Apan Desh | আপন দেশ

ইসলামে কোরবানির ফজিলত

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:১০, ২ জুন ২০২৪

আপডেট: ১৭:২৫, ২ জুন ২০২৪

ইসলামে কোরবানির ফজিলত

প্রতীকী ছবি

কোরবানির শাব্দিক অর্থ আত্মত্যাগ, উৎসর্গ বা বিসর্জন ইত্যাদি। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহর নামে কোনো কিছু উৎসর্গ করার নামই কোরবানি। প্রচলিত অর্থে কোরবানি হলো পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে জিলহজ্ব মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তির নির্দিষ্ট পশু জবেহ করা।

সূরা হাজ-এ মহান রাব্বুল আলামীন ঘোষণা করেন, আমি প্রত্যেক জাতির ওপর কোরবানির নিয়ম করেছি যাতে তারা চুতষ্পদ জন্তু জবেহ করে এবং আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। সেইসঙ্গে সূরা কাওসারে বলা হয়, তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করো এবং কোরবানি করো।

কোরবানির উদ্দেশ্য

কোরবানির মুখ্য উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন করা। তাকওয়ার মাধ্যমেই আত্মা পরিশুদ্ধ হয়। সূরা আল-আনআম’র ১৬২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, বলো, আমার সালাত, আমার হজ ও কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ সবই বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর উদ্দেশ্যে। 

কোরবানি আমাদের শিক্ষা দেয় আল্লাহর প্রেমে পূর্ণ তাকওয়া নিয়ে কোরবানি করতে হবে। জিলহজ মাসের ১০, ১১, ১২ তারিখ মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র এ কোরবানির উৎসব বা ঈদুল আজহা শুধু প্রতীকী অনুষ্ঠান মাত্র নয়।

মনের গভীরে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও তাকওয়া নিয়ে প্রিয় বস্তু তার নামে উৎসর্গ করাই এর উদ্দেশ্য। আল্লাহর কাছে কোরবানির পশুর গোশত ও রক্ত কিছুই পৌঁছায় না। কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহকে রাজি-খুশি করা, তার সন্তুষ্টি অর্জনই হলো মুখ্য উদ্দেশ্য। 

আল্লাহ বলেন, আমার কাছে এগুলোর গোশত ও রক্ত পৌঁছে না, পৌঁছে শুধু তোমাদের মনের তাকওয়া।

ফজিলত ও গুরুত্ব

কোরবানির দিন কোরবানি করা মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে সবচেয়ে বেশি পছন্দের। কোরবানির পশুর রক্ত ভূমিতে পতিত হওয়ার আগেই আল্লাহ তালার দরবারে কবুল হয়ে যায়। নবি করীম (সা.) বলেন, কোরবানির পশুর যত পশম থাকে তার পরিবর্তে ৩৩টি পুণ্য লেখা হয়ে থাকে। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিস থেকে জানা যায়, নবি করীম (সা.) বলেন, কোরবানির দিন রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে প্রিয় কোনো আমল আল্লাহর কাছে নেই।

কোরবানিকারী কিয়ামতের দিন জবেহকৃত পশুর লোম, শিং, ক্ষুর, পশম ইত্যাদি নিয়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে। 

সেইসঙ্গে কোরবানির গুরুত্ব সম্পর্কে হযরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণিত এক হাদীস থেকে জানা যায়, নবি করীম (সা.) বলেন, যে ব্যক্তির সামর্থ থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়।

কোরবানির শিক্ষা

মানব জীবনে কোরবানির মূল শিক্ষা সমাজের অভাবগ্রস্তদের সহমর্মিতার প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পারস্পরিক সৌহার্দ প্রতিষ্ঠা করা। সেইসঙ্গে আল্লাহর রাস্তায় মানুষের আপন সম্পদ উৎসর্গ করা। যিনি যত পরিমাণ সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করবেন। তিনি আল্লাহর তত নৈকট্য লাভ করবেন। কোরবানির ত্যাগ বা উৎসর্গ একটি বড় ইবাদত।

কোরবানির তাৎপর্য হলো আমাদের ভেতরের পশুত্ব, নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা ও বীভৎসতাকে দূর করা। অন্তরের মধ্যে বসবাসকারী পশুকে জবাই করা। এবং সেই সঙ্গে হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা বিসর্জন দিয়ে মানবতা ও ভ্রাতৃত্বোধে উজ্জীবিত হওয়া। এটাই বান্দার কাছে পবিত্র কোরবানির মহান শিক্ষা। এতে করে আমাদের মনে আত্মশুদ্ধি আসবে। অর্জিত হবে মনের তাকওয়া। 

আল্লাহর প্রেম শুধু কোরবানির দিনে সীমাবদ্ধ না রেখে, আজীবন অব্যাহত রাখতে হবে। সর্বক্ষণ মনে জাগ্রত রাখতে হবে কোরবানির মহান শিক্ষাকে। সেইসঙ্গে কোরবানি শিরক থেকে মুক্ত থাকার একটি কার্যকরী মাধ্যম।

আপন দেশ/এইউ/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়