
ফাইল ছবি
বিবাহ শাদি মুসলমানদের একটি ইবাদত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবাহকে নিজের সুন্নত আখ্যায়িত করে এরশাদ করেন- বিবাহ করা আমার সুন্নাত। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত অনুযায়ী আমল করে না, সে আমার দলভুক্ত নয়। (সুনান ইবনে মাজাহ: ১৮৯৬)।
মুফতি জুবায়ের বিন আব্দুল কুদ্দুছ
প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা! অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় বর্তমানে মুসলিম সমাজে বিবাহ শাদিতে গান বাজনা, নারী-পুরুষের অবাধ মিলামেশা, অশ্লীলতা বেহায়াপনাসহ বিভিন্ন অসামাজিক ও অনৈসলামিক কার্যকলাপ যুক্ত হয়ে পড়েছে। যা সুস্পষ্ট গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। যার কারণে এ সুন্নতের পবিত্রতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রাতভর উচ্চ আওয়াজে গান বাজনা করে দুর্বল, অসুস্থ মানুষসহ এলাকার মুসলমানদেরকে কষ্ট দেয়া হচ্ছে। অথচ আল্লাহ তায়ালা বিনা কারণে মানুষকে কষ্ট দেয়া হারাম ঘোষণা করে এরশাদ করেন-
যারা বিনা অপরাধে বিশ্বাসী পুরুষ ও নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা অবশ্যই মিথ্যা অপবাদ ও স্পষ্ট অপরাধের বোঝা বহন করে। (সুরা আহযাব: ৫৮)।
প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা! বিবাহ শাদির মাধ্যমে একটি নতুন দাম্পত্য জীবন শুরু হয়। সে জীবনের সুখ শান্তি ও আনন্দ সবাই কামনা করে। সেখান থেকে আদর্শ ও সুসন্তান লাভের চেষ্টা করে। তাহলে একটু চিন্তা করে দেখুন! আল্লাহর অবাধ্যতা এবং নবীজির সুন্নতের পবিত্রতা নষ্ট করে যে কাজের সূচনা হয়, ওই কাজের মাধ্যমে কি সুখ আসতে পারে? ঐ দম্পতি থেকে ভালো, আদর্শ ও সুসন্তান কিভাবে আশা করা যেতে পারে? কখনোই সম্ভব নয়।
এ কারণেই তো আজকের সন্তানেরা বাবা-মার অবাধ্য। তারা বাবা মাকে কষ্ট দেয়। শেষ বয়সে তাদেরকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে। নামাজ, রোজাসহ ইসলামের কোন কথাই তাদের ভালো লাগে না।
তাই আসুন! আমরা আমাদের প্রিয় নবীর সুন্নতের পবিত্রতা রক্ষা করি। গান বাজনা ও শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ থেকে বিবাহ শাদিকে মুক্ত রাখি। অন্যান্য মুসলমান ভাই-বোনদেরকে উদ্বুদ্ধ করি। তাহলে সুন্দর ও শান্তিময় জীবন লাভ হবে। আদর্শ ও সুসন্তান জন্মগ্রহণ করবে ইনশাআল্লাহ।
অন্যথায় আমাদের উপর আল্লাহর গজব নেমে আসবে। এক হাদিসে রসুলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- কোন সম্প্রদায় যখন বিভিন্ন পাপাচারে লিপ্ত হয়, তখন তাদের মধ্যে এমন ব্যক্তি থাকে, যারা বাধা দেওয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে বাধা দেয়না (ঐ পাপাচার বন্ধ করেনা), তাহলে (তাদের জীবদ্দশাতেই) মহান আল্লাহ তাদেরকে ব্যাপকভাবে তার কোন শাস্তি ভোগ করাবেন। (আবু দাউদ: ৪৩৩৯)।
প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা! আর যদি বাধা দেয়া কিংবা নিষেধ করা সম্ভব না হয় তাহলে এমন বিবাহের অনুষ্ঠানে যাওয়া থেকে তো নিজেকে বিরত রাখা যায়। ফিলিস্তিনের উপর বর্বর হামলার কারণে যদি ইসরাইলি পণ্য বয়কট করা হয়, তাহলে যে ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে, নবীজির পবিত্র সুন্নাহকে অপবিত্র করে, তার অনুষ্ঠানকে কেন আমরা বয়কট করতে পারি না? এক প্লেট ভাতের জন্য আমরা আমাদের নবীর সুন্নাহকে অপবিত্র করব? বিবাহের মতো একটি ইবাদতের পবিত্রতা বিনষ্ট করব?
প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা! বিবাহ শাদিতে গান-বাজনা করা মুসলমানদের নয়; বরং হিন্দুদের সংস্কৃতি। আমাদের কাছে তো বিবাহ শাদি একটি ইবাদত। বিধর্মীদের সঙ্গে সাদৃশ্য হয় এমন কোন কাজ করার কোন অবকাশ নাই। কঠোর বাণী উচ্চারণ করে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে। (সুনানে আবু দাউদ: ৪০৩১)
প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা! যদি আমরা এভাবে আল্লাহর হুকুমকে লঙ্ঘন করে আমাদের নবীজির পবিত্র সুন্নতের পবিত্রতা কে নষ্ট করতে থাকি তাহলে আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্ট হয়ে আমাদের উপর অচিরেই এমন আজাব চাপিয়ে দিবেন যার কারণে বিবাহ অনুষ্ঠানে গান বাদ্য করা তো দূরের কথা বিবাহ করার সময়ই পাবো না। বর্তমানে ফিলিস্তিনের মুসলমানদের দিকে লক্ষ্য করে দেখুন! তাদের কী পরিস্থিতি চলছে?
কেন আজ বিশ্বে মুসলমানদের উপর জুলুম নির্যাতন চলছে? কেন আজ মুসলমানরা শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারছে না? তার কারণ একটাই, তা হচ্ছে আমরা আল্লাহ ও তার রসূলের নির্দেশনার বাইরে প্রবৃত্তির চাহিদা অনুযায়ী জীবন যাপন করছি। বিধর্মীদের সংস্কৃতি ও আদর্শের অনুসরণ অনুকরণ করছি। তাই আমাদের এ করুন অবস্থা।
তাই আসুন! আমরা ফিরে আসি আমাদের ধর্মের দিকে। ফিরে আসি আমাদের স্বকীয়তা, সংস্কৃতি ও আদর্শের দিকে। হক্কানী আলেমদের সঙ্গে পরামর্শ করে নিজেদের জীবনের সমস্ত কাজকর্ম বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করি। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বুঝার তৌফিক দান করেন। আমাদেরকে হেদায়েত দান করেন। তিনিই একমাত্র হেদায়েত দাতা।
লেখক: শিক্ষক, লালবাগ মাদ্রাসা ঢাকা, খতিব, আজিমপুর ছাপরা জামে মসজিদ ঢাকা, পরিচালক, দাওয়াতুস সুন্নাহ বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।