সাকিব আল হাসান
মাঠের খেলার পাশাপাশি রাজনীতির ময়দানে বিচরণ ছিল তার। হয়েছিলেন সংসদ সদস্যও (এমপি)। আর সেটিই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। জুলাইয়ে ছাত্র জনতার বিপ্লবে সরকার পতনের পর থেকেই দেশ ছাড়া সাকিব আল হাসান। মাস দুই আগে ভারতে টেস্ট সিরিজর মাঝে নিজের অবসর পরিকল্পনার কথা জানান এ অলরাউন্ডার। তার প্রভাব পড়েছে র্যাংকিংয়ে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) প্রতি বুধবার দল ও খেলোয়াড়দের র্যাংকি হালনাগাদ করে থাকে। ব্যতিক্রম কিছু না ঘটলে বা বড় কোনো টুর্নামেন্ট চলমান না থাকলে সপ্তাহের নির্দিষ্ট এ দিনটিতে র্যাংকিং হালনাগাদ করা হয়। নিয়মানুযায়ী গতকাল বুধবার (২০ নভেম্বর) র্যাংকিং হালনাগাদ করেছে সংস্থাটি। ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থার মতো র্যাংকিং-ধারাবাহিকতা ছিল সাকিব আল হাসানেরও।
আলাদাভাবে ব্যাটিং, বোলিংয়ে যে ক্রিকেটারই থাকুক, সপ্তাহ শেষে অলরাউন্ডার র্যাংকিংয়ে শীর্ষেই থাকত সাকিব আল হাসানের নাম। তা-ও দু-চার সপ্তাহ বা চার-ছয় মাস নয়, বছরের পর বছর ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ে ১ নম্বর স্থানটা ছিল এই অলরাউন্ডারের জন্য ‘বরাদ্দ’।
যদিও এখন এসব অতীত। ঠিক এতটাই যে আইসিসির ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ে সাকিবের নামই নেই এখন।
ভারতে বসে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানান সাকিব, তবে ঘরের মাঠে খেলতে চেয়েছিলেন ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট। গত অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুরে সাকিব শেষ টেস্ট খেলতে চাইলেও পরিস্থিতির কারণে শেষ পর্যন্ত আর খেলা হয়নি তার। অথচ টেস্ট র্যাংকিংয়ে সাকিবের নাম ঠিকই আছে। তবে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে সাকিব নেই, অলরাউন্ডার হিসেবে দীর্ঘদিন শীর্ষে ছিলেন এ দুই সংস্করণেই।
সাধারণত একজন ক্রিকেটার নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে যেমন র্যাংকিং তালিকায় প্রবেশ করে শীর্ষে উঠে যেতে পারেন, তেমনি আবার খারাপ খেলার কারণে পেছাতে পেছাতে তলানিতেও চলে যেতে পারেন। কিন্তু সাকিবের নাম তো ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ের কোথাওই নেই। বোঝাই যাচ্ছে, বাদ পড়ে গেছেন।
আইসিসি র্যাংকিং থেকে একজন ক্রিকেটার বাদ পড়তে পারেন মোটাদাগে তিনটি কারণে। একটি নিষেধাজ্ঞা বা বহিষ্কার। যেমন ২০১৯ সালের নভেম্বরে জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করায় সাকিবকে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা (এক বছর স্থগিত) দিয়েছিল আইসিসি। ওই সময় র্যাংকিং থেকে সাকিবের নাম বাদ পড়েছিল। এর বাইরে আর কখনোই র্যাংকিং থেকে ছিটকে যেতে হয়নি তাকে।
সাকিবের নাম এখন শুধু টেস্টের র্যাংকিংয়ে আছেন। যে সংস্করণে সর্বশেষ খেলেছেন গত সেপ্টেম্বরে ভারতের বিপক্ষে কানপুর টেস্টে। সে টেস্টের পর বাংলাদেশ দল ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছে, দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলেছে টেস্ট। আর সর্বশেষ চলতি মাসেই সংযুক্ত আরব আমিরাতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলেছে ওয়ানডে সিরিজ। এসবের কোনোটিতেই ছিলেন না সাকিব। তাহলে টেস্ট র্যাংকিংয়ে না থাকলেও ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টিতে কেন নেই তিনি?
র্যাংকিং থেকে বাদ পড়ার বড় তিনটি কারণে আরেকটি হলো অবসর গ্রহণ। গত সেপ্টেম্বরে কানপুর টেস্টের আগেই সংবাদ সম্মেলন করে সাকিব বলেছিলেন, জুনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই এই সংস্করণের শেষ ম্যাচটি খেলে ফেলেছেন। ফলে ২০ ওভারের ম্যাচের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর দেখা যাবে না তাকে। মূলত অবসর নেয়াতেই টি-টোয়েন্টি র্যাংকিং থেকে সাকিবের নাম কাটা পড়েছে।
যদিও সাকিব কিন্তু ওয়ানডে থেকে অবসর নেননি। তিনি বলেছিলেন, ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলে ৫০ ওভার ক্রিকেট থেকে বিদায় নেবেন। এই সংস্করণের র্যাংকিংয়ে নাম না থাকার কারণ দীর্ঘদিনের অনুপস্থিতি। এটাই তৃতীয় কারণ।
র্যাংকিংয়ের মূলমন্ত্রই হচ্ছে বর্তমানকে ফুটিয়ে তোলা। একজন খেলোয়াড়ের পুরোনো পারফরম্যান্সের চেয়ে নতুন পারফরম্যান্সকেই বেশি বিবেচনায় নেয়া হয়। টেস্টের বেলায় র্যাংকিংয়ের জন্য ১২-১৫ মাস সময় বিবেচনায় নেয়া হয়। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির ক্ষেত্রে এটি ৯ থেকে ১২ মাস। এর বেশি সময় কেউ না খেললে র্যাংকিং থেকে নাম সরিয়ে ফেলা হয়।
সাকিবের নাম ওয়ানডে র্যাংকিং থেকে কাটা পড়েছে এখানেই। এই সংস্করণে তিনি সর্বশেষ খেলেছেন ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর দিল্লিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এক বছর পেরিয়ে যাওয়ায় সাকিবের নামটা তাই র্যাংকিংয়েই নেই। যদিও সর্বশেষ ওয়ানডে খেলার সময়ও তার নাম ছিল ১ নম্বরেই!
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।