Apan Desh | আপন দেশ

বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন কার্যালয় ছিল এস আলমের!

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:২৬, ২১ অক্টোবর ২০২৪

আপডেট: ২২:২৭, ২২ অক্টোবর ২০২৪

বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন কার্যালয় ছিল এস আলমের!

ফাইল ছবি

সরকারের ভেতরেও যে সরকার থাকে। শীর্ষ কর্তাকেও গোলাম বানিয়ে রাখা যায়- এমন নজির আছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকে। এ কাজটিই করেছে দেশের আলোচিত-সমালোচিত লুটেরা এস আলম গ্রুপ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ তিন কার্যালয় ছিল গ্রুপটির মালিক সাইফুল আলম মাসুদের দখলে। আর যেসব কর্মকর্তা এস আলমের গোলামির জিঞ্জির পরেছিল তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে অকল্পনীয়।

একেকজনের কাহিনী আঙ্গুলফুলে কলাগাছ বনে যাবার চেয়েও ভয়ঙ্কর। তাদের কারণে সকল বিধিবিধান ভেঙে নির্বিঘ্নে নামে-বেনামে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা ঋণ নিতে পেরেছে গ্রুপটি। ওই ঋণের মধ্যে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকাই পাচার করতে পেরেছে কোন প্রশ্নের মুখে না পড়েই। গ্রুপটির বেপরোয়া লুটপাটের ফলে দেউলিয়ার পথে হাটছে দেশের ৮টি ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আপন দেশ-এর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে সেচিত্র।

ঋণদানের বিধি অনুযায়ী, গ্রাহককে বড় ঋণ দিতে হলে অনুমোদন নিতে হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন বিভাগ (ডস) থেকে। ব্যাংকের পর্ষদ সভায় উপস্থাপিত প্রস্তাবনাগুলোও এ বিভাগে পাঠাতে হয়। পাশাপাশি ঋণের নামে নেয়া অর্থ যাতে পাচার না হয় সেটা তদারকির দায়িত্ব বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বা বিএফআইইউর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারাই এ বিভাগটিতে নিয়োজিত রয়েছেন। এ দুই বিভাগের অনেক শীর্ষ কর্মকর্তাই ছিলেন এস আলমের আস্থাভাজন। যাদের মধ্যে এ বিভাগের সদ্যসাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের বিপুল আর্থিক কেলেঙ্কারি ও অর্থ পাচারের বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করছে। 

ডস ও বিএফআইইউ’র পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের দায়িত্ব পেতো এস আলম গ্রুপের মালিকদের পছন্দের ব্যক্তিরা। নিজেদের পছন্দের বাইরে কেউ এ অফিসের দায়িত্বে আসলেও তাদেরকে নানাবিধ উপায়ে নিজেদের অনুগত করে রাখতো শিল্পগোষ্ঠীটি। কারণ, ব্যাংকগুলোর চট্টগ্রামে অবস্থিত শাখার তদারকির দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের ওপর। আর এস আলম গ্রুপ অধিকাংশ অনিয়মের ঋণই নিয়েছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা থেকে। ঋণের নামে বিপুল অর্থ যাতে নির্বিঘ্নে বের করে নিয়ে পাচার করা যায় সেজন্যই চট্টগ্রাম অফিস সবসময় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতো এস আলম।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিভিন্ন সুবিধার বিনিময়ে কিংবা চাপে পড়ে শুধু এস আলম গ্রুপের পক্ষে গোপনে কাজ করা নয়, এ শিল্পগোষ্ঠীর মালিকদের বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানেও প্রকাশ্য উপস্থিতি ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের। কিন্তু এস আলমসহ বিভিন্ন বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠীর মদদদাতা শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও এখন পর্যন্ত একজন বাদে এদের কাউকে বিচার কিংবা শাস্তির মুখে পড়তে হয়নি। এদের কেউ চাকরি থেকে স্বাভাবিক বিদায় নিয়েছেন। বাকিরা পদোন্নতি পেয়েছেন, কিংবা স্বপদে বহাল রয়েছেন।

এস আলমের ছেলের বিয়েতে দাওয়াতি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা  

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের ছেলে আহসানুল আলমের বিয়ের অনুষ্ঠান হয় ২০২৩ সালের জুনে। চট্টগ্রমের সে রাজকীয় বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা। এদের মধ্যে কয়েকজনের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ ডেইলি আপন দেশ ডটকমের হাতে এসেছে। 

ছবি ও ভিডিও বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিয়ের অনুষ্ঠানে একটি আসনে বসে আছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জহুরুল হুদা, প্রধান কার্যালয়ের অফসাইট সুপারভিশন বিভাগের তৎকালীন পরিচালক আরিফ হোসেন খান, বিএফআইইউর তৎকালীন অতিরিক্ত পরিচালক মুহাম্মদ মহসীন হোসাইনী ও কামাল হোসেন। এদের মধ্যে জহুরুল হুদা ২০২৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে অবসরোত্তর ছুটি ভোগ করছেন। আরিফ হোসেন খান নির্বাহী পরিচালক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। তিনি গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রাম অফিসের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মহসিন হুসাইনী পদোন্নতি পেয়ে বর্তমানে ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি এন্ড কাস্টমার সার্ভিসেস বিভাগের পরিচালকের পদে রয়েছেন। আর কামাল হোসেন ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন এন্ড ফিন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি-২ প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। কামাল হোসেন ও মহসিন হুসাইনী সেপ্টেম্বরে পদোন্নতি পেয়েছেন। 

সাইফুল আলম মাসুদের ছেলের বিয়েতে তার জামাতা ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান বেলাল আহমেদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের নির্বাহী পরিচালক জহুরুল হুদা (ডান থেকে তৃতীয়) ও নির্বাহী পরিচালকের পিএস আব্দুল আহাদ (ডান থেকে প্রথম)। ছবি: সংগৃহীত

আহসানুল আলমের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগদানের বিষয়ে মহসিন হুসাইনী বলেন, একটি ট্রেনিং কোর্সের প্রশিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত করে আমাকে আর কামাল হোসেনকে প্রধান কার্যালয় থেকে ওইদিন সকালে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছিল। ঢাকা থেকে গিয়ে আমরা নির্বাহী পরিচালকের ডরমেটরিতে উঠেছিলাম। দুপুরে আমরা ওখানেই খাওয়া-দাওয়া করি। কিন্তু রাতের খাবারের প্রসঙ্গে নির্বাহী পরিচালক জহুরুল হুদা আমাদেরকে জানান, রাতে রান্না হবে না। একটি বিয়ের দাওয়াত আছে। আমাদেরকেও ওখানে যেতে হবে। আমরা যেহেতু দাওয়াতপ্রাপ্ত ছিলাম না, তাই ওখানে যেতে অস্বীকৃতি জানাই। কিন্তু নির্বাহী পরিচালকের চাপে যেতে হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও চট্টগ্রাম অফিসের আরও কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাত হয়।

সাইফুল আলমের ছেলের বিয়েতে উপস্থিতি প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম অফিসের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য ইসলামী ব্যাংক থেকে আমাকে দাওয়াত জানানো হয়েছিল। আমি যেহেতু কয়েক বছর চট্টগ্রাম অফিসে ছিলাম, তাই এখানে অনেকেই পরিচিত ছিল। বিয়েতে অংশগ্রহণ উপলক্ষ্যে সবার সঙ্গে দেখা হবে, এ উদ্দেশে তখন চট্টগ্রাম আসা। এছাড়া ধনী মানুষের বিয়ে কেমন হয়, সেটা দেখার আগ্রহও কাজ করেছে এর পেছনে। সামাজিকতা রক্ষার পেছনে কোনও অনৈতিক লেনদেন আছে কি না- এখানে এটা দেখার বিষয়। 

এস আলমের চেয়ারম্যানের ছেলের বিয়েতে (ডান থেকে) এ বি এম জহুরুল হুদা, কামাল হোসেন, আরিফ হোসেন খান ও মহসিন হোসাইনী। ছবি : সংগৃহীতকেন্দ্রীয় ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের কর্মকর্তা  হিসেবে এ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া স্বর্থের সংঘাত কি  না- জানতে চাইলে বলেন, আমি ডসের পরিচালক  ছিলাম। তাতে কিছু আসে-যায় না। গভর্নর যেভাবে  সিদ্ধান্ত দিতেন সেভাবেই কাজ করতে হতো।  বিগত সরকারের সময় এস আলম, বসুন্ধরা,  বেক্সিমকো, অরিয়ন, থার্মেক্স গ্রুপ ছিল ধরাছোয়ার  বাইরে। আপনি এদের কাজ করতে বাধ্য। এদের  কাছ থেকে সুবিধা নেয়ার সুযোগ ছিল না। কাজ না  করলে টার্গেটেড হয়ে থাকবেন। আমরা দুর্বল  ছিলাম। এরা ধমকিয়ে কাজ করে নিয়েছে। এদের  সঙ্গে আমাদের কোনও খাতির থাকতে পারে না।  তাদের সঙ্গে আমাদের মূলত ভয়-ভীতির সম্পর্ক  ছিল। কাজ করতে বাধ্য ছিলাম। নাহলে রাষ্ট্রযন্ত্র  থেকে চাপ আসতো। যেহেতু যুদ্ধ করে পারবো না,  তাই অকারণে যুদ্ধবাজ সেজে লাভ নেই। 

নিজের বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, বেক্সিমকোর ২৩ হাজার কোটি টাকার বেনামি ঋণের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়ছিল। এতে সালমান এফ রাহামন ক্ষুব্ধ হয়ে গভর্নরকে ভোর রাতে ঘুম থেকে উঠিয়ে গালাগালি করেছিলেন। পরেরদিন গভর্নর আমাদেরকে স্টান্ড রিলিজ করবে এমন অবস্থা। গভর্নরকেই যদি তারা ধমকায়, সেখানে আপনি আমি কে? 

তিনি বলেন, গভর্নর ফজলে কবিরের সময় ব্যাংক পরিচালকদের মেয়াদ ৬ বছর থেকে বাড়িয়ে যখন ৯ বছর করা হয়েছিল, ওই প্রজ্ঞাপন বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি লিখেনি। গভর্নরকে সারাদিন সবিচালয়ে আটকে রেখে তার হাতে প্রজ্ঞাপনের খসড়া ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল। 

আরিফ খান বলেন, এখন দেখা যাক আমরা পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে পারি কি না। এখন স্বাধীন, স্বাধীনভাবে কাজ করবো। আবার যদি রাজনৈতিক সরকার আসে, আবার চাপ আসবে, তখন কাজ করতে পারবো না।

এস আলম গ্রুপকে সুবিধা দেন বিএফআইইউ’র সেই মাসুদ বিশ্বাস 

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মাসুদ বিশ্বাস ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর ডেপুটি গভর্নর পদমর্যাদায় বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বিএফআইইউ’র প্রধান হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নেন। এর আগে তিনি এ সংস্থার উপপ্রধান ও ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। দুই বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষে তিনি আরও এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নেন একই পদে। এর আগে নির্বাহী পরিচালক হিসেবে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের প্রধানের দায়িত্ব ও প্রধান কার্যালয়ে অফসাইট সুপারভিশন বিভাগের (ডস) দায়িত্ব পালন করেছেন। এ সময়ে তিনি এস আলম গ্রুপ সহ বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীকে অবৈধ সুবিধা দিয়েছেন। বিনিময়ে নিজে বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্র জানায়। সংস্থাটি বর্তমানে মাসুদ বিশ্বাসের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে মাসুদ বিশ্বাসের পাচারকৃত সম্পদের খোঁজ নিতে ১১ দেশে চিঠি পাঠিয়েছে। 

মাসুদ বিশ্বাসের বিষয়ে দুদকের নথিপত্রে বলা হয়েছে, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের সঙ্গে পারস্পরিক যোগসাজশে ইসলামী ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন। এর পাশাপাশি আরও কয়েক জন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগের তদন্ত করছে সংস্থাটি। 

আরও পড়ুন<<>> বিতর্কিত দুই ডেপুটি গভর্নরের কারিশমা।। সিদ্ধান্তমাত্রই তথ্য জানে লুটেরাগোষ্ঠী ।। ঝুঁকিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

বিএফআইইউ’র প্রধান হিসেবে মাসুদ বিশ্বাসের কর্মকাণ্ড কেমন ছিল সে বিষয়ে সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন,আমাদের তদন্ত দলগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অর্থপাচার সংক্রান্ত বিষয়গুলো তুলে আনলেও অনেক প্রতিবেদন ধামাচাপা দিতেন মাসুদ বিশ্বাস। এছাড়া বিশেষ শিল্পগোষ্ঠীগুলোসহ এসব শিল্পগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলোতে আমাদের তদন্তদল অনুসন্ধান চালাতে পারতো না মাসুদ বিশ্বাসের কারণে। কোনোভাবে এসব চিহ্নিত প্রতিষ্ঠানগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন করা হলেও সেগুলো হিমাগারে পাঠিয়ে দিতেন তিনি।’  

বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীকে সুবিধা দিয়ে অবৈধ অর্থ উপার্জন ও পাচারের বিষয়ে একাধিক মাধ্যমে চেষ্টা করেও মাসুদ বিশ্বাসের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মাসুদ বিশ্বাসের পক্ষ হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে থেকে অনেক কিছুই বাধ্য হয়ে করতে হয়েছে। এসব শিল্প গ্রুপকে সুবিধা না দিলে সুস্থভাবে বেঁচে থাকারই সুযোগ কম ছিল। 

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মাসুদ বিশ্বাসসহ ৬ শীর্ষ কর্মকর্তা পদত্যাগে বাধ্য হন। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা তাকে তার কার্যালয় থেকে একপ্রকার জোর করেই বের করে এনে প্রধান ফটক পার করে দিয়েছিলেন। প্রধান ফটক পার হওয়ার সময় মাসুদ বিশ্বাসকে লাঞ্ছনার ঘটনাও ঘটেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনও কর্মকর্তার এমন বিব্রতকর বিদায় কখনও হয়েছে কি না- জানেন না কেউ। 

আরেক আস্থাভাজন কর্মকর্তা চট্টগ্রাম অফিসের সাবেক প্রধান জহুরুল হুদা 

বিএফআইইউ’র পরিচালক এ বি এম জহুরুল হুদা। ২০২২ সালের ১৯ অক্টোবর নির্বাহী পরিচালক পদে পদোন্নতি পেয়ে চট্টগ্রাম অফিসে নিযুক্ত হন। এর আগে বিএফআইইউ’র পরিচালক হিসেবে দেড় বছর ও অতিরিক্ত পরিচালক হিসেবে ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগটিতে। অনুসন্ধানকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, সাড়ে ছয় বছরই এস আলম গ্রুপের পক্ষ হয়ে বিএফআইইউতে কাজ করেছেন জহুরুল হুদা। এরপর নির্বাহী পরিচালক হিসেবে চট্টগ্রাম অফিসে ১৪ মাস দায়িত্ব পালন করেছেন। এসময়ও এস আলম গ্রুপকে ‘ব্যাংক লুটে’ সহযোগিতা করেছেন। এর প্রতিদান হিসেবে অবসরোত্তর ছুটি ভোগকালে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক পদও পেয়েছেন তিনি। গত ৫ মে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায়’ এস আলম গ্রুপ ন্যাশনাল ব্যাংকের দখল নেয়। এসময় বাংলাদেশ ব্যাংক যে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দিয়েছিল সেখানে স্বতন্ত্র পরিচালক হয়েছিলেন জহুরুল হুদা। 
এসব অভিযোগ খণ্ডন করে জহুরুল হুদা বলেন, নির্বাহী পরিচালক পদোন্নতি পেয়ে আমি যেতে চেয়ছিলাম সিলেট অফিসে। কিন্তু তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান আমাকে চট্টগ্রাম অফিসে পদায়ন করেছিলেন। এ দোষ আমার না। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখেন, আমি চট্টগ্রামে থাকাকালে এস আলম গ্রুপ কোনও ঋণ নিতে পারেনি। 

জহুরুল হুদার কথামতো খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, তারকালে এস আলম গ্রুপ চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে অবস্থিত কয়েকটি ব্যাংকের শাখা থেকে নামে-বেনামে দশ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ সুবিধা নিয়েছে। এসব ঋণের বড় অংশই পাচার হয়েছে বলে ধারনা বিভিন্ন সংস্থার।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়