ে বললেন যাও, এ দিয়ে একটা কুঠার কিনে নিয়ে এসো। হাদিসে এভাবেও বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজ হাত মোবারকে দিয়ে কুঠারের হাতল লাগিয়ে বললেন, যাও এ নিয়ে জঙ্গলে গিয়ে কাঠ কেটে তা বিক্রি কর।

কিছুদিন পর সেই সাহাবি মহানবি (সা.)-এর খেদমতে আসলেন। তখন মোহাম্মদ (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কি রকম তোমার অবস্থা? তিনি বললেন, হুজুর! আল্লাহর রহমতে আমি বেশ ভালো আছি। আমি আমার শ্রমের বিনিময়ে যা কিছু পেয়েছি তাতে নিত্যদিনের প্রয়োজন মিটিয়ে এখনো আমার হাতে কিছু জমা আছে।

আরও পড়ুন>> আত্মহননকারী চিরস্থায়ী জাহান্নামী?

রাসূলুল্লাহ (সা.) হাত পাতাকে এত ঘৃণা করতেন যে, সাহাবায়ে কেরাম (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) যেমন ঈমানের জন্য বয়ান দিতেন, তেমনি এ বয়ান দিতেন যে, কোনো মানুষের কাছে হাতপাতা যাবে না। নবিজির এ তালিমের প্রভাব সাহাবিদের ওপর এ রকম পড়েছিল যে, কোনো এক সাহাবি উঠের পিঠে চড়ে যাচ্ছিলেন। 

এ সময় তার হাতের চাবুক নিচে পড়ে গেল। তার পাশে থাকা সাহাবিকে তিনি বললেন না যে, আমার চাবুকটি উঠিয়ে দিন। বরং সে সাহাবি উঠ থেকে নেমে নিজ হাতে চাবুকটি উঠালেন। তখন অপর সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, এত কষ্ট কেন করলে? আমাকে বললেই তো হতো। সাহাবি জবাব দিলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-র কাছে ওয়াদা করেছি, আমরা কোনো ব্যাপারে কারোর কাছে হাত পাতব না।

মহানবি (সা.) শ্রম দিয়ে জীবিকা অর্জনের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করে বলেন, ‘কারোর জন্য নিজ হাতের উপার্জন অপেক্ষা উত্তম আহার্য বা খাদ্য আর নেই। আল্লাহর নবি দাঊদ (আ.) নিজ হাতের কামাই খেতেন’। (বুখারি, মিশকাত হা/২৭৫৯)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি অর্থোপার্জন করে, পরিশ্রম করে সে ব্যক্তি আল্লাহর বন্ধু। বুখারি শরিফে আছে ‘আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজের হাতে বকরীর দুধ দোহন করতেন। নিজের হাতে নিজের জুতা সেলাই করতেন। নিজের হাতে কাপড়-চোপড় ছিড়লে তা সেলাই করতেন। তিনি হাট-বাজার করতেন।

আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) আরও বলেন, রাসূল (সা.) এমনকি আমার গৃহস্থলির কাজেও সাহায্য করতেন। শ্রমের প্রতি যে জাতি বিমুখ হবে সে জাতির মধ্যে দরিদ্রতা ক্ষুধা ও অর্থাভাব দেখা দেবে। আর যার মধ্যে দরিদ্রতা দেখা দেবে, অভাব দেখা দেবে, তার অনেক সময় ঈমান রক্ষা করা মুশকিল হয়ে পড়ে।

আপন দেশ/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়