ফাইল ছবি: রুহুল কবির আহমেদ রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। পদটি গুরুত্বপূর্ণ। আবার কাঙ্খিতও। পদটিতে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও। এখন আছেন রুহুল কবির রিজভী। একাধারে তিনি দফতরের দায়িত্বেও। রিজভী আহমেদের চলতি কর্ম-কৌশল নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। বিএনপির রাজনীতিতে তাকে ‘নতুন রহস্যপুরুষ’ হিসেবেও আখ্যা দিচ্ছে সমালোচকরা।
৯০’-এর ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে সব ধরনের আন্দোলনে রিজভীর উপস্থিতি। আছে কৌশলি ভূমিকাও। পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে দলীয় কার্যালয়ের ছাদ বেয়ে পলায়নের ঘটনা পুরনো। মাসের পর মাস দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করার নজির কারও নেই। দলীয় নেতারা যখন পুলিশের জালে আটকা, তখন তিনি কর্মীর মোটরসাইকেলে উঠে লাপাত্তা। কিছুদিন আগেও। অন্যরা যখন বিদেশ পাড়ি দিচ্ছিলেন; মোবাইল বন্ধ রেখেছেন। তখন দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে তার ঝটিকা মিছিল। আজ রাজশাহী তো কাল কুমিল্লা। রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনায় তিনি।
তবে এটিকেও দুর্বলতার উদাহরণ হিসেবে দেখিয়েছে শাসকরা। সরকার দলীয়রা বলছেন, কাক ঢাকা ভোরে, আজান দিতে যখন মোয়াজ্জিন ঘুম থেকে উঠেন তখন বিএনপির ঝটিকা মিছিল হয়। গোটা কয়েকজন নিয়ে ঝটিকা মিছিলেই বুঝা যায় দলটির জনপ্রিয়তা। দলের একজন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের ডানে-বায়ে থাকে নারীপুরুষ মিলে ৮/১০ জন। চোরাগোপ্তা মিছিল করে সরকার পতন হয় না। গণমাধ্যমের শিরোনামও হয়েছে। ‘চল্লিশ জনের ঝটিকা মিছিলে ভোট রুখে দেওয়ার হুঁশিয়ারি রিজভী ‘- (৭ ডিসেম্বর, বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম)।
গত ১১ জানুয়ারি তালা ভেঙ্গে দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করেন রিজভী আহমেদ। সেই থেকে দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করছেন তিনি। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো মামলায় হাজিরা দেননি। তালা ভাঙায় অনেকেই তাকে বাহবা দিয়েছেন। সাহসের তারিফ করেছেন। টক-শোতে আওয়ামী লীগ ত্যাগী সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতা গোলাম মওলা রনি বলেছেন, ‘রিজভীর হাতুড়িটা শুধু হাতুড়ি নয়, বিপ্লবের হাতুড়ি’।
তবে দলীয় নেতাকর্মীদের মন্তব্য, নির্বাচনের পরে তালা ভেঙে কী লাভ? ভাঙতেই যদি পারেন, তো নির্বাচনের আগে কেনো নয়?
শনিবারও (২৭ জানুয়ারি) ঘটে গেলো আরেক রহস্যঘেরা ঘটনা। অন্যান্য নেতারা যখন মামলার জামিন নিয়ে, আতঙ্ক কাটিয়ে নয়াপল্টনে এসেছেন; তখন রিজভী দেখান ভিন্ন চিত্র। তার বিরুদ্ধে ডজন মামলা রয়েছে। আছে গ্রেফতারি পরোয়ানাও। পুলিশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মাথা উঁচু, বুকটান করে নয়াপল্টনে কালো পতাকা মিছিল করেছেন। ডানে-বায়ে-পেছনে ছিল শতাধিক নেতাকর্মী। মিছিল শেষে নিজ দফতরে উঠে যান রিজভী। তার সঙ্গে রয়েছেন অর্ধডজন সহকারী। তবে তাকে মঞ্চে দেখা যায়নি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) লিটন কুমার সাহার শনিবার সকালের কথা। তিনি জানান, বিএনপির মিছিলে ওয়ারেন্টভুক্ত কোনো আসামি আসলে তাকে গ্রেফতারে পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।
এর আগে, ৩১ ডিসেম্বর (রোববার) ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশিদ বলেন, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে খোঁজা হচ্ছে। শিগগির গ্রেফতার করা হবে।
ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, যাদের বিরুদ্ধে মামলা ছিল, অনেক বড় বড় নেতাকে আমরা গ্রেফতার করেছি। রুহুল কবির রিজভীকে খোঁজা হচ্ছে। তাকেও শিগগির আইনের আওতায় আনা হবে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
রিজভীর বিষয়ে তিনি বলেন, একজন অসুস্থ মানুষ একটু পরপর আন্দোলন ঘোষণা করেন। একজন অসুস্থ মানুষ কীভাবে এসব আন্দোলনের ঘোষণা করেন? যদি তিনি সত্যিই অসুস্থ না থাকেন, তাহলে আদালতে গিয়ে হাজিরা দিতে পারেন। গোয়েন্দা পুলিশের লাগাম যার হাতে তার সঙ্গে রিজভী আহমেদের বোঝাপড়াও আছে -এমন কথা ভাসে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
রিজভী আহমেদের এমন কৌশল নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বেশ হিসাব-নিকাশ। কিন্তু কারও হিসাবই মিলছে না। যেকারণে তাদের প্রশ্ন তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। দলীয় নেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কেউ বলেছেন, সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া আছে এ নেতার। নইলে কর্মীর বাড়িতে লুকানো সাবেক যুবনেতা মির্জা আব্বাস ও সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ অনেক নেতাকেই ছাড় দেয়নি পুলিশ। বিএনপি কর্মীদের না পেয়ে স্বজন, স্ত্রী-সন্তানকে ধরে নিয়ে গেছে। থানায় নিয়ে টর্চারের কথাও শোনা যায়।
অন্যদিকে পরোয়ানা নিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়ানো রিজভীর কাছে কী যাদু আছে যে তাকে পুলিশ দেখে না? নিজের নাম-পরিচয় প্রকাশ করে কেউ মন্তব্য দেয়ার মতো সাহস দেখাচ্ছেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা প্রশ্নগুলো রাখেন।
তবে ওইসব প্রশ্নের সহজ ব্যাখ্যা দিচ্ছেন রিজভীপন্থিরা। তারা বলছেন, রিজভী আহমেদ দলের প্রাণ পুরুষ। জীবন-যৌবন সঁপে দিয়েছেন দলের জন্য। দলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে নীতি নির্ধারকরা তাকে ভালো জানেন। সরকারের রক্তচক্ষুকে তিনি ভয় করেন না। তার এমন কোনো ব্যাংক-বীমা, জাহাজ কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য নেই যে সরকারের সঙ্গে তাল দিয়ে চলতে হবে। মামলায় বা টোপে কাবু করতে না পেরে সরকার তাকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত।
এ প্রসঙ্গে রিজভী আহমেদ একাধিকবারই বলেছেন, ‘আমি আল্লাহ ছাড়া কাউকেই পরোয়া করি না। আদর্শে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা পালন করি। কে কি বললো, সরকার কি কৌশল নিলো সেটা তাদের ব্যাপার। জীবন যতদিন আছে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাব।’
আপন দেশ/এবি/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।