Apan Desh | আপন দেশ

কোরআনের আলোকে উটের বিস্ময়কর সক্ষমতা

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৮:৫৯, ১৪ এপ্রিল ২০২৫

কোরআনের আলোকে উটের বিস্ময়কর সক্ষমতা

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাপমাত্রার অসাধারণ সহ্যশক্তি উটের। ছবি: সংগৃহীত

উট হলো প্রকৃতির এক আশ্চর্য সৃষ্টি। এটি ৫৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে শুরু করে মাইনাস ১ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রায় টিকে থাকতে পারে। তারা পায়ের নিচে উত্তপ্ত মরুভূমি নিয়েও দিব্যি চলাফেরা করে এবং পানি ছাড়াও বেঁচে থাকে!

উট ঘণ্টার পর ঘণ্টা উত্তপ্ত মরুভূমির বালিতে পা রেখে চলাফেরা করতে পারে, মাসের পর মাস পানি না খেয়ে থাকতে পারে, বড় কাঁটা সহ ক্যাকটাস খেতে পারে। তার পিঠে দেড় কেজি ওজন বহন করে শত শত মাইল হাঁটতে পারে। এ অসাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো প্রাণিবিজ্ঞানীদের বিস্ময়ে ফেলে দেয়।

উটের মতো পরিবেশে অন্য প্রাণীরা মারা যায়। অধিকাংশ স্তন্যপায়ী প্রাণী, যার মধ্যে মানুষও রয়েছে, তাদের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা প্রায় ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যদি এটি ৩৬.৫ ডিগ্রির বেশি বেড়ে যায়, তাহলে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি হতে শুরু করে।
 
যেমন: যকৃত, কিডনি, মস্তিষ্ক এবং হজম প্রক্রিয়া ৪০ ডিগ্রি ছাড়ালেই নষ্ট হতে শুরু করে এবং ৪১ ডিগ্রিতে কোষ ধ্বংস হতে শুরু করে। সাধারণ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের শরীর তখন ঘাম দিয়ে অতিরিক্ত তাপ কমায়। কিন্তু মরুভূমির মতো পানিশূন্য স্থানে পানি হারানো মানেই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া। এ কারণে উটের শরীরে রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থাপনা।
 
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাপমাত্রার অসাধারণ সহ্যশক্তি। সকালে উটের শরীরের তাপমাত্রা থাকে ৩৪ ডিগ্রি, কিন্তু দিনে তীব্র গরমে সেটি বেড়ে গিয়ে হয় ৪১ ডিগ্রি পর্যন্ত। তখনও তারা ঘাম ঝরায়, কিন্তু শরীরের পানি ধরে রাখে। প্রতিদিন এ তীব্র তাপমাত্রার মুখোমুখি হয়েও তারা বেঁচে থাকে। কারণ তাদের শরীরের অভ্যন্তরে রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থায় সুরক্ষা।
 
উটের রক্তে পানির আধিক্য। উটের রক্তে পানি ধারণের অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে। তারা একবার পানি খেতে বসলে ১০ মিনিটে প্রায় ১৩০ লিটার পানি খেতে পারে। যা প্রায় তিনটি জ্বালানিভর্তি ট্যাঙ্কের সমান। এ পরিমাণ পানি যদি অন্য কোনো প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করে, তাহলে রক্তকণিকা স্ফীত হয়ে ফেটে যাবে। কিন্তু উটের রক্তকণিকাগুলোর গঠন এতটাই শক্তিশালী যে তারা এ পানিচাপ সহ্য করতে পারে।
 
উটের কুঁজ শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। উটের কুঁজ হলো চর্বি জমার স্থান, যা শক্তি ও পুষ্টি জোগায়। পানি শরীরের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম সচল রাখতে সাহায্য করে। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। যথেষ্ট পানি ও খাদ্য সঞ্চয়ের পর তারা ছয় মাস পর্যন্ত কিছু না খেয়েও বেঁচে থাকতে পারে।
 
উটের ওজন ১৮০ থেকে ২৬০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে এবং তারা হাঁটে এক শান্ত ভঙ্গিতে, যেন মুখে হাসি। এমন একটি বিশাল প্রাণী খুব সহজেই হিংস্র হতে পারত, কিন্তু উট মানবজাতির প্রতি বিশ্বস্ত, শান্ত ও অনুগত। তারা অনেক নিয়ম ভেঙে মানুষের জন্য সহনীয় হয়েছে—যা বিবর্তনবাদীদের জন্য এক রহস্য।

উট এমন উদ্ভিদও চিবিয়ে খেতে পারে যা অন্য কোনো প্রাণী খেতে পারে না। তারা কাঁটায় ভরা ক্যাকটাসও চিবিয়ে খায়। অন্য প্রাণী হলে মুখ, দাঁত, জিহ্বা ও গালে কাটা পড়ে যেত। কিন্তু উটের মুখে রয়েছে বিশেষ গঠন—অনেক ছোট ছোট শক্ত আঙুলের মতো গঠন যা তাদের মুখকে রক্ষা করে।

উটের চোখে রয়েছে দুটি পর্দা বা পাপড়ি। এ বিশেষ গঠন তাদের চোখ খোলা রাখতে সাহায্য করে মরুভূমির ধুলিঝড়েও। এগুলো রোদ থেকে চোখ রক্ষা করে। চোখ আর্দ্র রাখে। এ পাপড়িগুলো বাঁকানো, যাতে ধুলো আটকে যায় ও চোখের ভেতরে ঢুকতে না পারে।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়