ছবি: সংগৃহীত
কোরআন আল্লাহর বাণী, যা জিবরাইল (আ.) এর মাধ্যমে প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর ওপর নাজিল করা হয়েছে। এটি মানবজাতির জন্য চূড়ান্ত জীবন বিধান। কোরআন মুখস্থ করা আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপন ও আখিরাতে মর্যাদা বৃদ্ধির অন্যতম মাধ্যম। এটি অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আর দুনিয়া ও আখিরাতে হিদায়াতের পথ দেখায়।
তবে এ মহান কাজটি করার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একাগ্রতা ও মনোযোগ। মনোযোগ না থাকলে কখনই কোরআন মুখস্থ করা সম্ভব না। আপনার শেষ কবে এমন কিছুতে গভীর মনোযোগ ছিল, যার ফলে সময়ের হিসাবই রাখতে পারেননি? কবে এমন একটিমাত্র কাজে দীর্ঘ ২৫ মিনিটের বেশি সময় ধরে কোনো ব্যাঘাত ছাড়াই মনোযোগ দিয়েছিলেন? আজকের পরস্পর সংযুক্ত পৃথিবীতে গভীর মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা যেন হারিয়ে যেতে বসেছে।
আমাদের আজকাল মনোযোগ কমে যাওয়ার কারণ গবেষণা অনুযায়ী, একজন প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিদিন গড়ে ১৫০ বার ফোন চেক করেন। জেগে থাকার ঘণ্টাগুলোর মধ্যে ভাগ করলে দেখা যায়, প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১০ বার! এতে আমাদের মনোযোগ কতখানি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তা সহজেই বোঝা যায়।
তবে সফল যেকোনো ব্যক্তি আপনাকে বলবেন, সফলতার চাবিকাঠি হলো দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য, স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য এবং দৈনন্দিন গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর প্রতি গভীর মনোযোগ ধরে রাখা। এমনকি শুধু কাজের ক্ষেত্রেই নয়, আমাদের আধ্যাত্মিক উন্নতি, শারীরিক সুস্থতা এবং পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কগুলোতে সফল হতে গেলেও গভীর মনোযোগ অপরিহার্য।
ফজরের নামাজের পর কোরআন পাঠ, মুখস্থ করা ও তার অর্থ নিয়ে চিন্তাভাবনা করার গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ফজরের নামাজের পর ৩০–৪৫ মিনিট মনোযোগ দিয়ে কোরআন পড়া বা মুখস্থ করা, যখন চারপাশ শান্ত থাকে এবং দৈনন্দিন ব্যস্ততা শুরু হয়নি, এটি আমাদের সংযুক্ত পৃথিবীর ব্যাঘাতগুলোর বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতিষেধক হতে পারে।
কোরআনের মতো পবিত্র গ্রন্থ পাঠ করার সময় গভীর মনোযোগ দেয়া এবং মোবাইল বা অন্যান্য ব্যাঘাত এড়িয়ে থাকার অভ্যাস আমাদের মস্তিষ্কের মনোযোগ প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করে। এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন করার দক্ষতায়।
যদি আপনি প্রতিদিন সকালে মনোযোগ ধরে রাখার এ অভ্যাস গড়ে তুলতে চান, তাহলে নিচের বিষয়গুলো অনুসরণ করতে পারেন, কেবল মনোযোগ বাড়ানোর জন্য কোরআন মুখস্থ করবেন না। এটি আল্লাহর প্রতি আপনার ইবাদত হিসেবে করুন। এতে আপনি দীর্ঘমেয়াদে এ অভ্যাস ধরে রাখতে পারবেন। নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন, বিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করুন, আশেপাশে যেন কোনো ব্যাঘাত না থাকে। মোবাইল ফোন দূরে রাখুন।
চিন্তাগুলো সামলে নিন। পাঠের সময় মনোযোগ হারালে আবার কোরআনে ফিরে আসুন। যদি কোনো ভাবনা বারবার আসে, একটি খাতা বা নোটবুক রাখুন, সেখানে তা লিখে রাখুন।
ইন্দ্রিয় ও কল্পনা কাজে লাগান, কোরআন মুখস্থ করার সময় চোখ দিয়ে পড়ুন, কণ্ঠে উচ্চারণ করুন আর মুদ্রিত কোরআন হাতে নিন। এর অর্থ কল্পনায় দেখার চেষ্টা করুন এবং মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখুন।
আপনার মনোযোগ উন্নত করার জন্য সকালের এ সময়টুকু কোরআনের জন্য উৎসর্গ করা একটি অত্যন্ত কার্যকর ও বরকতময় উপায়। এটি আপনাকে শুধু মনোযোগী করে তুলবে না, বরং জীবনের সকল ক্ষেত্রে সফলতা অর্জনের পথ খুলে দেবে।
আপন দেশ/কেএইচ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।