ছবি : সংগৃহীত
অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়, অবিস্মরণীয়, কোনো বিশেষনই যেন এ গল্পের সঙ্গে যায় না। রোমঞ্চকর এক প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখল টাইগাররা। পিছিয়ে পড়ে ফিরে আসার গল্প এটা। ব্যাটারদের শুরুর ব্যর্থতা বল হাতে ফর্মুলা ওয়ান গতিতে উড়িয়ে দিলেন নাহিদ রানা। মাঝে জাকের আলির দৃপ্তচিত্তে লড়াই দেখিয়ে দিল বিদেশের মাটিতে একজন বাংলাদেশি ব্যাটারের সাহস ও দায়িত্ব নিয়ে খেলার সবচেয়ে ভালো উদাহরণটা। স্পিনার তাইজুল ইসলাম মেলে ধরলেন নিজের অভিজ্ঞতার সবটা। স্রোতের বিপরীতে লড়াই করে দীর্ঘ ১৫ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টেস্ট জয় পেল বাংলাদেশ।
এ জয়ে ১-১ সমতায় সিরিজ শেষ করলো লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। সাদা পোশাকে রঙিন জয় দিয়েই ২০২৪ সালের টেস্ট অভিযান শেষ করল বাংলাদেশ। ২০০৯ সালের গ্রেনাডা টেস্টের ১৫ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদেরই মাটিতে হারাতে পারল বাংলাদেশ। এ ছাড়া দেশ-বিদেশ মিলিয়েই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতল ৬ বছর পর।
এ ম্যাচে দল হয়ে খেলেছে বাংলাদেশ। জাকের আলি চাইলে আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সেঞ্চুরি পূর্ণ করতে পারতেন। কিন্তু দলের জন্য বড় শট নিতে গিয়ে সেঞ্চুরি বিসর্জন দিলেন। উইন্ডিজের প্রথম ইনিংসে নাহিদ রানার ওই স্পেলের পর বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের বদলে যাওয়া মানসিকতা। সাহসের সঙ্গে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করা। ছোট ছোট জুটিতে দলকে তিনশোর কাছে নিয়েও যাওয়া দলগত লড়াইয়ের উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজের কথা আলাদা করে বলতেই হবে। দ্বিতীয় ইনিংসে তার ৩৯ বলে ৪২ রানের ইনিংসে গুটিয়ে থাকার আড়মোড়া কাটিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। পাল্টা আক্রমণে দলের মধ্যে নিজের সাহসী মনোভাব ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন। শেষ ইনিংসে বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং পরিবর্তনে উইন্ডিজের প্রতিরোধ ভেঙেছেন মিরাজ।
কিংস্টনের স্যাবাইনা পার্কে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট জিততে হলে ইতিহাস গড়তে হতো স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। এ মাঠে যে, ২১২ রানের বেশি তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই। এবার উইন্ডিজের লক্ষ্য ছিল ২৮৭ রানের। তবে তাইজুলের ঘূর্ণিতে উইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয়েছে ১৮৫ রানে।
ম্যাচে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ১৬৪ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। জবাবে নাহিদ রানার ৫ উইকেট শিকারে ১৪৬ রানে গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৮ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনেই অলআউট হয়েছে টাইগাররা।
দলের হয়ে একাই লড়াই করেছেন জাকের আলি। কিন্তু মাত্র ৯ রানের জন্য মিস করেছেন সেঞ্চুরি। তার ব্যাটে ভর করে ২৬৮ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। জয়ের জন্য ক্যারিবিয়ানদের টার্গেট দাঁড়ায় ২৮৭ রানের। ৫ ছক্কা ও ৮ চারে ৯১ রান করেন জাকের।
২৮৭ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৫৭ রানের মধ্যে জোড়া উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের স্বপ্ন দেখান তাইজুল ও তাসকিন আহমেদ। মিকাইল লুইস ৬ ও কাসি কার্টি ১৪ রান করে আউট হন। তবে কেভাম হজ ও ক্রেইগ ব্রাফেটের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এ দুই ব্যাটারকে সাজঘরে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান তাইজুল। ব্রাফেট ৪৩ ও হজ ৫৫ রান করে আউট হন।
তাদের বিদায়ের পর আর কেউ থিতু হতে পারেনি। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ১৮৫ রানে অলআউট হয় ক্যারিবিয়ানরা। তাইজুল নেন ৫টি উইকেট। এ ছাড়া তাসকিন ও হাসান মাহমুদ নেন ২টি করে উইকেট।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।