ডিজিটাল টেলিফোন এক্সচেঞ্জ কাউনিয়া, রংপুর
সেবার মান দূরের কথা সেবাই নেই। টেলিফোন সচল ছিল তখন ব্যবহার করে বিল দিয়েছেন। লাইন অচল হয়ে পড়লেও বিল গুনতে হয়েছে। তাই টেলিফোন ছেড়ে দিয়েছেন। এমনটি জানিয়েছেন কাউনিয়ার ব্যবসায়ী ইসমাইল আহমদ। তিনি ডিজিটাল টেলিফোনের সংযোগ নিয়েছিলেন।
রংপুরের কাউনিয়ায় টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) চলছে মাত্র একজন লাইনম্যান দিয়ে। পৌনে তিনশ লাইন ছিলো, এখন দাঁড়িয়েছে ৩০টিতে। তাও মাছেমধ্যে অচল হয়ে যায় এই সংখ্যার টেভিফোন সংযোগও। দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থায় বিটিসিএলেল এই কার্যালয়। বিভিন্ন সমস্যা ও জনবল সংকটে সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে ঘুরে যাচ্ছেন গ্রাহকেরা।
একাই কাজ করার কথা স্বীকার করে লাইনম্যান শিবলি মিয়া জানান, আগের মতো তেমন কাজ না থাকায় তার কোনো অসুবিধা হয় না।
বিটিসিএল কার্যালয় জানায়, ব্রিটিশ ভারতে ১৮৫৩ সালে ডাক ও তার বিভাগের আওতায় ‘টেলিগ্রাফ শাখা চালু হয়। পাকিস্তান আমলে ১৯৬২ সালে ‘পাকিস্তান টেলিগ্রাফ অ্যান্ড টেলিফোন বিভাগ নামে আলাদা সরকারি বিভাগ হিসেবে পুনর্গঠিত হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘বাংলাদেশ টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন বিভাগ হয়। খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, ১৯৭৫ সালে অধ্যাদেশ বলে এটি ‘টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন বোর্ড নামে একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ১৯৭৯ সালে আরেক অধ্যাদেশে এটি ‘বাংলাদেশ টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন বোর্ডথ (বিটিটিবি) নামে সরকারি বোর্ডে রূপান্তারিত হয়। ২০০৮ সালের ১ জুলাই বিটিটিবিকে বিটিসিএলে রূপান্তর করা হয়।
কাউনিয়া এক্সচেঞ্জটি স্থাপিত হয় ১৯৮৪ সালে। বিটিসিএলকে ডিজিটালে রূপান্তরিত করা হয় ২০০৬ সালে। কাউনিয়ায় ৫০০টি টেলিফোন সংযোগের সক্ষমতা সম্পন্ন এক্সচেঞ্জটি প্রথমে ২৭৫টি লাইন সংযোগ দেয়া হয়। টেলিফোনে গ্রাহকের অনিহা আর বিল বকেয়ার কারণে এখন সংযোগ নেমেছে ৬২-তে। জনবল সংকট ও ক্যাবলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বর্তমানে সরকারি ২২টি ও বেসরকারি ৪টি টেলিফোন এবং ৪টি ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। ৩৬টি বিচ্ছিন্ন ও অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে অনেক দিন ধরে। জায়গায় জায়গায় খুঁটি পড়ে আছে দীর্ঘদিন থেকে। সংযোগ নেই কিন্তু নিয়মিত বিল আসে বাকিগুলোর।
একাধিক গ্রাহক জানান, দীর্ঘদিন থেকে তাদের টেলিফোন লাইন অচল। বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটর বন্ধ থাকায় ফোন চলে না। টেলিফোন ব্যবহার না হলেও ন্যূনতম বিল ঠিকই গুনতে হচ্ছে গ্রাহকদের। সেবা না পাওয়ায় সরকারী অফিস গুলোতেও এখন আর টেলিফোন ব্যবহার হয় না। কাউনিয়া টেলিফোন একচেঞ্জ অফিসে দেখা গেছে কোনো জনবল নেই। একজন লাইনম্যান দিয়ে চলছে অফিস। অনেকেই সেবা বঞ্চিত হয়ে টিঅ্যান্ডটি ফোন হস্তান্তর করে দিয়েছে।
গ্রাহক নজরুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান, মাত্র একজন লাইনম্যান দিয়েই চলছে এ প্রতিষ্ঠানটি। আগের মতো সেবা নেই তাই টেলিফোন বাতিল করে দিয়েছি। আরেক গ্রাহক জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, মোবাইল ফোন থাকায় এখন নআর টেলিফোনের কদর নেই। একটা ছিল চালালেও বিল আসে, অচল থাকলেও বিল গুনতে হয় তাই বিচ্ছিন্ন করেদিয়েছি।
রংপুর বিভাগীয় বিবিটিসিএলের কর্মকর্তারা বলছেন, আগে একটি এক্সচেঞ্জে একজন অফিস সহায়ক ও একজন লাইনম্যান ছিল। এখন একজন করে জুনিয়র লাইনম্যান কাজ করে। আবার কোনো কোনো জায়গায় একজনও নেই। ৫জি বাস্তবায়নের কাজ হয়ে গেলে জনবল সংকট ও দ্রুত গতির ইন্টারনেট সেবা (অফটিক্যাল ফাইবার) স্বাভাবিক হবে। বিকল টেলিফোন সংযোগ সচল ও বিচ্ছিন্ন সংযোগ মেরামতের কাজ খুব শিগগিরই শুরু হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।