ছবি: সংগৃহীত
আজ পর্দা উঠছে এশিয়া কাপের ১৬তম আসরের। উদ্বোধনী ম্যাচে পাকিস্তানের মুলতানে দেশটির মুখোমুখি নেপাল। এশিয়া কাপ শুরুর আগেই উত্তাপ ছড়িয়েছিল। রাজনৈতিক কারণে ভারত চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ পাকিস্তানে না আসার কথা জানিয়ে দেয় স্পষ্টভাবে।
প্রতিবাদে পাকিস্তানও দেয় ভারতে হতে যাওয়া বিশ্বকাপে না খেলার হুমকি। দুই পক্ষের অনড় অবস্থানে এশিয়া কাপ হয়ে পড়ে অনিশ্চিত। কখনো স্বাগতিক হিসেবে নাম আসে আরব আমিরাতের তো কখনো চিত্রনাট্যে ঢুকে পড়ে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তান রাজি হয় এশিয়া কাপ খেলতে।
এবারের আয়োজন ‘হাইব্রিড মডেলে’ হচ্ছে। ভারতের আপত্তিতে মূল আয়োজক পাকিস্তান থেকে বেশ কিছু ম্যাচ সরিয়ে নেয়া হয়েছে। চারটি ম্যাচ পাকিস্তান ও নয়টি ম্যাচের আয়োজন করবে শ্রীলঙ্কা। মোট ১৩টি ম্যাচের টুর্নামেন্টটির সবগুলো খেলা বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে তিনটায় শুরু হবে।
অবশ্য এশিয়া কাপে এমন ঝাঁজ নতুন নয়। পাশাপাশি সীমান্তের কারণে যেমন থাকে রাজনৈতিক টানাপড়েন, তেমনি দলগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, আবেগ আর এক ইঞ্চি জমি না ছাড়ার মানসিকতা এশিয়া কাপের রোমাঞ্চ নিয়ে গেছে অন্য মাত্রায়, যা ক্ষেত্রবিশেষে দেখা যায় না বিশ্বকাপেও। ভারত-পাকিস্তানের বৈরিতা তো আছেই।
উত্তেজনার সেই এশিয়া কাপে আজ অভিষেক হচ্ছে নেপালের। শুধু সার্কের দল বলে উড়ে এসে জুড়ে বসেনি নেপাল। গত মে-এপ্রিলে ১০ দলের এসিসি প্রিমিয়ার কাপ জিতেই এশিয়া কাপের মঞ্চে তারা। সেখানে নেপাল হারিয়েছে আরব আমিরাত, হংকংয়ের মতো আগে এশিয়া কাপ খেলা দলকে। ওয়ানডে বিশ্বকাপ লিগ-২-এ ১২ ম্যাচের ১১টি জিতে জায়গা করে নিয়েছিল বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে। ২০১৮ সালে ওয়ানডে মর্যাদা পাওয়া দলটি র্যাং কিংয়ে উঠে এসেছে ১৫ নম্বরে।
২০২৭ সালে ১৪ দলের বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতেও প্রস্তুত নেপাল। সেই অভিযানে এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তানের মতো দুই পরাশক্তির সঙ্গে খেলার সুযোগ দারুণ কাজে দেবে বলে মনে করেন অধিনায়ক রোহিত পাউডেল, ‘বাবর আজম, বিরাট কোহলিদের খেলা টিভিতে দেখে এসেছি এত দিন। তাদের সঙ্গে খেলতে পারাটা অনেক বড় ব্যাপার হতে চলেছে আমাদের জন্য। এই অভিজ্ঞতা কাজে আসবে। পাকিস্তানের বিপক্ষে যেকোনো ফরম্যাটে প্রথম ম্যাচটা আমরা স্মরণীয় করে রাখতে চাই।’
এবারের এশিয়া কাপ হচ্ছে বিশ্বকাপের মাসখানেক আগে। ওয়ানডের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্টের জন্য এশিয়া কাপ তাই আদর্শ মঞ্চ এশিয়ান দলগুলোর জন্য। পাকিস্তানের প্রস্তুতি অবশ্য শুরু হয়েছে আগেই। তারা তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে আফগানিস্তানের সঙ্গে। ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জেতায় নিশ্চিত করেছে র্যাং কিংয়ের শীর্ষস্থানও। এশিয়া কাপে মুকুটটা ধরে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ তাদের। কারণ ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা ছেড়ে কথা বলবে না মোটেও। তবে খেলা শুরুর আগে বড় ধাক্কা খেয়েছে ভারত। চোটের জন্য প্রথম দুই ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছেন লোকেশ রাহুল। কোচ রাহুল দ্রাবিড় নিশ্চিত করলেন এটি, ‘রাহুল আপাতত জাতীয় ক্রিকেট একাডেমিতে থাকবে। প্রথম দুটি ম্যাচ খেলতে পারবে না। সুপার ফোরের আগে দেখা হবে ও পুরো ফিট হয়ে উঠেছে কিনা।’
আরও পড়ুন <> এশিয়া কাপে বাংলাদেশকে হিসাবে রেখেছেন ওয়াসিম
এ আসরে অংশ নিতে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সারছে বাংলাদেশসহ ছয়টি দেশ। বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপ- দুটি টুর্নামেন্টই হবে ওয়ানডেতে। ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশ অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। তিনবার ফাইনাল খেলার পরেও টাইগাররা শিরোপা জিততে পারেনি। সর্বশেষ ২০১৮ সালে ওয়ানডে ফরমেটে হওয়া এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে হওয়া ম্যাচটিতে শেষ পর্যন্ত ৩ উইকেটে হেরে যায় টাইগাররা।
এবারের এশিয়া কাপের ‘এ’ গ্রুপে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান ও নেপাল। ‘বি’ গ্রুপে অবস্থান বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের। প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপে অংশ নেওয়া নেপাল ছাড়া বাকি পাঁচটি দলই খেলবে বিশ্বকাপে। সেই সুবাদে চলতি এশিয়া কাপকে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবেই ধরে নিয়েছে সবগুলো দলই।
ভারত স্কোয়াড: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার, লোকেশ রাহুল, শুভমান গিল, সূর্যকুমার ইয়াদব, তিলক ভার্মা, ঈশান কিষান, হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, অক্ষর পাটেল, শার্দুল ঠাকুর, জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজ, মোহাম্মদ শামি, কুলদ্বীপ ইয়াদব, প্রসিধ কৃষ্ণা।
নেপাল স্কোয়াড: রোহিত কুমার পাওডেল (অধিনায়ক), মোহাম্মদ আসিফ শেখ, কুশাল ভুরটেল, ললিত নারায়ণ রাজবানশি, ভিম শারকি, কুশাল মাল্লা, দিপেন্দ্রা সিং আইরে, সন্দ্বীপ লামিচানে, কারান এলসি, গুলশান কুমার ঝা, আরিফ শেখ, সোমপাল কামি, প্রাতিশ জিসি, কিশোর মাহাতো, সুন্দিপ জোরা, অর্জুন সাউদ ও শায়াম ধাকাল।
বাংলাদেশ স্কোয়াড: সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম, আফিফ হোসেন ধ্রুব, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, শেখ মাহাদি হাসান, নাইম শেখ, শামীম হোসেন পাটোয়ারি, তানজিদ হাসান তামিম, তানজিম হাসান সাকিব।
আফগানিস্তান স্কোয়াড: হাশমতউল্লাহ শাহিদ (অধিনায়ক), রহমানুল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরান, রিয়াজ হাসান, রহমত শাহ, নয়লী জাদরান, মোহাম্মদ নবি, ইকরাম আলিখিল, করিম জানাত, গুলবাদিন নায়েব, রশিদ খান, মুজিব উর রহমান, নূর আহমদ, শরিফউদ্দিন আশরাফ, ফজল হক ফারুকি, আবদুর রহমান, এস সাফি।
শ্রীলঙ্কা স্কোয়াড: দাসুন শানাকা (অধিনায়ক), পাথুম নিশাঙ্কা, দিমুথ করুনারত্নে, কুশল পেরেরা, কুশল মেন্ডিস, চারিথ আশালঙ্কা, সাদিরা সামারাবিক্রমা, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা, দুশন হেমন্ত, দুনিথ ওয়েল্লালাগে, মহেশ থিকসানা, প্রমোদ মাদুশান, কাসুন রাজিথা, বিনুরা ফার্নান্দো ও মাথিশা পাথিরানা।
পাকিস্তান স্কোয়াড: বাবর আজম (অধিনায়ক), আবদুল্লাহ শফিক, ফখর জামান, ইমাম-উল-হক, সলমান আলী আগা, ইফতিকার আহমেদ, মহম্মদ রিজওয়ান, মহম্মদ হারিস, শাদাব খান, মহম্মদ নওয়াজ, উসামা মীর, ফাহিম আশরাফ, হারিস রউফ, মহম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র, নাসিম শাহ, শাহীন আফ্রিদি, সৌদ শাকিল, তৈয়ব তাহির (ট্র্যাভেলিং রিজার্ভ)।
আপন দেশ/আরএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।