ছবি: সংগৃহীত
পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪০০ কিলোমিটার। চাঁদে মহাকাশযান পাঠানো, হেঁটে বেড়ানো এখন স্বাভাবিক। প্রায় প্রতিদিনিই চাঁদে মানুষের কৃতিত্বের মাইলফলক ছোঁয়ার কথা সংবাদমাধ্যমে আসছে। দীর্ঘদিন ধরেই চাঁদ নিয়ে গবেষণা চলছে। প্রথম চাঁদে মহাকাশচারী পাঠায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আগামী দিনে আবার নাসার হাত ধরেই চাঁদে পা রাখার পরিকল্পনা করছে মানুষ।
সম্প্রতি চাঁদ থেকে মাটি, পাথরের নমুনা পৃথিবীতে আনতে গিয়েছে চীনের চ্যাং-৬। তবে নাসা সম্পূর্ণ নতুন এক পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছে, যা বিজ্ঞানী মহলে রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে। চাঁদে রেলস্টেশন তৈরি করতে আগ্রহী তারা। শুরু হয়েছে ভাবনাচিন্তা।
কিন্তু যে মাটি এখনও সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে, সেখানে রেলস্টেশন গড়ে উঠবে কীভাবে? রেল লাইনই-বা বসবে কীভাবে? আর তার প্রয়োজনীয়তাই বা কী?
নাসা জানিয়েছে, চাঁদে রেলস্টেশন বানিয়ে, রেললাইন বসিয়ে সেখানে ‘ট্রেন’ চালাবেন তারা। তবে সেই রেল-পরিকল্পনা পৃথিবীর চেয়ে ভিন্ন। চাঁদের ট্রেনেও ‘যাত্রী’ থাকবে, তবে তারা মানুষ নয়।
চাঁদে গবেষণার প্রয়োজনেই রেললাইন বসানোর কথা ভেবেছে মার্কিন এ মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। তারা জানিয়েছে, চাঁদের ট্রেনে বহন করা হবে বিভিন্ন পেলোড। চন্দ্র অভিযানগুলোতে পৃথিবী থেকে বিবিধ পেলোড পাঠানো হয় চাঁদে। সেগুলোর মাধ্যমেই সেখানে গবেষণার কাজ চলে। সেই পেলোড এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পরিবহণের কাজ করবে চাঁদের ‘রেলগাড়ি’।
কীভাবে চাঁদে ‘ট্রেন’ গড়ানো সম্ভব হবে? নাসা জানিয়েছে, তাদের এ পরিকল্পনার নাম ‘ফ্লোট’ (ফ্লেক্সিব্ল লেভিটেশন অন এ ট্র্যাক)। এতে ম্যাগনেটিক লেভিটেশন পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে।
নাসার পরিকল্পনা অনুযায়ী, নমনীয় ত্রি-স্তরীয় ফিল্ম ট্র্যাক পেতে দেয়া হবে চাঁদের মাটিতে। তাতে ম্যাগনেটিক লেভিটেশন পদ্ধতি ব্যবহার করে পেলোড পরিবহণের বন্দোবস্ত করা হবে।
ম্যাগনেটিক লেভিটেশন পদ্ধতিতে কিছু শক্তিবিহীন চৌম্বকীয় রোবট থাকবে। চাঁদের গ্রাফাইট স্তরের উপর দিয়ে যা আলতো করে ভেসে বেড়াবে বলে জানিয়েছে নাসা।
নাসা আরও জানিয়েছে, ‘ফ্লোট’-এ ব্যবহৃত রোবটগুলোর মধ্যে আলাদা করে কোনও চলমান অংশ থাকবে না। সেগুলো শুধু ফিল্ম ট্র্যাকের উপরে ভাসবে। চাঁদের মাটির ধুলোবালি সরিয়ে দেবে এ রোবট।
পৃথিবী থেকে কেউ চাঁদে গিয়ে সেখানে রেললাইন বানাবেন না। গোটা ব্যবস্থা তৈরি করেই চাঁদে পাঠানো হবে। মহাকাশযান থেকে সরাসরি চাঁদের মাটিতে ‘ল্যান্ড’ করবে রেললাইন।
নাসা জানিয়েছে, চাঁদের ধুলোভরা, রুক্ষ মাটিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করবে ‘ফ্লোট’। এটি এখনও পরিকল্পনার পর্যায়েই রয়েছে। তবে শীঘ্রই তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করবেন বিজ্ঞানীরা।
প্রথমে ডিজাইন তৈরি করে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো হবে। তারপর পরীক্ষামূলকভাবে অ্যানালগ টেস্টবেডে গোটা প্রক্রিয়ার প্রদর্শন করে দেখা হবে।
চাঁদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, আবহাওয়ার কতটা প্রভাব এ ব্যবস্থাপনার উপর পড়তে পারে, সেক্ষেত্রে কতদিন চাঁদে তা সক্রিয় থাকতে পারে, সেই সম্পর্কেও গবেষণা চলছে।
আপন দেশ/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।