Apan Desh | আপন দেশ

নামাজে চিন্তা ফেলে মনোযোগ ফেরাবেন যেভাবে

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৮:৩২, ১৫ জুলাই ২০২৪

নামাজে চিন্তা ফেলে মনোযোগ ফেরাবেন যেভাবে

ছবি: প্রতীকি ছবি

আমরা যখন নামাজ আদায় করি, অনেক সময় মাথায় উদ্ভট চিন্তাভাবনা আসে। যার ফলে নামাজ ঠিকমত আদায় হয় না।  এটি অবশ্যই শয়তানের ওয়াসওয়াসা, এতে সন্দেহ নেই। এটা এক তিক্ত বাস্তবতা যে, আমরা অনেকেই এ রোগের স্বীকার। এর প্রতিকার হল, নামাজে আপনার মনোযোগ ধরে রাখা। 

এখন প্রশ্ন হল, নামাজে মনোযোগ ধরে রাখার উপায় কি? কীভাবে আমি নামাজে পূর্ণ মনোযোগী হব? এ ব্যাপারে ইমাম আবু হামিদ আল গাজালি(রহ.) তার বিখ্যাত ‘এহইয়াউ উলুমিদ্দীন’ গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি ছয়টি বিষয়ের কথা বর্ণনা করেন, যা না থাকলে নামাজে মনোযোগী হওয়া যায় না। 

প্রথম বিষয়: নামাজে ‘হুজুরে দিল’ বা একাগ্র থাকা; এটি নামাজের প্রাণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহর ইবাদত কর এমনভাবে, যেন তাকে তুমি দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও, তবে তিনি যেন তোমাকে দেখছেন। (বুখারি হা/৫০; মুসলিম হা/৮; মিশকাত হা/২) 

বস্তুত আমাদের মন কখনও বেকার থাকে না; হয় নামাজে থাকে, না হয় অন্যত্র থাকে। নামাজে দাঁড়ালে শয়তান বারবার মানুষের মন ছিনিয়ে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু আমাদেরকে তা ধরে রাখতে হয়। সুতরাং নামাজের শুরু থেকে শেষ পযন্ত এ কল্পনা (মুখে উচ্ছারণ ব্যতিরেকে) ধরে রাখার অনুশীলন করুন যে,আল্লাহ আমাকে দেখছেন। 

দাঁড়ানো থেকে রুকুতে যাবার আগে, রুকু থেকে সিজদায় যাবার আগে কিংবা সিজদা থেকে বসার আগে, প্রত্যেক অবস্থান পরিবর্তনের পূর্বে মনের অবস্থাটা দেখে নিন, কল্পনাটা আছে কিনা। না থাকলে আবার নিয়ে আসুন। এভাবে এ অনুশীলনের মাধ্যমে নামাজ শেষ করার চেষ্টা অব্যাহত রাখুন।

রাসুল (সা.) বলেন, যে সুন্দরভাবে ওজু করে, অতঃপর মন ও শরীর একত্র করে (একাগ্রতার সঙ্গে) দু’রাকআত নামাজ আদায় করে, (অন্য বর্ণনায় এসেছে- যে নামাজে ওয়াসওয়াসা স্থান পায় না) তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়)। (নাসাঈ হা/১৫১; বুখারি হা/১৯৩৪; মিশকাত হা/২৮৭) 

দ্বিতীয় বিষয়: নামাজে যা কিছু পাঠ করা হয় তা বিশুদ্ধ উচ্চারণে পড়ার চেষ্টা করুন। এটি অন্তরের উপস্থিতিকে আরো দৃঢ় করে। অন্তত সুরা ফাতিহা ও তাসবীহগুলোর অর্থ বুঝে পড়ার চেষ্টা করুন। আল্লাহ তাআলা বলেন, স্পষ্টভাবে ধীরে ধীরে কুরআন তেলাওয়াত কর। (মুযযাম্মিল ৪) 

রাসুললুল্লাহ (সা.) প্রতিটি সুরা তারতীল সহকারে তেলাওয়াত করতেন। (মুসলিম হা/৭৩৩, তিরমিযী হা/৩৭৩) এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর নিম্নোক্ত হাদিসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি নামাজকে আমার এবং আমার বান্দার মাঝে দু’ভাগে ভাগ করেছি। বান্দা আমার কাছে যা কামনা করবে তাই পাবে। যখন আমার বান্দা বলে, (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি সারা জাহানের মালিক)। তখন আল্লাহ বলেন, (বান্দা আমার প্রশংসা করল)। যখন বলে, (পরম করুণাময় অসীম দয়াবান) আল্লাহ বলেন, (বান্দা আমার গুণগান করল)। 

যখন বলে, (বিচার দিবসের মালিক) আল্লাহ বলেন, (বান্দা আমার যথাযথ মর্যাদা দান করল)। যখন বলে, (আমরা কেবলমাত্র আপনারই ইবাদত করি এবং কেবলমাত্র আপনারই সাহায্য প্রার্থনা করি)। আল্লাহ বলেন, (এটি আমার ও আমার বান্দার মাঝে, আর আমার বান্দা যা চাবে, তাই পাবে)। যখন বলে, (আপনি আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করুন। এমন ব্যক্তিদের পথ, যাদেরকে আপনি পুরস্কৃত করেছেন। তাদের পথ নয়, যারা অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট হয়েছে)। আল্লাহ তাআলা বলেন, (এটা আমার বান্দার জন্য, আর আমার বান্দা যা প্রার্থনা করবে তাই পাবে)। (মুসলিম হা/৩৯৫; মিশকাত হা/৮২৩) 

তৃতীয় বিষয়: নামাজে আল্লাহর প্রতি ‘তাযীম’ বা ভক্তি-শ্রদ্ধা প্রদর্শন করুন। কেননা, আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা আল্লাহর সম্মুখে দণ্ডায়মান হও বিনীতভাবে (বাকারাহ ২/২৩৮) কাজেই ধীর-স্থিরতা অবলম্বন করুন। 

আবু কাতাদা (রা.)হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, নিকৃষ্টতম চোর হল সে ব্যক্তি, যে নামাজে চুরি করে। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! নামাজে কিভাবে চুরি করে? তিনি বললেন, যে রুকু-সিজদা পূর্ণভাবে আদায় করে না। (আহমাদ ; মিশকাত হা/৮৮৫ )  

চতুর্থ বিষয়: নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহতায়ালাকে ভয় করুন। ভাবুন, এ নামাজই হয়তোবা আপনার জীবনের শেষ নামাজ। রাসুলুল্লাহর (সা.) কাছে জনৈক ব্যক্তি সংক্ষিপ্ত উপদেশ কামনা করলে তিনি তাকে বললেন, যখন তুমি নামাজে দন্ডায়মান হবে, তখন এমনভাবে নামাজ আদায় কর, যেন এটিই তোমার জীবনের শেষ নামাজ। (ইবনু মাজাহ; মিশকাত হা/৫২২৬, সনদ হাসান) 

পঞ্চম বিষয়: নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে কল্যাণ আশা করুন। আল্লাহতায়ালা বলেন-তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর (সুরা বাক্বারা-৪৫)। এ বিশ্বাস রাখুন, আল্লাহ আমার প্রতিটি প্রার্থনায় সাড়া দিচ্ছেন। 

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের কেউ নামাজে দাঁড়ালে সে মূলত তার প্রভুর সাথে কথোপকথন করে। তাই সে যেন দেখে, কিভাবে সে কথোপকথন করছে। (মুস্তাদরাক হাকেম; সহিহুল জামে‘ হা/১৫৩৮) 

ষষ্ঠ বিষয়: নামাজে নিজের গুনাহর কথা চিন্তা করে আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হওয়ার কথা ভেবে নিজের মাঝে ‘হায়া’ বা লজ্জাশরম নিয়ে আসুন। দণ্ডায়মান অবস্থায় একজন অপরাধীর মত মস্তক অবনত রেখে এবং দৃষ্টিকে সিজদার স্থানের দিকে নিবদ্ধ রাখুন। রাসুলুল্লাহ (সা.) (দাঁড়ানো অবস্থায়) সিজদার জায়গায় দৃষ্টি রাখতেন। (দেখুন : তাফসীরে তবারী ৯/১৯৭) 

উপরের ছয়টি বিষয় অনুসরণ করলে নামাজে মনোযোগ তৈরি হবে ইনশাআল্লাহ। এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ). বলেন, যে ব্যক্তি নামাজের সময় হলে সুন্দরভাবে ওজু করে এবং একাগ্রতার সঙ্গে সুন্দরভাবে রুকু-সিজদা করে নামাজ আদায় করে, তার এ নামাজ পূর্বের সকল গুনাহের কাফফারা হয়ে যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে কোন কবিরা গুনাহে লিপ্ত হয়। আর এ সুযোগ তার সারা জীবনের জন্য। (মুসলিম হা/২২৮; মিশকাত হা/২৮৬) 

আল্লাহ আমাদের সকলকে নামাজ আল্লাহর পছন্দ মোতাবেক আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

আপন দেশ/এইউ
 

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়