ছবি: আপন দেশ
নাটক সরণি হিসেবে পরিচিত রাজধানীর বেইলি রোড। শান্তিনগর মোড় থেকে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের মোড়; রাস্তার দু’পাশেই পাওয়া যায় মনোলোভা হরেক রকমের ইফতারি। দোকানের ভেতরে-বাইরে টেবিলে থরে থরে সাজানো থাকে এসব। থাকে ঐতিহ্য আর আভিজাত্যের ছোঁয়াও। গত বছর পবিত্র রমজানের চিত্র এটি। তবে এবার চিত্র ভিন্ন। মনকাড়া ইফতারের খুশবু’র পরিবর্তে বাতাসে ভাসছে পোড়া গন্ধ। টাটকা স্মৃতিতে গা শিউরে ওঠা দগদগে ক্ষত।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ আগুন লাগে। মৃত্যু হয় নারী-শিশুসহ ৪৬ জনের। এ ঘটনায় এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। নেই আগের মতো হাঁকডাক, যেন বিষণ্ণ বেইলি রোড। ক্রেতার ভিড় নেই, অনেক দোকানে তালা। এখনো সেখানে যারা যাচ্ছেন, ক্ষণিকের জন্য হলেও থমকে দাঁড়ান সেই পোড়া ভবনটির সামনে। কেউ ছবি তুলছেন। কেউবা দাঁড়িয়ে নানা প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন।
পুড়ে যাওয়া ভবনটি এখনো পুলিশি প্রহরায় রয়েছে। আশপাশের অধিকাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ। কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, মূলত অভিযান আতঙ্কে অধিকাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ। কেএফসি, ক্যাফে জেলাটেরিয়া, নবাবী ভোজ, ফখরুদ্দিন বিরিয়ানিও বন্ধ। কয়েকটি ভবনে জরুরি নির্গমনের সিঁড়ি তৈরির জন্য সাময়িক বন্ধ রাখার নোটিসও দেয়া হয়েছে। আগের মতো জৌলুশ নেই। রাত বাড়লেই যেন ‘ভূতের গলি’ হয় বেইলি রোড। আর গ্রিন কটেজ ‘পোড়াবাড়ি’।
আরও পড়ুন>> রাজনীতিতে নতুন ‘রহস্যপুরুষ’ রিজভী আহমেদ
তবে জীবন থেমে নেই। তাই ছোট পরিসরে হলেও ব্যবসায়ীরা চেষ্টা করছেন ঘুরে দাঁড়ানোর। রেস্তোরাঁর সামনে সামিয়ানা টানিয়ে ইফতার বিক্রি করছেন অনেকে। এগুলোতে আগের তুলনায় ভিড় কম। তবে একাধিক ক্রেতা দাম বেশির অভিযোগ করছেন। তাদের ভাষ্য, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার প্রতিটি ইফতার আইটেমের দাম দ্বিগুণ। যার কারণে কিছু কিছু আইটেমের দাম অনেকটা মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। ফলে কিছু ক্রেতা এলেও দাম দেখে ফিরে যাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রেস্টেুরেন্ট মালিক বলেন, আমরা শেষ হয়ে গেছি। নানা অনিয়মে অনেক রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কবে খুলবে তাও বলতে পারছি না। অন্যদিকে, যারা সাহস করে এবার ইফতারের দোকান খুলেছেন তাদেরও বিক্রি ভালো নেই। একটি ঘটনা গোটা এলাকার ব্যবসায় ভয়ানক প্রভাব ফেলেছে।
এদিকে ব্যবসার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমেছে ইফতার আইটেমেরও। আগের বছরগুলোতে ২০০-এর বেশি ইফতার আইটেম পাওয়া যেত। এবার সে সংখ্যা কমে এসেছে ৩০-৪০’এ। ব্যবসায়ীরা জানান, আগুনের ঘটনার পর বেইলি রোড ইফতার বাজার একদমই জমছে না। গত বছরের তুলনায় তাই বাধ্য হয়েই এবার অনেক আইটেম কমিয়ে দিয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন>> ‘ওই দিনের ছবি আর মনে করতে চাই না ভাই’
এ ওয়ান ফুডে ইফতার কিনতে আসা অয়ন হাসান বলেন, গত বছর ইফতার কিনতে আসলে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়াতে হতো। মানুষের ভেতর আতঙ্ক আছেই। এখানে আসার সময় আম্মু বারবার বলেছেন, দেরি না করে যেন তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যাই। আসার সময় পোড়া ভবনের দিকে চোখ যায়। ভয় তো লাগেই।
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) রাতে সরেজমিনে খোলা রেস্তোরাঁগুলোর সামনে খাবার ডেলিভারি ম্যানদের দেখা মেলে। অনেকেই খোশ-গল্পে সময় কাটান। তাদেরই একজন আনোয়ার হোসেন। খাবারের অর্ডার প্রসঙ্গে প্রশ্ন করতেই পাশ থেকে আরেকজন বললেন, ‘এখন রাত ১০টা। ইফতারের সময় থেকে এখন পর্যন্ত দুইটা অর্ডারও পাইনি। সবাই এসে বসে আছি। গত বছর অর্ডারের চাপ সামাল দেয়াই কঠিন ছিল। এখন অলস সময় কাটাচ্ছি।’
সামনে ঈদ। রেস্তোরাঁ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অসংখ্য মানুষের দিকে তাকিয়ে আছে আরও আরও মুখ। তাদের ঈদ জমবে তো -এমন প্রশ্ন থেকেই যায়। বেইলি রোডের রেস্তোরাঁ সংশ্লিষ্ট মানুষদের ঈদ আগের মতো হবে না তা সহজেই অনুমেয়। তাই হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো দ্রুত খুলে দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
আপন দেশ/এসএমএ/এমআর
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।