Apan Desh | আপন দেশ

ইইডির চিফ ইঞ্জিনিয়ার পদের তদবিরে সমন্বয়ক-জামায়াত-আমলা

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:০৭, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১৯:৫৮, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

ইইডির চিফ ইঞ্জিনিয়ার পদের তদবিরে সমন্বয়ক-জামায়াত-আমলা

ফাইল ছবি

দেশের বাজেটের অপেক্ষাকৃত বেশি বরাদ্দ শিক্ষা খাতে। আর সে বরাদ্দের বেশিরভাগই খরচ হয় শিক্ষা অবকাঠামো উন্নয়নে। যার দায়িত্ব পালন করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর। এ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীর পদটি বৈধ-অবৈধভাবে আয়ের জন্য ‘সোনার হরিণ’। 

আগামী ১৯ জানুয়ারির মধ্যে ‘হরিণ’ ধরতে চলছে চতুর্মুখী তদবির। কেউ চায় পদোন্নতিসহ পদ, কেউ চায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ আবার ফের সুপারসিট করে বাগাতে চায় পদটি। পদ প্রত্যাশীদের ইচ্ছাপুরণে যারা তদবিরে নেমেছেন তাদের তালিকায় আসছে সমন্বয়ক, রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী এবং আমলাদের নাম। 

আওয়ামী লীগের শাসন আমলে নিয়ম ভঙ্গ করাই ছিলো বিধি। কর্মকর্তা আর ঠিকাদার ছিলো মানিকজোড়া। বাটোয়ারায় চলতো প্রকল্পের দুর্নীতি। তাদের পতন ঘটেছে তবে নিকট অতীতে বিধি ভঙ্গ, সুপারসিট করা হয় এ পদে। ফের শুরু হয়েছে একই কাজ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ খাতের উন্নয়ণে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরে স্বচ্ছ, দক্ষ ও প্রাপ্য কর্মকর্তাকে পদে বসাতে হবে। তা না হলে অতীতের দুর্নীতির এক্সটেনশ ছাড়া ভালো কিছু আশা করা যাবে না। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের প্রতিশ্রুতি- যা কিছু হবে বিচক্ষণতার সঙ্গেই হবে। অতীতকে সামনে রেখেই পদায়ন করা হবে। 

প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রধান প্রকৌশলীর দৌঁড়ে আছেন এ দফতরের ছয় প্রকৌশলী। এরা হলেন-  মো. জালাল উদ্দিন চৌধুরী, তারেক আনোয়ার জাহেদী, নজরুল হাকিম, জাহাঙ্গীর আলম, আলতাফ হোসেন। এ ছাড়াও ওএসডিতে থাকা তিন প্রকৌশলী রায়হান বাদশা, আফরোজা বেগম ও সমির কুমার রজক দাসও ফিরতে চান নিজ নিজ চেয়ারে। 

জালাল চৌধুরীর সুপারসিট

মো. জালাল উদ্দিন চৌধুরী প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্বে। তার জন্মস্থান চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়। প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ ১ মার্চ ১৯৯৪ সালে। যোগদান করেন পরের সপ্তাহের ১৭ মার্চ। চুয়েট থেকে পাশ করা প্রকৌশলী মো. জালাল উদ্দিন চৌধুরী যোগদানের পর থেকে বেশিরভাগ সময়ই ছিলেন চট্টগ্রামে। ৩১ বছরের মধ্যে কিছুদিনের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছিলেন। সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর আশির্বাদে ফের যান চট্টগ্রামে। 

চট্টগ্রাম সার্কেলের দায়িত্বে থাকাকালীন তার অনিয়মের ফিরিস্তি কেউ প্রকাশ করতে না পারলেও এখন শিরোনাম হচ্ছেন জালাল উদ্দিন। ভয়াবহ অনিয়মচিত্র ভাসছে গণমাধ্যমে।   

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চট্টগ্রামের সন্তান জালাল চৌধুরী। তাকে প্রধান প্রকৌশলী করা হয়েছে ৫ জন সুপারসিট করে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরে চাউর আছে ‘কিছু যোগ্যতা আর জন্মস্থান চট্টগ্রাম’ হওয়ায় প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ারে জালাল চৌধুরী। মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৯ জানুয়ারি। ওইদিন অবসরে যেতে হবে তাকে। কিন্তু ওই দায়িত্বে থাকতে তদবিরে নেমেছেন তিনি। চাইছেন চুক্তিভিত্তিক দুই বছরের জন্য নিয়োগ।

আরও পড়ুন<<>> বসুন্ধরার পাচারের টাকায় তিন মহাদেশে আট সাম্রাজ্য!

দুষ্কর্মের জন্য সাজাপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ও বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ নেতা রায়হান বাদশা প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন অদৃশ্য ক্ষমতাবলে। রুটিন দায়িত্বে ছিলেন তিনি। অযোগ্যতা এবং প্রবল আপত্তিরমুখে তাকে ওই পদ থেকে অপসারণ করা হয়। এখন ওএসডিতে তিনি। 

তবে প্রকৌশলী জালালের পথ সুগম করতে আরও দুই প্রকৌশলীকে ওএসডি করা হয়েছে। জালাল চৌধুরীর সিনিয়র আফরোজা বেগম, সমূর কুমার রজক দাসকে। সব মিলিয়ে সূচের ছিদ্রে পেরেক ঢুকানোর মতো অবস্থা তৈরি করে জালাল চৌধুরীকে বসানো হয় প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ারে। 

প্রকৌশলী মো. তারেক আনোয়ার জাহেদী।

তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. তারেক আনোয়ার জাহেদী (টুটুল)। উত্তরবঙ্গের সন্তান জাহেদী এখন কর্মরত রংপুর সার্কেলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে। প্রধান প্রকৌশলী (রুটিন দায়িত্ব) মো. জালাল চৌধুরীর চেয়ে সিনিয়র রুয়েট পাশকরা এ প্রকৌশলী। ১৯৯৪ সালের ১ মার্চে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। যোগদান করেন ওই বছরের ১০ মার্চ। 

চৌধুরী জালালকে দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে ডিঙ্গিয়ে। সুপারসিটের শিকার হয়েছেন জাহেদী। বিএনপিপন্থি এ প্রকৌশলীর জন্য তদবির করছেন আদর্শের একাধিক সহকর্মী। যারা প্রধান কার্যালয়ে আছেন। দলীয় হাইকমান্ডের গ্রীণ সিগন্যাল আনতে পারেননি। তাকে ঘিরে প্রধান প্রকৌশলী ও ঢাকার তত্বাবধায়ক অফিসের একাধিক প্রকৌশলী জোর তদবির করছেন তাদের সুবিধার্থেই। পদ-প্রমোশনের জন্য যে মহৌষধের প্রয়োজন তা যোগান দিচ্ছেন তারা। তবে জেষ্ঠতা বিধি মানা হলে আশা করতে পারেন এ প্রকৌশলী। 

নজরুল হাকিম

মো. জালাল চৌধুরীর জুনিয়র প্রকৌশলী মো. নজরুল হাকিম। সিলেটের সন্তান তিনি। ১৯৯৪ সালের ১ মার্চ নিয়োগ এবং যোগদান করেন একই বছরের ২১ মার্চ। চাকরির শুরু থেকেই তিনি সিলেট বিভাগে ছিলেন। এখন তিনি ময়মনসিংহের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী।   

‘উলটপালট করে দে মা লুটেপুটে খাই’ বচনের মতো সিলেটের বরাদ্দ উলটপালটের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ‘সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল’ নীতিতে বিশ্বাসী এ প্রকৌশলী শতশত কোটি টাকা জলে ফেলেছেন। ঠিকাদারকে অগ্রিম টাকা দিয়েছেন। নিয়েছেন শতকরা দুই অঙ্কের কমিশন। এখন যার দায়ভার পড়েছে সরকারের কাধে। ১৫ কোটি টাকার দুর্নীতির তদন্ত হচ্ছে দেড় বছর ধরে। নজরুলের বুয়েটের ক্লাসমেট শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিজানুর রহমান। তদন্ত ঠেকিয়েছেন আপাতত।

ইইডিতে প্রকৌশলীদের যোগদানে সিনিয়রিটির ভিত্তিতে তালিকা। সংগৃহীত

ধর্নাঢ্য প্রকৌশলী নজরুল মরিয়া প্রধান প্রকৌশলীর পদ বাগাতে। তার জন্য ইতোমধ্যে একজন সমন্বয়ক তদবির করেছেন। যে সমন্বয়ক একসময় ঢাবিতে ছাত্রলীগ করতেন। আপাতত বড় বাধা না এলে জালালের মতো সুপারসিট করে নজরুল হাকিমকে প্রধান প্রকৌশলীর পদে বসাতে পারেন ওই সমন্বয়ক। তবে গনেশ উল্টে যেতেও পারে স্বচ্ছভাবে এ পদে নিয়োগ হলে।  

জাহাঙ্গীর আলম
নজরুল হাকিমের জুনিয়র প্রকৌশলী মো, জাহাঙ্গীর আলম। জন্ম বরিশালে। তিনি এখন ঢাকা মেট্রোর তত্বাববধায়ক প্রকৌশলী। এ পদে থেকেই প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ার বাগিয়ে নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদ নেতা রায়হান বাদশা। হাদিয়া অঙ্কদৌঁড়ে অনেকটাই পেছনে জাহাঙ্গীর আলম। তবে বুয়েট থেকে পাশ করা পটুয়াখালির বাসিন্দা শিক্ষামন্ত্রণালয়ে এক অতিরিক্ত সচিবের আশির্বাদে তিনি প্রধান প্রকৌশলী হতে চান।

মো.আলতাফ হোসেন।

তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আলতাফ হোসেন। ১৯৯৬ সালের ৬ জানুয়ারি নিয়োগ পান তিনি। যোগদান করেন ১০ জানুয়ারি। কথিত আছে শিক্ষা অধিদফতরের ইটপাটকেল ঘুষ নেয়। সেখানে আপাতত বাহ্যিক আলোচনায় তিনি সৎ কর্মকর্তা। প্রধান প্রকৌশলী পদ পাবার দৌঁড়ে তিনি বেশ এগিয়ে। রাজনৈতিক আদর্শ তার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। প্রকৌশলী সেক্টরে তিনি ওই সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে। তার সংগঠন চায় প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে আলতাফ হোসেন দায়িত্ব পান।

মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্যসূত্রের দাবি, তার বিষয়ে সংগঠনের শীর্ষ পর্যায় থেকে সিগন্যাল এসেছে। আশাপাশের চিত্রমতে ধারণা করা যায় নেতৃত্ব চাইলে পদটি জুটতে পারে আলতাফ হোসেনের কপালে। 

আপন দেশ/এবি/এসএমএস

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়