বাবা, মা, সন্তান। ফাইল ছবি
ইসলামে বাবা-মায়ের হক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা মানবিক ও ধর্মীয় দায়িত্বের মধ্যে অগ্রগণ্য। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বারবার এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বাবা-মা সন্তানের জন্য শুধু জন্মদাতাই নয়, বরং তাদের প্রতিটি পদক্ষেপে গাইড হিসেবে কাজ করেন।
তাদের খেদমত করা, তাদের প্রতি বিনম্র ও সম্মানসূচক আচরণ করা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ আদেশ। আল্লাহ তাআলা বাবা-মায়ের অধিকারকে এমন উচ্চস্থানে রেখেছেন যে, তা তার নিজের ইবাদতের পরেই স্থান পেয়েছে।
আর তোমার প্রভু নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারও ইবাদত করবে না। মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ করবে। তোমরা জীবদ্দশায় যদি তাদের যে কোন একজন বা উভয়জন বার্ধ্যক্যে উপনীত হয় (তাদের আচরণে বিরক্ত হয়ে) উফ শব্দটিও বলনা। তাদের ধমক দিও না। বরং তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় সম্মানসূচক শব্দ ব্যবহার করো। তাদের সামনে দয়াবনত হয়ে বিনয়ের বাহু বিছিয়ে দাও। আর তাদের জন্য এ বলে দোয়া করো, হে প্রভু আপনি তাদের প্রতি দয়া করুন যেমন তারা আমাকে দয়া দিয়ে বড় করেছে। (সুরা বনি ইসরাঈল ২৩-২৪)
আরও পড়ুন>>>স্ত্রীকে যে শব্দ বললে তালাক হয়ে যায়
যদি বাবা-মা তোমাকে এমন কাউকে আমার সঙ্গে শরিক করতে চাপ দেয় যার ব্যাপারে তোমার জানা নেই, তাহলে তাদের কথা শুনবে না, তবে দুনিয়ায় তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করে যাবে। (সুরা লোকমান ১৫)
উত্তম ব্যবহারের সবচেয়ে বেশি হকদার কে? নবীজি সা. তিনবার মায়ের কথা বলেছেন। আর একবার বাবার কথা বললেন। (সহিহ মুসলিম ২৫৪৮) ইয়া রসুলুল্লাহ আমার সম্পদ আছে, আমার সন্তানও আছে, আমার পিতাও আছে। আমার পিতা আমার সম্পদের মুখাপেক্ষী, এখন আমার করণীয় কী? রসুল সা. বললেন, তুমি ও তোমার সম্পদ তোমার পিতার। (ইবনে মাজাহ, হাদিস:- ১৮৭০)
পিতা-মাতা সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি আর পিতা-মাতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি। (তিরমিজি শরিফ) রসুল (সা.) বলেছেন- মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। তারাই তোমার জান্নাত আর তারাই তোমার জাহান্নাম। (তিরমিজি শরিফ)
রসুল (সা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি তার বাবা-মা উভয়কে অথবা একজনকে বার্ধ্যকে উপনীত অবস্থায় পেল কিন্তু তাদের খেদমত করে জান্নাতের পথ সুগম করতে পারলো না। (সহিহ মুসলিম ২৫৫১)
বাবা-মা যদি পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। তবে তাদের জন্য দোয়া করতে হবে। কবর জিয়ারত করতে হবে। তাদের আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে সদাচরণ করতে হবে। (আবু দাউদ ৫১৪২)
হে প্রভু! আপনি তাদের প্রতি দয়া করুন, যেমন তারা আমাদের দয়া দিয়ে বড় করেছে। (সুরা বনি ইসরাঈল ২৫) বাবা-মায়ের হক আদায় করা শুধু একটি ধর্মীয় কর্তব্য নয়, এটি আমাদের ব্যক্তিগত এবং সামাজিক জীবনের সফলতার অন্যতম চাবিকাঠি। যারা তাদের বাবা-মায়ের প্রতি সদাচরণ করেন। তাদের জন্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।
পক্ষান্তরে, যারা তাদের প্রতি অন্যায় করেন, তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি। বাবা-মা জীবিত থাকাকালে যেমন তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং যত্ন নেয়া আমাদের দায়িত্ব, তেমনি তাদের ইন্তেকালের পর তাদের জন্য দোয়া ও সৎ কাজের মাধ্যমে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধির চেষ্টা করাও আমাদের কর্তব্য। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বাবা-মায়ের হক আদায়ের তাওফিক দিন। আমিন।
আপন দেশ/কেএইচ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।