
ফাইল ছবিতে- নূরুল ইসলামের ‘নোমান গ্রুপ’ চক্র
মাফিয়া শেখ হাসিনার লুটপাটতন্ত্রের অলিগার্ক অন্যতম নোমান গ্রুপ। আওয়ামী রাজনৈতিক আদর্শের ১৮০ ডিগ্রি বিপরীতে ঘুরে যাচ্ছেন। হয়েছেন এক সময়ের প্রিয়নেত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী বিরোধী। দুর্নীতির মামলা ঠেকাতে, তদন্ত থামাতে ধারণ করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রপন্থি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপন্থি। শেখ হাসিনার অন্যতম ডোনার নোমান গ্রুপের কর্তারা এখন বিএনপি-জামায়াতপন্থি।
জনতার রোষাণল থেকে গাড়ী বাড়ি কারখানা বাঁচাতে ডোনেশনের বাক্স বদল করেছেন। অথচ তার দলের নেতারাই সাক্ষী গণঅভূত্থানকারীদের ঠেঙ্গাতে প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে ২ ও ৩ আগস্ট দু’দফায় দিয়েছেন ৩০ কোটি টাকা। এ লুটেরাদের কৌশলের কাছে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারাও ধরা। চলতি সরকারের উপদেষ্টা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতা, বিএনপি-জামায়াতের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে লুটেরাদের মাখামাখির ছবি ফেসবুকে দিয়ে হতে চাচ্ছেন নিস্পাপ। তবে ওই কৌশলের কারণে এখর আর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে না ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। দুদকের ফাইলও নড়ছে না। তদন্তেই ঘুরপাকখাচ্ছে কেন্দ্রিয় ব্যাংকসহ রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর টিম।
তথ্যমতে, বাস্তব ও কাগুজের তিন ডজনের বেশি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত নোমান গ্রুপ। দেশের সরকারি-বেসরকারি ২১ ব্যাংকের সাড়ে ২৮ হাজার কোটি লুটের অভিযোগ মাফিয়া নোমান গ্রুপ মালিকদের বিরুদ্ধে। বিএফআইইউ দুদককে অনেক আগেই জানিয়েছে নোমানচক্র পাচার করেছে ৫ হাজার কোটি টাকা। সব চেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো নোমান গ্রুপের ঘুর্ণিচক্করে পড়া শেষ ঋণদাতা প্রতিষ্ঠাগুলোর পরিণতি হবে ভয়াবহ। কারণ ঋণের বিপরীতে গ্রুপটি যে জামানত (বন্ধকি সম্পত্তি) রেখেছে তা বিক্রি করলে ঋণের কিঞ্চিৎ অংশও ফেরত পাওয়া যাবে না।
ডজন ডজন অভিযোগের মধ্যে দু’একটি ইস্যুকে সামনে রেখে তদন্তের নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সিআইডিসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা। ইতোমধ্যে গ্রুপ সংশ্লিষ্টদের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে আদালত থেকে। নোমান গ্রুপের জনক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম। এ বহরে আছেন তার স্ত্রী সৈয়দা সুফিয়া খাতুন, পুত্র আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ জোবায়ের,আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ জোবায়ের, আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তালহা, এসএম রফিকুল ইসলাম নোমান, কন্যা নূর-ই-ইয়াসমিন ফাতিমা নাতি সাদ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হোসাইনসহ গ্রুপের কর্তকর্তারাও। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীকেও দেখানো হয়েছে। শুধু মুখে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই নয় খোদ আদালতে নূরুল ইসলাম নিজেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অন্যান্য আ’লীগ নেতাদের অত্যন্ত ঘনিষ্টজন হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
সমন্বয়ক হাসানাতের শয্যাপাশে নোমান গ্রুপের পরিচালক ফাতিমা
জুলাই বিপ্লবে সমন্বয়কদের অন্যতম হাসনাত আব্দুল্লাহ। স্বৈরাচারের বাহিনীর হাতে মারখেয়ে গুরুতর আহত হয়েছিলেন। ভর্তি করা হয়েছিল সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)। তখন হাওয়া তাদের প্রতিকূলে। তাই সুযোগ বুঝে সিএমএইচে হাসানাতের পাশে ফটোসেশনে যান নূরুল ইসলামের কন্যা নূর-ই-ইয়াসমিন ফাতিমা। তিনি নোমান গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠান ‘নাইস ডেনিম’র মালিক ও ‘সাদ গ্রুপ’র ডেপুটি ম্যানিজিং ডিরেক্টর। অন্যদিকে বান্দরবানে আওয়ামী লীগের এমপি বীর বাহাদুরের সঙ্গে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করেছেন। নারায়নগঞ্জের আতঙ্ক শামীম ওসমান, ডিবি হারুনের সঙ্গেও ছিলো তার দরহরম মহরম। গত ২৬ জুলাই নূরুল ইসলামের পুত্র জাবের অ্যান্ড জুবায়ের’র অন্যতম মালিক জোবায়ের মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
ধর্ম উপদেষ্টাকে বাসায় দাওয়াত, সমন্বয়ক-উপদেষ্টা আসিফকে নিয়েছেন নুরুলের কারখানায়
সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণে একাধিক উপদেষ্টাকে বাসা ও নোমান গ্রুপের কারখানায় নিয়েছেন ধুর্ত নুরুল ইসলাম। তার আলিশান বাড়ী রাজধানীর গুলশান-২ সি.ডব্লিউ.এন. (বি), রোড-৪৪ এর ১৯ নম্বরে। গত ৩০ আগস্ট শুক্রবার ওইদিন বাড়িতে দাওয়াত করে নেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনকে। সেখানে উপদেষ্টাকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। আলো আধারীর রুমে করানো হয় খানাপিনা।
আরও পড়ুন<<>> প্রকৌশলী সুলতানের জালিয়াতি-লোপাটের ভয়ঙ্কর চিত্র
টিসিবির পণ্য বিতরণে এলজিআরডি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ভূঁইয়া সজিবকে নিয়েছেন নোমান গ্রুপের কারখানায়। গত ১৬ অক্টোর তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানায় নোমান গ্রুপের কর্তারা। উপদেষ্টাকে দিয়ে টিসিবির পণ্যবিতরণের উদ্বোধন করেছেন। এ ছবি ফেসবুকে পোষ্ট করেছেন নোমান পরিবার। অন্যদিকে নিজ দফতর, এলাকার সভা-সমাবেশে শেখ হাসিনা, আ’লীগ সরকারের মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, ঢাকা দক্ষিণের সিটি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদূর উশৈসিং ত্রিপুরা, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সঙ্গে তার পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামীলীগ ঘনিষ্টতার প্রমাণ বহন করে তাদের ফেসবুক ওয়ালে।
তুষ্ট নীতির আপডেট ভার্ষণে নেতা-গণমাধ্যম
কাকে কিভাবে তুষ্ট করা যায় সে পথ নুরুল ইসলামের কাছে পুরনো। তাই সভানেত্রী শেখ হাসিনা পালানোর পর তুষ্টনীতি নয়া ভার্ষণ এনেছেন। তাতে যোগ হয়েছে গণমাধ্যমও। শাসন ক্ষমতার কাছাকাছি বিএনপি-জামায়াতের পাঠানো লোকজন বসিয়েছেন তার প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে। আওয়ামী লীগ জামানায় দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা দুদকের ফাইলে লাল ফিতায় গিট দিতেন। এখন দিচ্ছে বিএনপি নেতারা। দলটির সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের ছোট ভাই মারুফ নোমান গ্রুপের ফাইল বস্তাবন্দি করতে তদ্বির করছেন দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্তার কাছে। এ অভিযোগ- নোমান গ্রুপের বিরুদ্ধে গঠিত তিন সদস্যের টিমের একজনের।
এদিকে চলতি সময়ের জনৈক মজলুম সাংবাদিককেও বশ করেছে নোমান গ্রুপ। লুটের হারাম টাকা হালাল করতে বেছে নেয়া হয়েছে মজলুম ওই মালিকের গণমাধ্যমকে। ভারত, শেখ হাসিনাসহ তার দোসর ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আকাশ ফাঁটানো হুঙ্কার দিলেও ব্যাংক লুটেরার টাকাকে কবুল বলতে দ্বিধা করেননি ওই মালিক।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।