Apan Desh | আপন দেশ

ভেঙ্গে গেল বিএনপি-জামায়াত জোট !

আফজাল বারী

প্রকাশিত: ১৯:২৩, ৩০ আগস্ট ২০২৪

আপডেট: ১৯:৩৫, ৩০ আগস্ট ২০২৪

ভেঙ্গে গেল বিএনপি-জামায়াত জোট !

সংগৃহীত ছবি

ফের আলোচনায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। চলমান অন্তর্বতী সরকারের ‘স্থায়ীত্বকাল’ ইস্যুতে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। বিএনপির চাওয়া স্বল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন। আর ড. ইউনূসের চাহিদামতো সময় দিতে চায় জামায়াত। 

দৃশ্যমান এসবের বাইরেও দল দুটির চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে অনেকটা গরমিল দেখা যাচ্ছে, যা যতোই দিন যাচ্ছে ততোই প্রকাশ পাচ্ছে। বিশেষ করে তাদের মধ্যে দীর্ঘ ২৫ বছরের জোট সম্পর্কের আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ ঘটছে। আগামী দিনে যে নিজ নিজ কক্ষপথে হাঁটবে এমন স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে দল দুটির শীর্ষ নেতারা। 

দু’বছর আগেই বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। ২০২২ সালে গত ১৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত মজলিশে শূরার সভার একটি ভিডিও ক্লিপ পরদিন (১৫ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

জামায়াতে ইসলামীর মজলিশে শূরার এক ভার্চুয়াল সভায় ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘২০ দলীয় জোটের আর কার্য্কর নেই। বিএনপি এ জোট কার্য্কর করতে চায় না। বছরের পর বছর ধরে এ ধরনের অকার্য্কর জোট চলতে পারে না। আমরা তাদের (বিএনপি) সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছি। এর সঙ্গে তারা ঐক্যমত পোষন করেছে। তারা আর কোনো জোট করবে না। এখন যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করব।

১৯৯৯ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় পার্টি(এরশাদ), জামায়াতে ইসলাম ও ইসলামী ঐক্যজোটকে নিয়ে খালেদা জিয়া চার দলীয় জোট গঠন করেন। ২০০৭ সালে ১/১১ এর ঘটনাবলীর পরে ২০১২ সালে ১৮ এপ্রিল চার দলীয় জোটের কলেবর বাড়িয়ে ২০ দলীয় জোট করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। 

১/১১-তে বিএনপি চেয়ারপারসনের গ্রেফতারের পর শরিক হিসেবে কোনো বিবৃতি দেয়নি জামায়াত। তবে যুদ্ধাপরাধ মামলা ধরন-প্রক্রিয়া নিয়ে খোদ খালেদা জিয়াই বিরোধীতা করেছেন। 

আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দেশের উল্লেখ সংখ্যক উপজেলায় ভাইস-চেয়ারম্যান পদগুলো বাগিয়ে নিয়েছে-এমন অভিযোগ বিএনপির। সে সময় থেকেই জামায়াতের প্রতি নজর রাখতো বিএনপি। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হামান মাহমুদ টুকু ২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে পরকীয়া করছে জামায়াত। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অনেকের মুখে একটা বুলি হয়ে গেছে বিএনপি-জামায়াত, বিএনপি-জামায়াত। আমি বলছি, এখন সময় এসেছে, আওয়ামী লীগ-জামায়াত, আওয়ামী লীগ-জামায়াত বলার। জামায়াতও উর্দু, আওয়ামী লীগও উর্দু। দুটো একসঙ্গে মিলবে ভালো। কেননা ওনারা জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেন। কিন্তু বেআইনি ঘোষণা করেন না। তাহলে কি আমি বলবো, ওনাদের (জামায়াত-আওয়ামী লীগের) পরকীয়া চলছে?

আরও পড়ুন<> জামায়াত-আওয়ামী লীগ সম্পর্ক নিয়ে যা বললেন বিএনপির টুকু

ক’বছর ধরেই বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে কখনো মৃদু বাক্যে, কখনো বিবৃতিতে পরস্পর বিরোধী মন্তব্য ছোঁড়াছুড়ি চলছিল। অন্তর্বতী সরকারের আমলে বিভিন্নস্থানে দখল, হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এমস ঘটনার জন্য ইঙ্গিতপূর্ণভাবে বিএনপিকে দোষারূপ করছে জামায়াত। সংগঠনটির সিনিয়র নেতারা বিভিন্নস্থানে বলেছেন, এক দলের হাত থেকে মানুষ রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু আরেক দলের লোকজন একই ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। যা কাম্য নয়। 

জামায়াত নেতাদের এহেন মন্তব্যে বিএনপিতে ক্ষোভ বিরাজ করছে। দলের নীতি নির্ধারকদের কাছে-অভিযোগও করেছেন মধ্যসারিরর নেতাকর্মীরা।  

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দীর্ঘ ১৭ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিবর্তন এসেছে। নতুন এ পরিস্থিতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাফ জানিয়েছেন, তাদের যে জোট ছিল, আন্দোলনের জন্য জোট, সেটা অনেক আগেই অকার্যকর হয়ে গেছে। এটা এখন কোনো কাজ করে না। এ মুহূর্তে আমাদের কোনো জোট নেই। আমরা জোটবদ্ধ নই- বলেন মির্জা ফখরুল। 

আরও পড়ুন<> কাকে সন্তুষ্ট করতে টুকুর এই বক্তব্য : জামায়াতের প্রশ্ন

জাতীয় নির্বাচনের টাইম ফ্রেম নিয়ে জামায়াত ইসলামীর অবস্থানের সমালোচনা করেছেন বিএনপির  ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেছেন, কেউ কেউ বলছেন, বন্যায় ভাসছি, আবার এখন নির্বাচনের দরকার কি? যারা যেমন তারা তেমনই কথা বলবেন। কিছু মানুষ আছে, কিছু দল আছে আমাদের সঙ্গে থাকলেও ১৯ টা সিট পায়, আমাদের থেকে বেরিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকলে তারা তিনটা সিট পায়, তারা ভোট তো ভয় পাবেই, এটা অস্বাভাবিক কিছু না। 

নরসিংদীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের প্র্যাক্টিক্যাল (ব্যবহারিক) কোনো দলীয় জোট নেই। 

জামায়াত এখন ‘নিষ্কন্টক’ দল

গত ১ আগষ্ট থেকে ২৮দিন নিষিদ্ধ ছিল সংগঠনটি। আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ চালানোর অভিযোগে গত ১ অগাস্ট জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্র শিবির এবং তাদের সহ অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে ওই নিষেধাজ্ঞায় সংগঠনটির কাজেকর্মে কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। নিষিদ্ধ থাকাকালেও শপথ অনুষ্ঠানে বঙ্গভবনের আমন্ত্রণ, সেনাপ্রধানের বৈঠকে দলটির শীর্ষ নেতার অন্তর্ভুক্তি ছিল যথাযথ। ‘জুলাই বিপ্লব’র পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বতী সরকার গঠন করা হয়। গত ২৮ আগস্ট  প্রত্যাহার হয় ওই নিষেধাজ্ঞা। ২৮ দিনের মাথায় সে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সে হিসেবে জামায়াত এখন ‘নিষ্কন্টক’ দল।

আপন দেশ/এবি 

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়