Apan Desh | আপন দেশ

ইসলামী ব্যাংকের মুনিরুল মওলাকে নিয়ে ভয় এস আলমের!

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:৩৮, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

আপডেট: ০০:০১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

ইসলামী ব্যাংকের মুনিরুল মওলাকে নিয়ে ভয় এস আলমের!

সাইফুল আলম মাসুদ ও মোহাম্মদ মুনিরুল মওলা (ইনসেটে)। ছবি: আপন দেশ

আপাতদৃষ্টিতে নেই সাইফুল আলম মাসুদ ওরফে এস আলমের উপস্থিতি। তবে ইসলামী ব্যাংকের অন্দরে এখনো তিনি-ই প্রভাবশালী। দেশের সবচেয়ে বৃহৎ এ ব্যাংকটি এখনো আলোচিত এস আলম গ্রুপের কব্জায়। শতকরা ৮২ ভাগ শেয়ার এখনো তাদের হাতে। শীর্ষ সারির ক’জন বাদে এস আলমের দেয়া টপ টু বটম চাকরিজীবীরাও বহাল তবিয়তে। তাদের অসহযোগিতায় বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেয়া উদ্যোগও হোচট খাচ্ছে। 

আলাপকালে তথ্য মিলেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক চায় পাচারের অর্থ ফেরত আনতে সর্বকৌশলের ব্যবহার। হদিস চায় সব ধরনের লোপাটের। তাই প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ক’মাস আগেও সংগঠিত ইসলামি ব্যাংকের অনিয়মের নথি ধরে টান দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে সহায়তা করছে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা। পথের কাঁটা ‘মুনিরুল মওলা’কে সরাতে মরিয়া ব্যাংটির তখন আর এখনকার মালিকরা।

ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদের সদস্য ও একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এমডি মুনিরুল মওলার সহযোগিতায় এস আলম গ্রুপের লুটের টাকা উদ্ধার সহজ হচ্ছে। এটা হয়তো গ্রুপটির জন্য মাথা ব্যাথার কারণ। সেজন্য নানামুখী ইস্যু তৈরি করে মুনিরুল মওলাকে ব্যাংক থেকে সরানোর চেষ্টা চালাচ্ছে এস আলম।

আরও পড়ুন<<>> বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন কার্যালয় ছিল এস আলমের!

বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আপন দেশ’কে বলেছেন, এমডি মুনিরুল মওলাকে অপসারণের জন্য আমাদের কাছে অনেক সুপারিশ ও চাপ আসছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তাকে সরিয়ে দেয়া হলে এস আলম গ্রুপের অর্থ উদ্ধার অনেক কঠিন হয়ে যাবে। এমনকি অন্তর্বর্তী সরকারের মহৎ উদ্যোগ ব্যর্থও হতে পারে।  

তথ্য বলছে, গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ইসলামী ব্যাংক। যে কারণে গ্রাহকদের আস্থাও বাড়তে শুরু করেছে।  গত ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাড়ে ৪ মাসে ব্যাংকটিতে গ্রাহকদের আমানত বেড়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা। এতে আমানতের বিপরীতে বিনিয়োগের হার (আইডিআর) কমেছে ২ দশমিক ২৩ শতাংশ। 

পরিবর্তিত সময়ে ইসলামী ব্যাংকে রেমিট্যান্সের গতিও বেড়েছে। সাড়ে চার মাসে ব্যাংকটির মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ১ হাজার ৮৭৯ মিলিয়ন ডলার। ব্যাংকটির ডলার সংকট কেটে যাওয়ায় নিয়মিত আমদানি ব্যয় পরিশোধে গতি এসেছে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে ৭৮০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আমদানী দায় পরিশোধ করেছে ব্যাংকটি। 

দেখা গেছে, ব্যাংকটির বর্তমান নেতৃত্বের উদ্যোগে ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতায় নগদ অর্থের তীব্র সংকট কেটে গেছে৷ এতে চেকের বিপরীতে পেমেন্ট নিয়মিত দেয়া সম্ভব হচ্ছে। বিভিন্ন শাখায় ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে কোনো গ্রাহকের চেক ফেরত দিচ্ছে না ইসলামী ব্যাংক। এটিএম বুথ থেকেও টাকা তুলতে সমস্যা নেই। এমনকি আরটিজিএস ও এনপিএসবি পেমেন্টেও কোনো বিঘ্ন হচ্ছে না।

আরও পড়ুন<<>> এস আলমের ছয় কারখানা বন্ধ ঘোষণা

এদিকে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় সুশাসন ফেরায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিধিবদ্ধ সঞ্চিতিও (এসএলআর) বাড়িয়েছে ব্যাংকটি। আলোচিত সময়ে এসএলআর ২ হাজার ৪৬ কোটি টাকা বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত হিসাবের স্থিতি বেড়েছে ৫শ’ কোটি টাকার বেশি। 

ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ আপন দেশকে বলেন, বিগত সময়ে ব্যাংকে সংঘটিত অনিয়ম তদন্তে ৪টি অডিট ফার্ম নিয়োগ করা হয়েছে। চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে অডিট শেষ হলে জানুয়ারি থেকে আমরা অর্থ উদ্ধারের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু করবো।

অভিযোগে জানা যায়, ঋণের নামে ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা লুট করেছে বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম। এখন পর্যন্ত তদন্তের মাঠে আছে দুর্নীতি দমন কমিশন। তাদের ১২৫টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। ওদিকে পালিয়ে সিঙ্গাপুরে আছেন এস আলমসহ পরিবারের সদস্যরা। তারা  বাংলাদেশের পাসপোর্ট ত্যাগ করে সেখানকার নাগরিকত্বও নিয়েছেন। 

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়