আপন দেশ। ফাইল ছবি
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাধার পরেও বিধি ভেঙ্গে ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যারকে বাজারে আনছে কমিশনের সিন্ডিকেট। লোকসানি এ কোম্পানিকে লাভজনক দেখিয়ে বাজারে আনা হচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষুদ্ধ চট্টগ্রাম এক্সচেঞ্জসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।
তারা বলছে, এখনো সময় আছে কোম্পানিটিকে আটকানোর। এর ব্যাপারে অধিকতর তদন্তের জন্য কমিশন তার ক্ষমতাবলে সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে দেয়ার এখতিয়ার রাখে। শেষ বেলায় বাতিলের নজিরও আছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কোম্পানিকে বাজারে আসতে হলে দুই শেয়ার বাজারের যেকোন একটির তালিকাভুক্ত হতে হয়। এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে ক্রাফটসম্যান ডিএসই-সিএসইতে নথিপত্র দাখিল করেছিল। কিন্তু তাতে নানা অনিয়ম, অসঙ্গতি ও গোজামিল থাকায় কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্তিতে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়।
প্রত্যাখ্যাত হয়ে ক্ষমতার ভেলায় উঠেছে ক্রাফটসম্যান। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এ কোম্পানিকে তালিকাভুক্তির আয়োজন করা হয়েছে। বাতিল না হলে আগামী ২১ এপ্রিল থেকে শুরু হবে সাবস্ক্রিপশন।
তবে তার আগেই, অনিয়মের ফাঁক গলিয়ে বাজারে আসা কোম্পানিটির লাগাম ধরার দাবি বিনিয়োগকারীদের। একই সঙ্গে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার দাবি উঠেছে।
ডিএসই ও সিএসই’র অবজারভেশন না নিয়েই কোম্পানিটিকে কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফারের (কিউআইও) অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি। অতীতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন অপকর্মের নজির দেখা যায়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রথমবার ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২২) নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব দিয়ে ৭ কোটি টাকা উত্তোলন করতে আবেদন করেছিল ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যার অ্যান্ড এক্সেসরিজ লিমিটেড। সে দফায় কোম্পানিটির নানা অসঙ্গতি নিয়ে কমিশনকে অবজারভেশন দেয় ডিএসই। তালিকাভুক্তিতে আপত্তি জানানো হয়। ফলে কমিশন কোম্পানিটির কিউআইও আবেদন বাতিল করে।
দ্বিতীয় দফায় একই পদ্ধতিতে বাজার থেকে ৫ কোটি টাকা উত্তোলনের জন্য কোম্পানিটি শুধু কমিশনে নথিপত্র জমা দেয়। তবে দুই স্টক এক্সচেঞ্জে নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব জমা দেয়নি। বিধান রয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জের অবজারভেশন ছাড়া কোনো কোম্পানিকে অনুমোদন দিতে পারবে না বিএসইসি। কিন্তু সে বিধানকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়েছে কমিশন। কিউআইও অনুমোদন দেয় ক্রাফসম্যানকে।
আরও পড়ুন>> লোকসানি ক্রাফটসম্যানকে লাভজনক দেখাতে পদে পদে ফাঁকি
ডিএসই’র শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, শেয়ার বাজারের উন্নয়নে বিএসইসি নিজে পলিসি তৈরি করে। আর সেই কমিশনই নীতি ভঙ্গ করছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। রক্ষক কমিশন ভক্ষকের ভূমিকায় নেমেছে।
তিনি আরও জানান, ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যার দ্বিতীয় দফায় নথিপত্র জমা দিলে স্টক এক্সচেঞ্জ ফের অসঙ্গতিগুলো খুঁজে বের করতো। কমিশনে অবজারভেশন দিতো। ফলে কোম্পানিটির কিউআইও আবেদন বাতিল হতো। এ ভয়েই কোম্পানিটি স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর ধারে-কাছে আসেনি। তবে কমিশনের সিন্ডিকেটের সহায়তা নিয়েছে। কিউআইও অনুমোদন নিয়েছে।
সিএসই’র শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, প্রথমবার ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যার তাদের নথিপত্র জমা দিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয়বার দেয়নি। স্টক এক্সচেঞ্জের অবজারভেশন ছাড়া কমিশন কীভাবে কোম্পানিটিকে অনুমোদন দিলো তা আমার বোধগম্য নয়। কমিশন বিধি ভেঙ্গেছে।
আরও পড়ুন>> শেয়ার বাজারে আসন্ন ভয়ঙ্কর ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যার
শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাকিল রিজভী আপন দেশ’কে বলেন, অতীতে ক্রাফটসম্যানের মতো বাজে কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হয়ে বাজারকে নষ্ট করেছে। বাজার ভালো করতে হলে কমিশনকে এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কারণ বাজার নির্ভর করে কোম্পানিগুলোর পারফর্মেন্সের উপর। এখনো সময় আছে কোম্পানিটিকে আটকানোর। কোম্পানিটির ব্যাপারে অধিকতর তদন্তের জন্য কমিশন তার ক্ষমতাবলে সাবস্কিপশন বাতিল করে দেয়ার এখতিয়ার রাখে।
ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাদাত হোসেন সেলিম। এ ব্যাপারে জানতে তাকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করা হয়। তার চাওয়া-মতো খুদেবার্তা পাঠানো হয়। তাতেও জবাব দেননি।
বিএসইসি মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম আপন দেশ’কে বলেন, প্রথমবার ক্রাফটসম্যানের কিউআইও আবেদন যখন বাতিল করা হয় তখন কমিশন স্টক এক্সচেঞ্জের অবজারভেশন নিয়েছিল। কিন্তু এবার যখন কোম্পানিটির কিউআইও অনুমোদন দেয়া হয়, তখন কমিশন স্টক এক্সচেঞ্জের অবজারভেশন নিয়েছে কি-না আমার জানা নেই। নথি দেখে বলতে পারবো।
উল্লেখ্য, বাজার থেকে ৫ কোটি টাকা উত্তোলন করবে কোম্পানিটি। ১০ টাকা মূল্যে ৫০ লাখ শেয়ার ইস্যু করবে।
চলবে..
আপন দেশ/টি/এবি/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।