Apan Desh | আপন দেশ

চাঁদ দেখা গেছে, খুশির ঈদ কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:৩০, ৩০ মার্চ ২০২৫

চাঁদ দেখা গেছে, খুশির ঈদ কাল

ফাইল ছবি

দেশের আকাশে ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে আগামীকাল সোমবার। আজ রোববার সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা ও পর্যালোচনা কমিটির বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, দেশের আকাশে পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। আগামীকাল সোমবারই সারাদেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপিত হবে।

এর আগে ঈদুল ফিতরের দিন নির্ধারণে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি ও ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।

সভায় ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা সম্পর্কে সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৬৪ জেলা কার্যালয়, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত হয়। পরে সংবাদ সম্মেলন করেন ধর্ম উপদেষ্টা।

ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, ঈদ আল্লাহর পক্ষ থেকে উপহার। এক মাসের সিয়াম সাধনা আর সংযমের পর ঈদ আনছে ‘ভাঙার দিন’।

রমজানে ২৯ দিন ধরে ছুটি ঘোষণা করা হয়। আজ থেকে শুরু হয়েছে ঈদের ছুটি। ঈদ ধর্মীয় উদযাপন হলেও বাংলাদেশে তা উৎসবেরও। প্রিয়জনের কাছে ফেরা ঈদের প্রধান আনন্দ।

এদিকে গত ২৩ মার্চ ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিনের ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা সরকার। এরপর গত শুক্রবার থেকেই লাখ লাখ মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে ছুটে যান। জীবিকার জন্য শহরবাসী মানুষ নাড়ির টানে ছুটেন বাড়িতে। তবে দীর্ঘদিন ছুটি হওয়ায় এবার ঈদযাত্রায় তেমন একটা ভোগান্তি ছিল না।

ঈদ মানেই নতুন জামা। কেনাকাটা হয়েছে দেদার, তার প্রমাণ গত কয়েক দিনে বিপণিবিতানে ছিল উপচে পড়া ভিড়। নিজের জন্য কিংবা অন্যকে উপহার দিতে; সামর্থ্যের মধ্যে সেরা জামা খুঁজে পেতে অহর্নিশ দোকান থেকে দোকানে ঘুরে বেড়িয়েছেন অনেকে।
তারপরও সবার ভাগ্যে নতুন জামা জুটবে না। 

ঈদের আগেই অস্বাভাবিক জোয়ারে ঘরবাড়ি হারিয়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। দেশে এমনও কোটি মানুষ আছে, যাদের ঈদের দিনেও খাবার জোটে না। তবে ঈদ মানেই দুঃখী-দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা। 

তাই তো ইসলামের তাগিদ– ঈদগাহে যাওয়ার আগেই পরিশোধ করতে হবে জাকাত। যাতে ধনী-গরিব নির্বিশেষে পালন করতে পারেন ঈদের খুশি। 

বিত্তবানের জাকাত ও ফিতরা দেওয়া ওয়াজিব। নজরুলের কবিতার মতোই– ‘যার ঘরে ধন রত্ন জমানো আছে,/ ঈদ আসিয়াছে, জাকাত আদায় করিব তাদের কাছে। এসেছি ডাকাত জাকাত লইতে, পেয়েছি তাঁর হুকুম,/ কেন মোরা ক্ষুধা তৃষ্ণায় মরিব, সহিব এই জুলুম?’ 

ঈদের জামাতের জন্য প্রস্তুত দেশের প্রতিটি গ্রাম-মহল্লার ঈদগাহ ময়দান। ঢাকা মহানগরীতে ১১১টি ঈদগাহে ও ১৫৭৭টি মসজিদসহ মোট ১৭৩৯টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে প্রধান জামাত হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। 

তবে আবহাওয়া প্রতিকূল হলে বা অন্য কোনও কারণে জাতীয় ইদগাহ মাঠে জামাত অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে সকাল ৯টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এবারও মসজিদটিতে পবিত্র ঈদুল ফিতরের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত সকাল ৭টায়, এর এক ঘণ্টা পর পর তিনটি জামাত এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও উৎসবমুখর ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয়। উৎসবটির নিরাপত্তা নিশ্চিতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এদিকে ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ ময়দান দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ। প্রায় ২২ একর আয়তনের এ ময়দানে ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মিনারের সামনে সকাল ৯টায় হবে ঈদ জামাত।

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহে জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়। এতে ইমামতি করবেন মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। এবার এখানে অনুষ্ঠিত হবে ১৯৮তম জামাত।

ঈদ জামাত শেষে মিষ্টি খাওয়া রাসুল (সা.) এর সুন্নত। তাই ঈদে সেমাই অবধারিত। গরিব কি ধনী সবারই চেষ্টা থাকবে সেরা আয়োজনটুকু করার। ঈদের খাবার থেকে বাদ যাবে না কেউ। রোগীদের জন্য হাসপাতালে, এতিমদের জন্য এতিমখানায়, শিশু সদন, ছোটমণি নিবাস, বৃদ্ধাশ্রম, ভবঘুরে আশ্রয়কেন্দ্র; সবখানেই থাকবে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা। জেলখানা ও কিশোর সংশোধন কেন্দ্রগুলোতেও থাকবে উন্নত খাবার।

ঈদে বড় শহর ও রাজধানীর বিনোদনকেন্দ্রও সেজেছে উৎসবের ঢংয়ে। চিড়িয়াখানা, শিশুপার্কের মতো বিনোদনকেন্দ্র খোলা থাকছে ঈদে। ঈদ মানেই একে অপরকে আপন করে নেওয়া। শুভেচ্ছা জানানোর রীতি চিরন্তন।

এদিকে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

আজ রোববার এক শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতরে সকলকে জানাই ঈদ মোবারক। ঈদে পরিবার-পরিজন নিয়ে নির্বিঘ্নে ও আনন্দ সহকারে নিজ নিজ বাড়ি যাবেন। আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত করবেন। গরিব পরিবারের খোঁজখবর নেবেন। তাদের ভবিষ্যৎ ভালো করার জন্য চিন্তা-ভাবনা করবেন। আপনার সন্তানদের সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দেবেন, এই কামনা করছি। 

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়