ছবি: আপন দেশ
পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় চার্জশিট হয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি এখন আসামি। কনস্টেবল নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। পুলিশি তদন্ত হয়েছে। প্রমাণও মিলেছে হেডকোয়ার্টার। তবুও তার চেয়ার নড়েনি। সুব্রত কুমার হালদার বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদায় কর্মরত। তার পদবী পুলিশ সুপার বেসিক ট্রেনিং-২।
মাদারীপুর জেলায় পুলিশ সুপার থাকার সময় কনস্টেবল নিয়োগে জালিয়াতি ও ঘুষ গ্রহণের প্রমাণ পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
গত ৭ মে তিনিসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. হাফিজুল ইসলাম। এর আগে, পুলিশ সদর দফতরের তদন্তেও তার ঘুষ গ্রহণ ও জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া যায়। তাকে মাদারীপুর থেকে পুলিশের রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। সেখান থেকে তাকে সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির মতো গুরুত্বপূর্ণস্থানে পদায়ন করা হয়।
চার্জশিটভুক্ত আসামি চাকরিতে বহাল থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে চার্জশিট প্রদানকারী কর্মকর্তা হাফিজুল ইসলাম বলেন, তাকে বরখাস্ত করার বিষয়ে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগে চিঠি দেয়া হবে।
দুদক সূত্র জানায়, কোন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিলের পর ওই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার জন্য আমরা মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে চিঠি দেয়া হয়। মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ থেকে অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরে চিঠি দেন। তারা সেটা কার্যকর করে। সম্প্রতি দুদক নতুন নিয়ম চালু করেছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, আদালত অপরাধ আমলে নেয়ার পর অর্থাৎ চার্জ গঠনের পর মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে চিঠি দেয়া হয়।
আরও পড়ুন>> পোশাকের ধারে-ভারে দুই সহোদর শত কোটি টাকার মালিক
সংশ্লিষ্ট অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, দুদকের নতুন নিয়মে অপরাধীরা বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৫ জুলাই মাদারীপুরের সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) সুব্রত কুমার হালদারসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল দুদক। মামলার এজাহারে তাদের বিরুদ্ধে কনস্টেবল নিয়োগে ৭৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ আনা হয়। মামলার তদন্ত শেষে সুব্রত কুমার হালদার, কনস্টেবল (সাময়িক বরখাস্ত) মো. নুরুজ্জামান সুমন, কনস্টেবল (সাময়িক বরখাস্ত) জাহিদুল ইসলাম, মাদারীপুর জেলা পুলিশ হাসপাতালের সাবেক মেডিক্যাল অ্যাসিসটেন্ট পিয়াস বালা এবং মাদারীপুরের সাবেক টিএসআই (টাউন সাব-ইন্সপেক্টর) গোলাম রহমানকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয়া হয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে ৬ হাজার ৮০০ জন পুরুষ এবং ২ হাজার ৮৮০ জন নারীসহ মোট ৯ হাজার ৬৮০ জন পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের জন্য ২০১৯ সালের ২৮ মে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা রেঞ্জের অধীনে মাদারীপুর জেলায় সাধারণ পুরুষ ১৬ জন, সাধারণ নারী তিনজন এবং বিশেষ কোটায় ১৫ জন পুরুষ ও ২০ জন নারীসহ মোট ৫৪ জন পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।
আরও পড়ুন>> লুট হচ্ছে ডাক বিভাগের অর্থ, ধরা পড়লেও বিচার হয় না
নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়। ওই নিয়োগ কমিটির সভাপতি মাদারীপুর জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার। অপর দুই সদস্য হলেন- মাদারীপুর জেলার তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. নাজমুল ইসলাম ও গোপালগঞ্জ জেলার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মাসুদ।
মাদারীপুর জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে ২০১৯ সালের ২২ জুন পুলিশ সদর দফতরের এআইজির (রিক্রুটমেন্ট অ্যান্ড ক্যারিয়ার প্লানিং-২) কাছে পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে লোকবল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শারীরিক মাপ ও শারীরিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রার্থীর সংখ্যাসহ কোটাভিত্তিক উত্তীর্ণ প্রার্থীর সংখ্যা ছকের মাধ্যমে পাঠানো হয়।
ছক অনুযায়ী, মাদারীপুর জেলা থেকে পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে লোকবল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রথম পরীক্ষা বা প্রথম ধাপ হিসেবে ২০১৯ সালের ২২ জুন শারীরিক মাপ ও শারীরিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই পরীক্ষায় পুরুষ অংশগ্রহণকারী প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ৮৩৫ জন। এদের মধ্যে ৩০৫ জন উত্তীর্ণ হয়। এছাড়া নারী অংশগ্রহণকারী প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ১৫৮ জন। যাদের মধ্যে ৫৯ জন উত্তীর্ণ হয়।
আরও পড়ুন>> জয়েন্ট স্টকে হারুনের দুর্নীতি, ফাইলবন্দি একযুগ
মাদারীপুর জেলায় পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পরীক্ষায় মোট অংশগ্রহণকারী প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ৯৯৩। যাদের মধ্যে ৩৬৪ জন শারীরিক মাপ ও শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। মাদারীপুর জেলা থেকে পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে লোকবল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দ্বিতীয় পরীক্ষা বা দ্বিতীয় ধাপ হিসেবে একই বছরের ২৩ জুন লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত পরীক্ষার ইংরেজি অংশের প্রশ্ন (প্রশ্নপত্রের ৪ থেকে ৫নং ক্রমিকের প্রশ্ন) প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেন মাদারীপুর জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার।
ওই বছরের ২৬ জুন মাদারীপুর জেলা থেকে পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগ মে-২০১৯-এর চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়। চূড়ান্ত ফলের ভিত্তিতে ৫৪ জন পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। এ নিয়োগ চলাকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অবৈধ ঘুষ লেনদেনের ৭৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছয়টি ধাপে জব্দ করা হয়। বিষয়টি পুলিশ সদর দফতর তদন্ত করে সত্যতা পায়।
পরে ওই তদন্ত প্রতিবেদন অনুসন্ধান করে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দুদকে পাঠায়। দুদকের অনুসন্ধান এবং তদন্তেও বিষয়টির সত্যতা পাওয়ায় তার সুব্রত হালদারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
আপন দেশ/এবি/এসএমএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।