Apan Desh | আপন দেশ

ইন্টারনেট ব্যবহারে পিছিয়ে দেশের নারীরা

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৯:১০, ১৮ মে ২০২৪

ইন্টারনেট ব্যবহারে পিছিয়ে দেশের নারীরা

ছবি: সংগৃহীত

মোবাইল ব্যবহারে বাংলাদেশের পুরুষদের চেয়ে পিছিয়ে আছেন নারীরা। এমনকি মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারেও পিছিয়ে তারা। মোবাইল থাকলেও দেশের নারীদের ইন্টারনেট ব্যবহারের হার পুরুষদের তুলনায় কম। গত ১৫ মে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের বৈশ্বিক সংগঠন গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশনস অ্যাসোসিয়েশন (জিএসএমএ)।

প্রতিবেদনে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ১২টি দেশের তথ্য প্রকাশ করেছে জিএসএমএ। দেশগুলো হলো মিশর, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, সেনেগাল, নাইজেরিয়া, উগান্ডা, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, গুয়াতেমালা ও মেক্সিকো।

জিএসএমএ গত বছর এসব দেশে জরিপ চালায়। জরিপে ভারত বাদে বাকি ১১টি দেশে ১৫ বছর ও এর বেশি বয়সের এক হাজার নারী-পুরুষের তথ্য নেয়া হয়েছে। ভারতে দুই হাজার জনের ওপর জরিপ চালানো হয়।

জিএসএমএ বলেছে, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট সেবা গ্রহণে নারী–পুরুষের ব্যবধান বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি, ৪০ শতাংশ। ভারতে এ ব্যবধান ৩০ শতাংশ, পাকিস্তানে ৩৮ শতাংশ ও ইন্দোনেশিয়ায় ৮ শতাংশ। যদিও বাংলাদেশে মোবাইলের মালিকানা ও ইন্টারনেট ব্যবহারে নারী–পুরুষের ব্যবধান সামান্য কমেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ৫০ শতাংশ নারী ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্পর্কে জানেন। এরপরও তারা তা ব্যবহার করেন না। মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার না করার কারণ হিসেবে সাক্ষরতা ও ডিজিটাল দক্ষতার অভাবের কথা উঠে এসেছে, যা পুরুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এছাড়া সামর্থ্য না থাকাও বড় একটি কারণ।

পতিবেদনে জিএসএমএ বলছে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় মোবাইলের মালিকানায় নারীরা পিছিয়ে আছেন। বিশেষ করে অস্বচ্ছল, পড়াশোনা না জানা, গ্রামাঞ্চলে বসবাস করা বা বিশেষভাবে সক্ষম নারীরা বেশি পিছিয়ে।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে ৮৫ শতাংশ পুরুষ ও ৬৮ শতাংশ নারী মোবাইলের মালিক। অর্থাৎ মালিকানায় নারী–পুরুষের ব্যবধান ২০ শতাংশের কাছাকাছি। যদিও সর্বশেষ জরিপের আগের বছর (২০২২) এ ব্যবধান ২১ শতাংশ ছিল। এছাড়া দেশে যত পুরুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন, নারীর মধ্যে সেই সংখ্যা তার অর্ধেক।

দেশে নারীদের অনেকে অন্যের মোবাইল থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। আবার স্মার্টফোন আছে এমন নারীদের অনেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না। জিএসএমএ বলছে, দেশের ৪০ শতাংশ পুরুষ ও ২৪ শতাংশ নারী মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। এ হার ভারতে ৫৩ শতাংশ ও ৩৭ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ৬৯ শতাংশ ও ৬৩ শতাংশ, পাকিস্তানে ৫৩ শতাংশ ও ৩৩ শতাংশ।

আরও পড়ুন>> ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে শিশুদের সুরক্ষায় মেটা ব্যর্থ: ইইউ

মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারের বিষয়ে জানেন দেশের ৩৭ শতাংশ পুরুষ। নারীর মধ্যে এ হার ২১ শতাংশ। তারা মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য। অন্যদিকে, পুরুষের তুলনায় দেশের নারীরা ইন্টারনেট ব্যবহারে আগ্রহী বেশি। জিএসএমএ বলছে, দেশে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নারীর ৫৩ শতাংশ ও পুরুষের ৪৬ শতাংশ আরও বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে চান।

তবে বৈশ্বিকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারে নারীদের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। এ–সংক্রান্ত নারী–পুরুষের ব্যবধান গত বছর ১৯ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে নেমেছে।

জিএসএমএ বলছে, মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যেমন মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ে মানুষের মধ্যে কম সচেতনতা, মোবাইলে সহজলভ্য না হওয়া, শিক্ষার হার ও ডিজিটাল দক্ষতা কম থাকা ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ।

এছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারে বড় বাধা হিসেবে সামর্থ্যের বিষয়টিও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, মোবাইলে দাম বেশি। ইন্টারনেটের বাড়তি দামও বাধা হিসেবে ভূমিকা রাখছে। বিশেষত বাংলাদেশ, কেনিয়া, নাইজেরিয়া ও উগান্ডায় মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য ডেটা প্যাকেজের বাড়তি দাম বড় একটি সমস্যা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ২৪ শতাংশ নারী, আর ১৫ শতাংশ পুরুষ প্রতিবন্ধকতা হিসেবে ডাটা প্যাকেজের বাড়তি দামের বিষয়টি চিহ্নিত করেছেন।

প্রতিবন্ধকতা থাকার পরও কেনিয়া, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ইথিওপিয়ার নারীরা আরও বেশি বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারের আগ্রহ দেখিয়েছেন বলে জানিয়েছে জিএসএমএ।

বাংলাদেশে নারী ও পুরুষ উভয়ই অনলাইন কল, ভিডিও কল এবং অনলাইনে বিনোদনের জন্য মোবাইলে ইন্টারনেট বেশি ব্যবহার করেন।

পুরুষের ৫৫ শতাংশ ও নারীর ৪৫ শতাংশ অনলাইনে খবর পড়েন। পুরুষের ২৩ ও নারীর ১২ শতাংশ চাকরি ও ব্যবসা–সংক্রান্ত তথ্য অনলাইনে খুঁজে থাকেন। তবে কৃষিসংক্রান্ত তথ্য খোঁজায় ইন্টারনেট সবচেয়ে কম ব্যবহার করা হয়।

জিএসএমএ বলছে, ইন্টারনেট ব্যবহার করে নেতিবাচক ঘটনার শিকার হওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি অভিযোগ করেন। অনলাইনে নিরাপদ থাকার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে দক্ষ, এমন পুরুষ দেশে ৭৪ শতাংশ ও নারী ৬৫ শতাংশ।

আপন দেশ/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়