Apan Desh | আপন দেশ

জামালপুর জনস্বাস্থ্যে দুর্নীতির কিংপিন সুলতান, আমিনুল, হোয়াইট বাবু

শওকত জামান

প্রকাশিত: ২২:০৫, ১৪ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ১৭:২৪, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

জামালপুর জনস্বাস্থ্যে দুর্নীতির কিংপিন সুলতান, আমিনুল, হোয়াইট বাবু

ছবি: আপন দেশ

সুলতান মাহমুদ ওরফে সুলতান খাঁ। প্রকৌশলখাতে পরিচিত নাম। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরে কর্মরত তিনি। এ খাতে দুর্দান্ত প্রতাবশালী তিনি। প্রধান প্রকৌশলীও তার কাছে অবদমিত থাকতেন। সিদ্ধান্ত বদলে বাধ্য হতেন। সুলতান বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ নেতা। বিদ্যাপীঠে ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা। অভ্যুত্থানের স্বৈরাচারের দোসররা গা ঢাকা দিলেও ক্যারিশমা দিয়ে তিনি পরিবেশ এনেছেন অনুকূলে। দুর্নীতির দায়ে ওএসডি করা হলেও দুদক তার দিকে তাকানোর সাহসও রাখেনি। তিনি নাকি দুদকের সাবেক কমিশনার, বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ও স্বজন, আদর্শিক কর্মী। রাষ্ট্রপতির জন্মস্থানও পাবনায়।

পাবনার আলাউদ্দিন খাঁ-পারুল খাঁ দম্পতির পুত্র সুলতান মাহমুদ। নিম্নবিত্ত পরিবারের সুলতান মহামুদের সম্পদ দেখভালের জন্য তার স্ত্রী পাবনার চাটমোহরের হরিপুরের ফিরোজ মিয়ার কন্যা ফাল্গুনী নুপুর হিমশিম খান। ফলে দেশ-বিদেশে একাধিক বাড়ি,গাড়ি, প্রতিষ্ঠানের হিসাব রাখতে এখন লাগছে ম্যানেজার। মূল অফিস বনানীতে।

আপন দেশ-এর অনুসন্ধানে মিলেছে- সুলতান এ সম্পদের বেশিরভাগ সংগ্রহ করেছেন জামালপুরে কর্মরতকালে। তার কর্ম-অপকর্মের অনুসন্ধানী ধারাবাহিকের আজ জানাবো দ্বিতীয় পর্ব।      

প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ ওরফে সুলতান খাঁ। কদিন আগেও ওএসডি হয়েছেন। ছিলেন জামালপুর জনস্বাস্থ্যের নির্বাহীর দায়িত্বে। সরকারি এ কর্মকর্তার অফিসের ভেতরে বাহিরে ঠিকাদার সিন্ডিকেট গড়েছেন। টেন্ডার কারসাজি, স্ট্যাম্পে জাল সই, জাল সনদ, প্রক্সি ঠিাকাদার সাজিয়ে জেলার বরাদ্দের হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার স্নেহধন্য সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এ প্রকৌশলী শুধু জামালপুরেই নয়, জনস্বাস্থ্যের প্রধান কার্যালয়েরও আতঙ্ক। সুলতান খাঁ বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের  জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর শাখা কমিটির শীর্ষ এগারো জনের অন্যতম। জনস্বাস্থ্যের অনুকূলে দেশ-বিদেশের বরাদ্দকৃত ২৫ হাজার কোটি টাকায় চোখ তার।

প্রকৌশল খাতের মহাদুর্নীতিবাজ সুলতান মাহমুদকে জামালপুরে সহায়তা করে কোটি কোটিপতিবনে গেছেন- সহকারী প্রকৌশলী সোহেল রানা, ক্যাশিয়ার খন্দকার আমিনুল ইসলাম, ছায়া নির্বাহী প্রকৌশলী খ্যাত প্রধান অফিস সহকারী জাহাঙ্গীর কবির বাবু ওরফে হোয়াইট বাবুরা। জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত নামে-বেনামে বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন নিজ জেলাতেই। সময় বুঝে কৌশল বদলকারী এ চার পাণ্ডবের ইশারায় চলতো জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের আড়ালে ফ্রিস্টাইলে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ লুটপাট।

আরও পড়ুন<<>> জামালপুর জনস্বাস্থ্যের এলিট দুর্নীতিবাজ ‘সুলতাননামা‘

সেসময় জেলার রাজনৈতিক মহাশক্তি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপির মদদে বীরদর্পে জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অর্থ ও ঠিকাদারদের উপর খড়গ চালিয়েছেন। এসব অপকর্মের দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন মির্জা আজমের ‘জামাতা’ খ্যাত শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানু। সরকারি প্রকল্পের অর্থ লুটপাটের অংশ যেত শ্বশুর-জামাতার পকেটে। তাদের আশীর্বাদে সে জনস্বাস্থ্য অফিসে সুলতানি আদেশ কায়েম হতো। এর বাইরে গেলে সিংহভাগ কাজ করার পরও কাজ বাতিল বা বিল আটকে ঠিকাদারদের অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতি করা হতো।

সুলতান খাঁ ও তার সহযোগীরা হাসিনা পতনের পর রূপ বদলে বিএনপির লোভাতুর নেতাদের কব্জায় নিয়েছেন। ওইখাতে চাউর আছে, বদৌলতে নগদ অর্থ দিয়েছেন সুলতান চক্র। আসন্ন বরাদ্দে ঠিকাদার কাজ দেয়ার টোপও দিয়েছেন। এ কৌশল টিকেছিলেন সাত মাস। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি শুধু সুলতানের। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে সুলতান খাঁকে ওএসডি করে জনস্বাস্থ্যের প্রধান কার্যালয়ে যুক্ত করা হয়েছে।

সুলতানের থাবায় ক্ষতিগ্রস্ত ঠিকাদার, নিম্নমানের কাজ করে সরকারি অর্থলুটে ক্ষুব্ধ স্থানীয় জনগণের তোপের মুখে পড়ার শংকায় জামালপুরে কর্মস্থলের শেষ দিনও যাননি তিনি। জনস্বাস্থ্যের ময়মনসিংহ বিভাগীয় অফিসে বসে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী সামিউল ইসলাম কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। এর আগে একাধিকবার মিটিং-সিটিং করেছেন তারা।

জনস্বাস্থ্যের ঠিকাদার মহলে গুঞ্জন, জামালপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী সমিউল ইসলামের অতিরিক্ত দায়িত্ব পাওয়ার নেপথ্যে সুলতান মাহমুদের হাত রয়েছে। সুলতানদের অনিয়মের ফাইলে যেন দৃষ্টি না দেন তেমন মৌখিক চুক্তির কথাও বলাবলি করছেন প্রকৌশলীরা। সুলতানের সারা দেশে টেন্ডারের আড়ালে দুর্নীতির কাহিনি শুনে স্থানীয়দের চোখ চড়ক গাছে। সুলতান নামা এখন জামালপুরে টক অব দ্য ডিস্ট্রিক্ট। 

সুলতানের তিন শক্তির বলয় 

জনস্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, সুলতান মাহমুদ ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর জামালপুরে জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী পদে যোগদান করেন। জামালপুর যোগদানের নেপথ্যে ছিলেন- মির্জা আজম। সুলতান ঘনিষ্ঠদের তথ্যমতে, অর্থনৈতিক চুক্তির পরিবেশ তৈরি করতে সুলতান তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এমডিকে মির্জা আজমের কামরায় পাঠিয়েছেন সময়-অসময়ে।

সুলতান খাঁ এর আগে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর , মাগুরা, গাজীপুরের টঙ্গী, গাজীপুরে ছিলেন। পূর্বের কর্মস্থলেও দুর্নীতির স্বাক্ষর রেখে এসেছেন। ওইসব জেলা-উপজেলায় এখনো প্রকৌশলী সুলতানকে চেনে ‘মাফিয়া’ হিসেবেই। যোগদানের পর থেকে জেলার উন্নয়নের নামে অসংখ্য প্রজেক্ট প্রোফাইল (পিপি) তৈরি করেন সুলতান। ওই পিপিতে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাগিয়েছেন মির্জা আজম। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বৃত্তায়ন করেছেন সুলতান চক্র।

আরও পড়ুন<<>> জামালপুর জনস্বাস্থ্যের কোটিপতি অফিস সহকারী হোয়াইট বাবু ছায়া নির্বাহী!

এদিকে ক্যারিশমা দেখিয়েছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক শক্তি ও স্থানীয় শক্তির সমন্বয়ে সাম্রাজ্যের কংক্রিট বলয় গড়ে তুলেছিলেন সুলতান। জেলার সব এমপি ও মন্ত্রীকে টাকার এনার্জি দিয়ে ছায়া খুঁজে নিয়েছিল। স্থানীয় শক্তি গড়ে তুলেছিলেন অফিসিয়াল সিস্টেমে। জামালপুর সদরসহ স্ব স্ব উপজেলার বাসিন্দা সকলকেই নিজ এলাকায় পোস্টিং দিয়েছেন। এ জেলার জনস্বাস্থ্য অধিদফতরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘আজম-ছানো-সুলতান সরকার’। সরকারি বিধির কেয়ার করতেন না তিনি। চাকরি বিধিমালা উপেক্ষা করেছেন পুরো সময়। স্থানীয় কর্মকর্তা-কর্মচারী জনস্বাস্থ্যে অফিসে কর্মরত থাকায় পুরোপুরি ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ, নামে-বেনামে একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সে নিজেই সিংহভাগ ঠিকাদারি কাজ হাতিয়েছেন। ইচ্ছামতো কৌশল খাটিয়ে নিন্মদরে ঠিকাদারি কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ না দিয়ে উচ্চ দরে কাজ বাগিয়ে নেয় সুলতান। তাতে সরকারের হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

উপজেলার লোককে নিজ উপজেলা প্রকৌশল অধিদফতরে রাখার নেপথ্যে ছিল স্থানীয় সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে স্থানীয় ঠিকাদার ম্যানেজ রাখা। সুলতান সিন্ডিকেটের বাকি ৩ পান্ডব জনস্বাস্থ্যের টেন্ডার কারসাজি করে সরকারি অর্থ লুট করে কেটি কোটি টাকাসহ বিপুল আয় বহির্ভূত নামে-বেনামে বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। সুলতানের মতো একই অপরাধ করে স্ব স্ব পদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন তারা। এখনো একই কায়দায় দুর্নীতি অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন সুলতানের মোবাইল প্রেসক্রিপশনে। জনস্বাস্থ্য এখনো চলছে তারই নির্দেশনায়। 

ভাড়া করা লাইসেন্সে কাজ, প্রোপাইটর বেতনভুক্ত

যোগদানের পর স্থানীয় হাতেগোনা কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতো নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ। বাকি কাজ করেছেন নিজ নিয়ন্ত্রিত ঠিকাদার এবং নিজ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। নিজের অর্থায়নে পছন্দের ব্যক্তির নামে খুলেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যার নামে লাইসেন্স তাকে দেন মাসিক বেতন। এর মধ্যে জমেলা এন্টারপ্রাইজ, তাইবি কনস্ট্রাকশনের  মতো বেশ কয়েকটি। এছাড়াও ভাড়া করা লাইসেন্সে কাজ নিয়েছেন।

আরও পড়ুন<<>> প্রকৌশলী সুলতানের জালিয়াতি-লোপাট চিত্র

আওয়ামী লীগের ঠিকাদারদের একজন জানান, জামালপুরে জনস্বাস্থ্যে বরাদ্দের শতকরা ৫০ ভাগের বেশি কাজ করেছে শাহীন খানের নামে সুলতানের লাইসেন্স মেসার্স জমেলা এন্টারপ্রাইজ ও মাসুম খানের মুক্তা এন্টারপ্রাইজ। বাকি কাজ করেছ মেসার্স রূপসা প্রকৌশল, রিপন এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স তাইবি ট্রেডার্স, আরজু এন্টারপ্রাইজ, মুক্তা-আরজু এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স শামীম এন্টারপ্রাইজ এবং শেরপুরে আকরাম এন্টারপ্রাইজ ও মো. লুৎফর এন্টারপ্রাইজ। যোগদানের পর তিনি ৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রেখে বাকি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন করেনি। এখন যেসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, বেশির ভাগই বাইরের জেলা থেকে সুলতানের কানেকশনে এসেছে। 

ঘুষে ‘টাঁকশাল’ আমিনুল, প্রতি বছর কেনেন বাসা-জমি

জনস্বাস্থ্যের টাঁকশাল খ্যাত ক্যাশিয়ার আমিনুল ইসলাম। সরিষাবাড়ীর আওনা ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের খন্দকার খলিলুর রহমানের ছেলে। তার স্ত্রী নাছিমা আক্তার শেরপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরে  নিম্নমান সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক পদে কর্মরত। আশির দশকে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থেকে তৎকালীন বিএনপির মহাসচিব ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম তালুকদারের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছিলেন। বিএনপির সরকারের আমলে সালাম তালুকদারের তদবিরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদফতরে চাকরি পেয়েছিলেন। ক্ষমতার পালা বদলের সঙ্গে বদলে যান আমিনুলও। আগে ছিলেন ‘জিন্দাবাদ’ পরে হন জয় বাংলার লোক।

২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর জামালপুর জনস্বাস্থ্য অধিদফতরে যোগদান করেন আমিনুল। হিসাবের সকল ধরনের করিতকর্মায় বিশেষজ্ঞ হওয়ায় নজরে পড়ে সুলতান মাহমুদের। সে থেকে শুরু হয়ে সুলতান সিন্ডিকেটের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিতে অধিষ্ঠিত হন। সিন্ডিকেটের সরকারি অর্থলুটের ভাগ পেয়েই ক্ষান্ত থাকেনি তিনি। ক্যাশিয়ারের চেয়ার ব্যবহার করে নানা কায়দায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে নিয়েছেন নানা অঙ্কের ঘুষ। প্রকল্পের ফান্ডে টাকা আসার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে চেক ইস্যু হলেও আমিনুলের অর্থভান্ডারে চাহিদামতো পারসেনটেজ না দিলে বিল তোলা যেত না। কাজ পাওয়ার জন্য আগাম পারসেনটেজ, চলমান ঘুষের টাকা জমা থাকতো আমিনুলের কাছে । ঘুষের টাকা হিসাব রাখার বিশেষ ডায়েরি রাখতেন আমিনুল। 

জনস্বাস্থ্যের হিসাবরক্ষক পদে বসে ঠিকাদারি ব্যবসাও করেছেন আমিনুল। জামালপুরের রূপসা এন্টারপ্রাইজ, রিপন এন্টারপ্রাইজ এবং শেরপুরের লুৎফর এন্টারপ্রাইজ ও আকরাম হোসেন এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে পার্টনারে ঠিকাদারি ব্যবসা করছেন তিনি। স্ত্রী শেরপুর অফিসে কর্মরত থাকায় সেখানেও কাজের ভাগ বসিয়েছেন আমিনুল। তার অংশীদারদের মাধ্যমে জামালপুর ও শেরপুরে জনস্বাস্থ্যের ঠিকাদারি কাজ করছেন। 

একই অফিসে ১২ বছর চাকরিকালীন ফুলে ফেঁপে নিম্নবৃত্ত পরিবারের আমিনুলের পরিচয় এখন উচ্চবিত্তের। এখন শত কোটি টাকার মালিক। সম্প্রতি জামালপুর শহরের মুকন্দবাড়ী এলাকায় দেড় কেটি টাকা মূল্যের ৮ শতাংশ জমিসহ হাফ বিল্ডিং বাড়ি কিনেছেন। এছাড়াও বিভিন্নস্থানে নামে-বেনামে সম্পদ, ব্যাংক ব্যালেন্স, ভরি ভরি স্বর্ণালংকারসহ নানা সম্পদ করেছেন নিজ ও শ্বশুরবাড়ির স্বজনদের নামেও। সুলতানের ‘মাইম্যান’আমিনুল।

সহকারী প্রকৌশলী সোহেল রানা ‘জুনিয়র সুলতান’

সহকারী প্রকৌশলী সোহেল রানাকে জনস্বাস্থ্য অধিদফতর চিনে ‘জুনিয়র সুলতান’ নামে। সুলতান জেলার টেন্ডার কমিটির আহবায়ক আর সোহেল টেন্ডার কমিটির সদস্য সচিব। নানা ধরনের জালিয়াতিতে পারদর্শী প্রকৌশলী সোহেল রানা। লাইসেন্সের বয়স দুই বছর হলেও সে লাইসেন্সের অভিজ্ঞতা তিন বছর দেখানোর মতো নিখুঁত জালিয়াতিতে অভিজ্ঞ এ সোহেল। পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজের ইষ্টিমেটের তথ্য বিক্রি করেন তিনি।

 

একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামালপুরে কাজ করছেন, কিন্তু গত ৪ বছরে জেলাতেই পা রাখেনি। কারণ ওইসব প্রতিষ্ঠানের অঘোষিত মালিক সুলতান মাহমুদ। রাজধানীর বনানীতে এনএন ইঞ্জিনিয়ার্স নামে সুলতানের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যা দেখভাল করে সুলতানের স্ত্রী ফাল্গুনী নুপুর। রাষ্ট্র বনাম ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩শ’ টাকার স্ট্যাম্পে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় তাতে সই করে খন্দকার আমিনুল, কখনো হোয়াইট বাবু।

নারী কেলেঙ্কারিতে ফাঁসছেন হোয়াইট বাবু

জামালপুর যুবলীগ নেতা ফারহানের বন্ধু জাহাঙ্গীর কবির বাবু ওরফে হোয়াইট বাবু। ২০১৫ সালে চাকরিতে যোগদানের পর অন্য কোথাও বদলি হয়নি একদিনের জন্যও। পরিত্যক্ত করে নির্বাহী প্রকৌশলীর বাসভবনেই পরিবার নিয়ে বাস করছেন কথিত ‘ছায়া নির্বাহী প্রকৌশলী’ বাবু। ওদিকে যোগদানের পর সুলতান খাঁ অফিসের দোতলায় রেষ্টরুম তৈরি করেছেন। কর্ম-অপকর্মের প্রয়োজনে দিবানিশি থাকতেন সুলতান খাঁ।

অর্থলোভী সুলতানকে নারীলোভীতে পরিণত করেছেন হোয়াইট বাবু। ঘুষ হিসেবে টাকার পাশাপাশি উপঢৌকন দিতো নারীদের। জনস্বাস্থ্যের আবাসিক প্রশিক্ষণার্থীদের গভীর রাতে ডাক পড়তো দফতরে। সুলতানের বরাতে বাবুর ফোনে আসতে হয়েছে প্রথমে নীচ তলায়, পরে দোতলায়....। স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় পার করতেন বাবুর টেবিলে। জনৈক নারী আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছেন সুলতান-বাবুর নিপীড়নের বিরুদ্ধে।

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়