ছবি : সংগৃহীত
গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের পথে আফগানিস্তানের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। অপরাজিত দুইশ’ রানের স্বপ্নীল ইনিংস খেলে আফগানদের জয়বঞ্চিত করেছিলেন এই মিডলঅর্ডার। এবারও দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন ‘ম্যাড ম্যাক্স’ খ্যাত এই মারকুটে ব্যাটার। তবে পারেননি শেষ পর্যন্ত। রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরানের উদ্বোধনী জুটির রেকর্ড আর নাভিন-উল-হক, গুলবাদিন নাইবদের বোলিংয়ে স্বপ্নভঙ্গ হয় অস্ট্রেলিয়ার। অজিদের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখল আফগানরা।
কিংসটাউনে বাংলাদেশ সময় রোববার সকালে ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং; তিন বিভাগেই দাপট দেখিয়ে প্রতাপশালী অস্ট্রেলিয়াকে ২১ রানে হারিয়েছে আফগানিস্তান। ১৪৯ রানের লক্ষ্যে ৬ বল বাকি থাকতে ১২৭ রানে গুটিয়ে যায় সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এটি আফগানিস্তানের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ জয়। যে জয় বাংলাদেশের সেমি-ফাইনাল খেলার সম্ভাবনাও টিকে রইল খাতা-কলমে।
৪ ওভারে ২০ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচের নায়ক গুলবাদিন নাইব। যা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় সেরা বোলিং ফিগার। তিনি আউট করেছেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়নিস, টিম ডেভিড ও প্যাট কামিন্সকে। সমান ৪ ওভারে একই রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন নাভিন।
অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে সর্বোচ্চ ৫৯ রান ম্যাক্সওয়েলের। দুই অঙ্কে যেতে পেরেছেন আর কেবল দুজন- মিচেল মার্শ (১২) ও মার্কাস স্টয়নিস (১১)।
৩২ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর ৩৯ রানের জুটি গড়েন ম্যাক্সওয়েল ও স্টয়নিস। এরপরই মুলত গুলবদিন ম্যাচের ভাগ্য বদলে দেন। তাঁর বাউন্সারে ইনিংসের ১১তম ওভারে আউট হন স্টয়নিস। টিম ডেভিডও উইকেটে থিতু হতে পারেননি। তাঁকেও আউট করেছেন গুলবদিন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ টানা ৮ ম্যাচ জেতার পর হার দেখল অস্ট্রেলিয়া।
দিনের শুরুটা দারুণ করে আফগানিস্তান। রহমানউল্লাহ ও ইব্রাহিম ওপেনিংয়ে গড়েন ৯৫ বলে ১১৮ রানের জুটি। যদিও তুলনামূলক কঠিন উইকেটে অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের সামনে খুব একটা দ্রুত গতিতে রান তুলতে পারেননি তাঁরা। ৪৮ বলে ৫১ রান করেছেন ইব্রাহিম। গুরবাজ করেছেন ৪৯ বলে ৬০।
এমন শক্ত ভীতের পর বড় একটা সংগ্রহই হওয়ার কথা ছিল আফগানিস্তানের। তবে শেষ ৫ ওভারে মাত্র ২৯ রান করতে পারে তারা। কারণ প্যাট কামিন্সের হ্যাটট্রিক। বাংলাদেশের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের পর আজ আফগানিস্তানের বিপক্ষেও হ্যাটট্রিক করেছেন এই পেসার। এবারও দুই ওভার মিলিয়ে তাঁর হ্যাটট্রিক। উইকেট নিয়েছেন ১৮তম ওভারের শেষ বল এবং ২০তম ওভারের প্রথম দুই বলে।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবার এমন ঘটনা দেখল ক্রিকেট বিশ্ব। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্বিতীয়। এর আগে ১৯৯৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টানা দুই টেস্টে হ্যাটট্রিক করেছিলেন পাকিস্তান কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম বোলার হিসেবে দুটি হ্যাটট্রিকের মালিক এখন কামিন্স। শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি লাসিথ মালিঙ্গার ওয়ানডে বিশ্বকাপে দুটি হ্যাটট্রিক আছে।
পঞ্চম বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দুটি হ্যাটট্রিক করলেন কামিন্স। এর আগে টি-টোয়েন্টিতে দুটি হ্যাটট্রিক করেছেন মালিঙ্গা, টিম সাউদি, মার্ক পাবলোবিচ, ওয়াসিম আব্বাস। তবে এঁদের কেউই টানা দুই ম্যাচে এই কীর্তি গড়তে পারেননি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৪৮/৬ (গুরবাজ ৬০, ইব্রাহিম ৫১, ওমারজাই ২, জানাত ১৩, রাশিদ ২, নাবি ১০*, গুলবাদিন ০, নানগেলিয়া ১*; অ্যাগার ৪-১-১৭-০, হেইজেলউড ৪-০-৩৯-০, কামিন্স ৪-০-২৮-৩, জ্যাম্পা ৪-০-২৮-২, ম্যাক্সওয়েল ২-০-১২-০, স্টয়নিস ২-০-১৯-১)
অস্ট্রেলিয়া: ১৯.২ ওভারে ১২৭ (হেড ০, ওয়ার্নার ৩, মার্শ ১২ ম্যাক্সওয়েল ৫৯, স্টয়নিস ১১, ডেভিড ২, ওয়েড ৫, কামিন্স ৩, অ্যাগার ২, জ্যাম্পা ৯, হেইজেলউড ৫*; নাভিন ৪-০-২০-৩, ফারুকি ৩-০-২১-০, ওমারজাই ১.২-০-৯-১, নাবি ১-০-১-১, নানগেলিয়া ১-০-১৩-০, রাশিদ ৪-০-২৩-১, নুর ১-০-১১-০, গুলবাদিন ৪-০-২০-৪)
ফল: আফগানিস্তান ২১ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: গুলবাদিন নাইব
আপন দেশ/এইউ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।