Apan Desh | আপন দেশ

ন্যায় প্রতিষ্ঠার দুদকে চলছে অন্যায়

আফজাল বারী

প্রকাশিত: ২৩:০০, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩

আপডেট: ২৩:১৮, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩

ন্যায় প্রতিষ্ঠার দুদকে চলছে অন্যায়

ছবি : আপন দেশ

স্বাধীন সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশন। যার উদ্দেশ্যই দুর্নীতি দমন, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ। উত্তম চর্চার বিকাশও এই কমিশনের লক্ষ্য। আর উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য দুর্নীতিমুক্ত, ন্যায় বিচারক এবং দক্ষদের নিয়োগ দেয়া হয় এই সংস্থায়। আছে পদোন্নতি-বদলিও। তা হবার কথা অভিজ্ঞতা আর কর্মগুণে।

দুদকের বয়স এখন ২০। এই সময়ের মধ্যে ঈগলচোখি কর্মকর্তাদের রিপোর্টে সাজা পেয়েছে অনেক দুর্নীতিবাজ। বাইরের চিত্র এমনটি হলেও সংস্থাটির ভেতরে অনেক ঘটনা। খোদ কর্মকর্তাদেরই চোখের পানি ঝরছে। তা ন্যায় বিচার না পাওয়া নিয়ে। চাকরি রক্ষার জন্য মুখফুটে বলতে না পারলেও বুকে ধারণ করছে অনেকেই। আপোষহীন চরিত্রে যোগদান করে ঘরে ফিরেছেন কষ্ট নিয়ে। আবার বঞ্চিত হয়ে গুনছেন হতাশার দিন। জুনিয়রের অধীনে নিজেকে সপে দিতে হচ্ছে সিনিয়রকে। যা অনেকটা সাজা খাটার মতোই। এমন ঘটনা ঘটেছে ২০২৩ সালের শেষ মুহূর্তে। নতুন বছর দুদকের কারো জন্য আশীর্বাদ আর কারো জন্য বয়ে আনছে অভিশাপ। 

দুদকের উপ-পরিচালক থেকে ৭ কর্মকর্তাকে পরিচালক পদে পদোন্নতি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ২৭ ডিসেম্বর দুদক সচিব মো. মাহবুব  হোসেন পদোন্নতির বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেন। পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হলেন- মোহাম্মদ ইব্রাহিম, মো. তালেবুর রহমান, মো. জাহাঙ্গীর  হোসেন,  মোহাম্মদ আবুল  হোসেন, এস এম এম আখতার হামিদ ভূঞা, মো. মোজাহার আলী সরদার ও জালাল উদ্দিন আহমদ।

দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর কমিশনের পদোন্নতির এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন কর্মকর্তারা। এর ফলে পদোন্নতিপ্রাপ্তদের মধ্যে বিরাজ করছে উচ্ছ্বাস। কিন্তু বিপরীত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে পদোন্নতি বঞ্চিত সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে। ক্ষোভ আর হতাশায় নিমজ্জিত তারা। বিশেষ করে সিনিয়র হওয়া সত্ত্বেও কোনো ধরণের কারণ ছাড়াই যাদের দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে।

কমিশন আসে কমিশন যায়। কিন্তু তাদের স্বাভাবিক পদোন্নতি মিলছে না। যে কমিশনই পদোন্নতি দিচ্ছে সেই কমিশনই প্রতিবার জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করছে। অথচ কমিশনের শীর্ষ পদে আসীন কর্মকর্তাগণ কথায় কথায় সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বুলি আওড়ান। দেশের দুর্নীতি দমনে কোনো ভূমিকা রাখতে না পারলেও কথিত ‘অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি’ দমনে থাকেন সদা খড়গহস্ত। পান থেকে চুন খসলেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শোকজ, বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, তিরষ্কার, এসিআর এ লাল দাগ, বেতন কর্তন, পদোন্নতি স্থগিত রাখা এমনকি চাকরি বিধির ৫৪ (২) ধারা অনুযায়ী চাকরিচ্যুতির মতো ব্যবস্থা নিতেও দ্বিধা করে না। এ বাস্তবতায় বর্তমান কমিশনও জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রেখেছে। পদোন্নতি প্রদানে কোনো প্রকার মানদণ্ডই তারা অনুসরণ করেনি।

জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন ঐতিহ্য

পর্যালোচনায় দেখা যায়, কমিশন গঠনের পর থেকেই জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন চলে আসছেন। প্রতি কমিশনই নিজেদের মতো একটি গ্রেডেশন তালিকা প্রণয়ন করেন। যদিও সেই গ্রেডেশন নিজেরাই পালন করেনি। বর্তমান কমিশনও দায়িত্ব নিয়ে একটি গ্রেডেশন করেন। এবং যথারীতি নিজেরাও লঙ্ঘন করেছেন। 

সর্বশেষ ২০২৩ সালের ২৬ মে দুদক মহাপরিচালক (প্রশাসন) জিয়াউদ্দীন আহমেদের স্বাক্ষরে গ্রেডেশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেন। তাতে ১০৯ জন উপ-পরিচালকের গ্রেডেশন করা হয়। ওই গ্রেডেশন অনুসারে সবচেয়ে সিনিয়র উপ-পরিচালক মো. গোলাম ফারুক। সর্বকনিষ্ঠ উপ-পরিচালক হচ্ছেন মো. সিরাজুল হক। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নিয়ে পরিচালক পদে দু‘বার পদোন্নতি দিয়েছে। এর মধ্যে একটি পদোন্নতি দেয়া হয় ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। তখন ৬ উপ-পরিচালককে পরিচালক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। 

তারা হলেন- এস এম সাহিদুর রহমান, মো. লুৎফর রহমান, মির্জা জাহিদুল আলম, মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী, ঋত্বিক সাহা ও মো. মোশারফ হোসেইন মৃধা। বলাবাহুল্য, ওই পদোন্নতিটিও দেয়া হয় বর্তমান কমিশন প্রণীত সিনিয়রিটি লঙ্ঘন করে।

সর্বশেষ গ্রেডেশন অনুযায়ী এসএম সাহিদুর রহমানের অবস্থান ছিল অষ্টম। মো. লুৎফর রহমানের অবস্থান নবম। মির্জা জাহিদুল আলম ১০ম, মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারি ১১তম। ১২তম ঋত্বিক সাহা এবং মো. মোশাররফ হোসেইন মৃধা ছিলেন ১৩ নম্বরে। এতে দেখা যায়, ৭ জনকে ডিঙিয়ে তাদের পদোন্নতি দেয়া হয়। 

আরও পড়ুন<<>> কার তদন্ত কে করে? পেট্রোবাংলায় পিতার ক্ষমতায় জাল সনদে পুত্রদের চাকরি

উপ-পরিচালক পদে দ্বিতীয় পদোন্নতিটি হলো গত ২৭ ডিসেম্বর। এবারও পদোন্নতি দেয়া হয় ১৬তম, ২০তম, ২২তম, ২৩তম, ২৫তম, ২৬তম এবং ২৮তম কর্মকর্তাকে। গ্রেডেশন তালিকা থেকে এরই মধ্যে পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি নিয়ে অবসরে গেছেন এসএম সাহিদুর রহমান, লুৎফর রহমান, মির্জা জাহিদুল আলম, মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারি এবং মো. মোশাররফ হোসেইন মৃধা।

পরিচালক পদে পদোন্নতি না পাওয়ার বেদনা নিয়েই উপ-পরিচালক হিসেবেই অবসরে যান গ্রেডেশনের ৭ নম্বরে থাকা কেএম মিছবাহ উদ্দিন, ১৪ নম্বরে থাকা মো. জাহিদ হোসেন, ২৯ নম্বরে থাকা শাহীন আরা মমতাজ, ৩০ নম্বরে থাকা এবিএম আব্দুস সবুর, ৩৪ নম্বরে থাকা মো. তৌফিকুল ইসলাম, ৪১ নম্বরে থাকা মো. সামছুল আলম, ৪৮ নম্বরে থাকা নাসিরউদ্দিন আহমেদ। তাদের প্রত্যেকেরই পদোন্নতি প্রাপ্যতা ছিল।

দুদক সূত্র জানায়, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন যেন প্রতিষ্ঠানটির ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিগত ৫টি কমিশনই পদোন্নতি প্রশ্নে কম-বেশি জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করেছে। কিন্তু বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নিয়ে পদোন্নতির অচলায়তন ভাঙেন। একসঙ্গে সহকারি পরিচালক, উপ-পরিচালক, পরিচালক এবং মহাপরিচালকের ৩ পদে পদোন্নতি মোট ১৭ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের মধ্য দিয়ে উদারতার পরিচয় দেয়। এতে বর্তমান কমিশনের প্রতি দুদক কর্মকর্তাদের আস্থা তৈরি হয়। 

আরও পড়ুন<<>>  লুট হচ্ছে ডাক বিভাগের অর্থ, ধরা পড়লেও বিচার হয় না

ধারণা তৈরি হয় যে, বর্তমান কমিশন আর যা-ই হোক অন্তত পদোন্নতির ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা বিবেচনায় নেবেন। কোনো ধরণের কারণ ছাড়াই দীর্ঘদিন যাদের পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে তাদের প্রতি সুবিচার করবেন। কিন্তু গত ২৭ ডিসেম্বরের পদোন্নতিতে তাদের আশার গুড়ে বালি ছিটিয়ে দেয়া হয়েছে। এবারের পদোন্নতিতে না জ্যেষ্ঠতার ক্যাটাগরি অনুসরণ করা হয়েছে, না যোগ্যতার মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়েছে। এর ফলে কোনো ধরণের পাপ ছাড়াই শাস্তি ভোগ করে অবসরে চলে যেতে হচ্ছে দুদকের বেশ ক’জন সিনিয়র উপ-পরিচালককে। 

সূত্রমতে, বিনাদোষে পদন্নোতি বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে দুদকের সর্বজ্যেষ্ঠ উপ-পরিচালক মো. গোলাম ফারুককে। ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি অবসরোত্তর ছুটিতে যাবেন। ২০০৭ সাল থেকে তিনি একই পদে (উপ-পরিচালক) কর্মরত আছেন। দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ জহিরুল হুদা। তাকেও পদোন্নতি বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে ২০০৭ সাল থেকে। একই বছর থেকে বঞ্চিত উপ-পরিচালক মো. নাছিরউদ্দিন। তার মতো উপ-পরিচালক পদে ফেলে রাখা হয়েছে খান মো. মিজানুল ইসলাম, মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদকে। তার শেষ কর্মদিবস শেষ ছিল ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩। 

দিন যায় চিঠি আসে না।

সূত্রটি জানায়, দুদকে বর্তমানে ৩৭টি পরিচালকের পদ রয়েছে। এর মধ্যে ২০২৩ সালের ৩০ পর্যন্ত ৭টি পরিচালকের পদ শূণ্য ছিল। বাহ্যতঃ শূণ্য ৭টি পদেই পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু পদোন্নতির পরপরই আরও ২টি পরিচালকের পদ শূণ্য হয়। পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান খান অবসরে চলে যান গত ৩০ ডিসেম্বর। পরিচালক মো. মাহমুদ হাসানের শেষ কর্মদিবস ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩। বেশ ক’জন পরিচালক পদ দখলে রাখা হয়েছে প্রেষণে আসা প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা দিয়ে। এর মধ্যে বেশ ক’জন আছেন দীর্ঘ দিন ধরে। তাদের মধ্যে কারো কারো পদোন্নতি হলেও তারা দুদকের পরিচালক পদ আকড়ে আছেন। ৩৭ জন পরিচালকের মধ্যে ২২ জন পরিচালক কর্মরত আছেন দুদকের সেগুনবাগিচাস্থ প্রধান কার্যালয়ে। এর মধ্যে বেশ কিছু পদ প্রশাসন, জুডিশিয়াল, ব্যাংক ও পুলিশ ক্যাডারের দখলে। 

অথচ বিধান হচ্ছে, পদোন্নতির মাধ্যমে পরিচালক পদসমুহ পূরণ করার। পদোন্নতিযোগ্য কাউকে না পাওয়া গেলে প্রেষণে কর্মকর্তা আনার নিয়ম। কিন্তু দুদকের ঘটছে উল্টো। পদোন্নতি ‘ডিউ’ হয়ে থাকা কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বঞ্চিত রেখে প্রেষণে কর্মকর্তা এনে প্রশাসনের কব্জায় রাখা হয়েছে অনেক পরিচালকের পদ। এসব পদে বছরের পর বছর পদায়ন করা হয়েছে বহিরাগতদের দিয়ে।

বিধান হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট দফতর না চাইলে ৩ বছরের বেশি সময় এক পদে থাকার বিধান নেই। অথচ এর মধ্যে কোনো কোনো পরিচালক প্রেষণে এসে পদ দখলে রেখেছেন অর্ধযুগেরও বেশি সময় ধরে। এর মধ্যে পরিচালক পদে আব্দুল আওয়াল রয়েছেন ৬ বছর ধরে। পরিচালক মোহাম্মদ ইউছুফ রয়েছেন ৫ বছর ধরে। একই সময় ধরে পরিচালক পদে আছেন উত্তম কুমার মণ্ডল। তৌহিদুজ্জামান পাভেল রয়েছেন ৭ বছর ধরে। পরিচালক মো. মিজানুর রহমান আছেন ৭ বছর ধরে।  মো. রবিউল ইসলাম রয়েছেন প্রায় ৮ বছর ধরে।

আরও পড়ুন<<>> বেস্ট হোল্ডিংসের ভয়ঙ্কর জালিয়াতি!

দীর্ঘদিন ধরে আকড়ে থাকা পরিচালকদের মধ্যে মোহাম্মদ ইউছুফ এবং উত্তম কুমার মণ্ডল যুগ্ম-সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন কয়েক মাস আগে। কিন্তু এখনো তারা উপ-সচিবের পদমর্যাদার পদ আকড়ে ধরে আছেন। একইভাবে দুদকে মহাপরিচালকের পদ রয়েছে ৮টি। এর মধ্যে কমিশন প্রশাসনসহ গুরুত্বপূর্ণ ৫টি পদই প্রশাসন ক্যাডারের করায়ত্তে। ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ১৬(১) ধারায় স্পষ্টতই বলা হয়েছে, কমিশনের একজন সচিব থাকবেন, যিনি কমিশন কর্তৃক নিযুক্ত হবেন। কিন্তু বর্তমান সচিব কমিশন কর্তৃক নিযুক্ত নন। এ পদটিও অতিরিক্ত পদমর্যাদার প্রশাসন কর্মকর্তার আয়ত্তে।  

উল্লেখ্য যে, প্রেষণে আসা কোনো পরিচালককে কমিশন কখনো ঢাকার বাইরে পদায়ন করে না। তাদেরকে পদায়ন করা হয় প্রধান কার্যালয়ে। তাদেরকে দিয়ে কখনো অনুসন্ধান-তদন্তও করানো হয় না। তাদেরকে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় কোনোদিন হাজিরাও দিতে হয় না। 

প্রেষণে আসা কর্মকর্তারা নিজেরাই তদবির বাণিজ্য কিংবা অপরাধে জড়িয়ে পড়লে কমিশন তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপও নেয় না। বড়জোর তাদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয় না। প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসা কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে দিয়ে রাখা হয়েছে একধরণের দায়মুক্তি। 

আপন দশে/এবি/ এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়