ছবি : আপন দেশ
রাজধানীর একাধিক সড়কে অনেকদিন ধরে একটি দৃশ্য দেখা যায়। সারিবদ্ধভাবে ফুটপাতে বসে কিংবা দাঁড়িয়ে আছেন অসংখ্য মানুষ। তাদের অধিকাংশই ছিন্নমূল। অনেকে আছেন নিম্নবিত্ত। অনেকে অল্প আয়ের মানুষ। আর সেখানে পাশের দেয়ালে লেখা রয়েছে ভালো কাজের হোটেল।
সরেজমিন দেখা যায়, একটি ভালো কাজ করলেই ফ্রিতে মিলে খাবার। সত্যিকারভাবে যারা খেতে এখানে আসেন তারা ভালো কাজ করেই আসেন কিনা জানা নেই। আসলে যে কেউ চাইলেই খাবার খেতে পারেন এখানে।
জানা যায়, ভালো কাজের হোটেলের ভ্রাম্যমাণ ছয়টি শাখা আছে। যার মধ্যে ঢাকায় পাঁচটি এবং চট্টগ্রামে একটি।
রমজানে ইফতার বিতরণ করছেন ভালো কাজের হোটেলের স্বেচ্ছাসেবীরা। ইফতার খেতে আসা ও স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে কথা হয় রাজধানীর সাতরাস্তা মোড়ে।
সারাদিন রিকশা চালিয়ে ঠিক ইফতারের আগ মুহূর্তে সাতরাস্তা মোড়ে হাজির খয়বর হোসেন। তিনি আরেক রিকশা চালকের কাছে এই ভালো কাজের হোটেলের সন্ধান পেয়েছেন।
ভালো কাজ একটি করেই তিনি ইফতারের বক্স নিতে এসেছেন। কী সেই ভালো কাজ? খয়বর জানান, তিনি একজন অন্ধ মানুষকে অনেকটা পথ রিকসায় করে নিয়ে গেছেন বিনা পয়সায়।
ছিন্নমূল শিশু আলম দীর্ঘ চার বছর ধরে ভালো কাজের হোটেলে খাবার খায়। অনেক সময় ভালো কাজ না করলেও যখন হাতে কোনো টাকা পয়সা থাকে না, এখানে এসে খাবার খায়। আজকেও ইফতারি করতে এসেছে ভালো কাজের হোটেলে।
শিশু আলম জানায়, তার বাড়ি সিলেটের সুনামগঞ্জে। আগে পরিবারের মা-বাবা, বোন সবাই ছিল। কিন্তু তার মা মারা গেলে বাবা একমাত্র বোনকে অন্যের কাছে পালক দিয়ে দেন। তারপর থেকেই পরিবারের প্রতি অভিমান করে ঢাকায় চলে আসে আলম। বর্তমানে ঢাকায় থাকে কারওয়ানবাজারে অন্য ছিন্নমূল শিশুদের সঙ্গে।
ভালো কাজের হোটেলের সিনিয়র স্বেচ্ছাসেবক মাহমুদুল হাসান অনিক বলেন, এবারের রোজায় আমাদের বেশ কিছু খাবারের মেন্যু আছে। আজকে আমরা মুরগির তেহারি পরিবেশন করছি; সঙ্গে এক গ্লাস পানি, শরবতও আছে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৮০০ জনের ইফতার আয়োজন করে থাকি আমরা।
তিনি বলেন, যাদের কিনে খাওয়ার সামর্থ্য আছে, তবে বাসে যাতায়াত করার কারণে খাবার কেনার অবস্থাটা তাদের নেই। তাদেরকেও আমরা বিনামূল্যে বাসে বাসে গিয়ে ইফতার বিতরণ করে থাকি। আমাদের এখানে ছিন্নমূল থেকে শুরু করে রিকশাচালকরা পর্যন্ত ইফতার পেয়ে থাকে। প্রথমে লাইন ধরে খাবারগুলোকে রাখা হয়। তারপরে আজানের আগ মুহূর্তে তারা এসে খাবারের সামনে বসে পড়ে। খাবার শেষ হলে যার যার ময়লাগুলো নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে তারপর তারা এখান থেকে যায়।
খাবারের খরচ কোথা থেকে আসে জানতে চাইলে মাহমুদুল হাসান অনিক বলেন, পুরো দেশে আমাদের প্রায় দুই হাজার ডেইলি টেন মেম্বার আছেন। এই ডেইলি টেন মেম্বাররা প্রতিদিন দশ টাকা হারে মাসে ৩০০ টাকা ডোনেট করেন। এ ছাড়া অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী আছেন যারা এককালীন বেশ ভালো পরিমাণ টাকা ডোনেট করে থাকেন। পাশাপাশি বেশকিছু কোম্পানিও আমাদের ডোনেট করে। তাদের এই চাঁদার কন্ট্রিবিউটের মাধ্যমেই আমাদের এই ভালো কাজের হোটেলের কার্যক্রম চলে।
তিনি বলেন, এই ভালো কাজের হোটেলে যাত্রা শুরু হয় ২০০৯ সাল থেকে। তখন উৎসবগুলোতে অসহায় মানুষদেরকে খাওয়ানো হতো। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে প্রতি সপ্তাহে একদিন করে আমরা কমলাপুর অসহায় লোকদের খাওয়াতাম। তবে করোনার সময় লকডাউন যেদিন থেকে শুরু হয়েছে সেদিন থেকে আমরা এখন পর্যন্ত নিয়মিত খাবার খাওয়াচ্ছি অসহায় এবং ছিন্নমূলদের।
আপন দেশ/আরএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।