ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ পুলিশকে বিতর্কিত করেছেন একই বিভাগের কিছু উচ্চাবিলাসী অপেশাদার কর্মকর্তা। অন্তর্বতীকালীন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টার নির্দেশে তাদের একটি তালিকা করেছে।
এতে বেরিয়ে এসেছে সাবেক-বর্তমান ৫৪ পুলিশের নাম। এসব পুলিশকর্তা গত সরকারের শাসন আমলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ‘অতিরিক্ত বল প্রয়োগ’ করেছেন। অনেকেই ছাত্র-জনতার ওপর গুলির নির্দেশও দিয়েছেন। চিহ্নিত কর্মকর্তারা নিজেদের ‘বিশেষ আদর্শে’র পরিচয় দিতেন।
পুলিশের নিজস্ব গোয়েন্দা কার্যক্রম ও বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। চিহ্নিতদের মধ্যে সাবেক একাধিক আইজিপিও রয়েছেন। তারা নিয়োগে দুর্নীতি, অনিয়ম, গ্রেফতার বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত বলে জানা গেছে।
অভিযুক্ত পুলিশের এ তালিকা করা হয়েছে কদিন আগে। তালিকায় অর্ধশতাধিক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা রয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তালিকা তৈরির কাজ এখনও শেষ হয়নি। যুক্তহতে পারে আরও নাম।
তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন- ১৯৮৯ সালে নিয়োগ পাওয়া ৮ম ব্যাচের চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর দুই দফায় চুক্তি ভিত্তিক আইজিপি হিসেবে নিয়োগ পান। তার বিরুদ্ধে পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এবং প্রতিপক্ষ দমনের জন্য ব্যবহারের সরাসরি অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। এরপর রয়েছে, ১৯৯১ সালে নিয়োগ পাওয়া বিসিএস পুলিশ প্রশাসনের ১২তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে অতিরিক্ত আইজি কামরুল আহসান, আতিকুল ইসলাম ও পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের নাম।
১৯৯৫ সালে নিয়োগ পাওয়া বিসিএস পুলিশ প্রশাসনের ১৫ তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন এসবির সদ্য ওএসডি হওয়া এসবি প্রধান মো, মনিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত আইজি ওয়াইএম বেলালুর রহমান, শিল্প পুলিশর প্রধান মাহবুবুর রহমান, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশীদ, সিআইডির সদস্য ওএসডি হওয়া প্রধান অতিরিক্ত আইজি মোহাম্মদ আলী মিয়া, অতিরিক্ত আইজি দেব দাস ভট্টাচার্য্য, খন্দকার লুৎফুল কবীর, চট্টগাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, ও ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মীর রেজাউল আলম।
১৯৯৮ সালে নিয়োগ পাওয়া ১৭ ব্যাচের ডিএমপির ওএসডি হওয়া কমিশনার হাবিবুর রহমান, পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি অপারেশন আনোয়ার হোসেন, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার, ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন, রংপুর রেঞ্জের অব্যাহতি পাওয়া ডিআইজি আবুদল বাতেন, চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির ও সিআইডির শেখ নাজমুল আলম।
১৯৯৯ সালে নিয়োগ পাওয়া ২৮ তম ব্যাচের কর্মকর্তা ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন কমিশনার মো. মাহবুবু আলম, রংপুর মেট্রোপলিটনের সাবেক কমিশনার ও চাকরি থেকে অব্যাহতি পাওযা মো, মনিরুজ্জামান, পুলিশ সদর দফতরের জয়দেব কুমার ভদ্র ও ঢাকা মহানগর পুলিশের সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
২০০১ সালে নিয়োগ পাওয়া ২০ ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন, শাহ মিজান শফিউর রহমান, মো. আনিসুর রহমান, মোল্যা নজরুল ইসলাম, এসএম মোস্তাক আহমেদ, জিহাদুল কবীর, মো. ইলিয়াস শরীফ, নূরে আলম মিনা, শাহ আবিদ হোসেন, মো. জামিল হাসান, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নূরুল ইসলাম, রাজশাহী রেঞ্জের বিপ্লব বিজয় তালুকদার, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বহুল আলোচিত মো. হারুন অর রশীদ, এসবির মোহা. মনিরুজ্জামান, শ্যামল কুমার নাথ, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. আলমগীর কবির, মো হামিদুল আলম, ড. শামসুন্নাহার, শেখ রফিকুল ইসলাম, ড. একেএম ইকবাল হোসেন ও মো. মাসরুকুর রহমান খালেদ।
২০০৩ সালে নিয়োগ পাওয়া ২১ তম ব্যাচের ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, মো. মারুফ হোসেন সরদার, বিজয় বসাক ও সুব্রত কুমার হালদার, শ্যামল কুমার মুখার্জী, মো সাজ্জাদুর রহমান, প্রবীর কুমার রায়, আসম মাহতাব উদ্দিন, মোহা আহমারুজ্জামান, সুভাষ চন্দ্র সাহা, মো মোকতার হোসেন ও পংকজ চন্দ্র রায়। ২০০৩ সালে নিয়োগ পাওয়া ২২ তম ব্যাচের ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার খন্দকার নূরুন্নবী, এস এম মেহেদী হাসান, একই ব্যাচের মোহাম্মদ জায়েদুল ইসলাম ও সঞ্জিত কুমার রায়।
২০০৫ সালে নিয়োগ পাওয়া ২৪ বাচের মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান, ডিবি উপকমিশনান মশিউর রহমান (সদস্য সিএমপিতে বদলী), নাবিদ কামাল শৈবাল, মো. শহিদুল্লাহ, সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ, মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন, মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান ও সরকার মোহাম্মদ কায়সার। আসমা সিদ্দীকা মিলি, কাজী আশরাফুল আজিম, হায়াতুল ইসলাম খান, জসিম উদ্দিন মোল্লা, মোহাম্মদ মইনুল হাসান ও মোহাম্মদ আনিসুর রহমান।
২০০৬ সালে নিয়োগ পাওয়া ২৫ ব্যাচের ঢাকার এসপি মো. আসাদুজ্জামান, নারায়ণগঞ্জের এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেল, পাবনার এসপি মো. আব্দুল আহাদ, ডিএমপির মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন, রাজিব আল মাসুদ ও মো. শাহ জাহানসহ কয়েকজনের নাম রয়েছে। সাবেক আইজিপিদের মধ্যে জাবেদ পাটোয়ারী, বেনজির আহমেদ, ডিএমপির সাবেক কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া ও খন্দাকর ফারুক হোসেন ও মো. শফিকুল ইসলাম।
পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলেন, পুলিশের পেশাদারিত্ব ধ্বংসের জন্য বিশেষ একটি এলাকা ও রাজনৈতিক আর্শীবাদপুষ্ঠ কর্মকর্তারাই এজন্যে দায়ী। এরা পুলিশের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলোতে বসে পুলিশকে রাজনৈতিক দমন নিপীড়ণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। পিআরবিসহ প্রচলিত যাবতীয় বিধি লংঘণ করে তারা বিশেষ দলের হয়ে কাজ করেছে। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবী করেছেন অনেকে।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।