Apan Desh | আপন দেশ

তামিমের অবসরে সতীর্থদের আবেগঘন বার্তা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫:১২, ১১ জানুয়ারি ২০২৫

তামিমের অবসরে সতীর্থদের আবেগঘন বার্তা

অবসর ঘোষণা দিয়েছেন তামিম ইকবাল

দেশের ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়া তামিম ইকবাল। যার ব্যাট থেকে অনেক ম্যাচজয়ী ইনিংস এসেছে। আছে অনেক কীর্তিও। তবে এ অভিজ্ঞ ব্যাটার ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকেই জাতীয় দলের বাহিরে ছিলেন। ফিরবেন কি ফিরবেন না তা নিয়ে ছিল অনেক আলোচনা। দিন দুই আগে তার সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল নির্বাচকরা। অবশেষে এল সিদ্ধান্ত। আর তা হলো জাতীয় দলের হয়ে আর না খেলার সিদ্ধান্ত। 

শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তামিম লিখেছেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে আছি অনেক দিন ধরেই। সে দূরত্ব আর ঘুচবে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমার অধ্যায় শেষ। এমন ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের অন্যতম সফল এ ব্যাটারকে শুভেচ্ছা ও বিদায় জানাচ্ছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা।

জাতীয় দলে তামিমের দীর্ঘদিনের সতীর্থ মুশফিকুর রহিম। দুজনে একসঙ্গে ৭২ ইনিংসে ব্যাট করেছেন। ১৮ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানা প্রিয় সতীর্থ ও বন্ধুর বিদায়বেলায় নিজের ভেরিফায়েড পেজে মুশফিক লিখেছেন, তামিম, তোমার এই অবসরের সময়ে তোমার অর্জনের জন্য আমি কতটা গর্বিত, সেটি বলছি। দোস্ত, তুমি বাংলাদেশ ক্রিকেটের অসাধারণ এক দূত এবং বিশ্বমানের ব্যাটার। দুবাইয়ে আমাদের জুটিটি আমি সব সময় মনে রাখব, বিশেষ করে তুমি যখন ভাঙা আঙুল নিয়ে ব্যাট করেছিলে। এতে দেশের প্রতি তোমার নিবেদন ও খেলার প্রতি ভালোবাসাটা বোঝা যায়। অবসর শুভ হোক, দোস্ত। মাঠে তোমাকে মিস করব। তবে ক্রিকেটের মাধ্যমে অসাধারণ এক বন্ধু পাওয়ার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। 

জাতীয় দলে তামিমের আরেক সতীর্থ মাহমুদউল্লাহ লিখেছেন, তামিম, দীর্ঘ এবং দুর্দান্ত আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে সুন্দর সব অর্জনের জন্য তোমাকে অনেক অভিনন্দন। তোমার অর্জন অনেক এবং বাংলাদেশ দলে অবদানও প্রচুর। আমার মনে হয়, বাংলাদেশ দলের হয়ে এটাই আমাদের শেষবার একসঙ্গে ব্যাট করার ছবি (পোস্টের ছবি)। তোমার সঙ্গে খেলাটা ছিল আনন্দের এবং মাঠ ও মাঠের বাইরে অনেক স্মৃতি আমাদের। অবসর সুখের হোক এই কামনা করি এবং ভবিষ্যতের জন্যও শুভকামনা রইল। তোমার অবদান সব সময় মনে রাখা হবে। 

তামিমের দীর্ঘদিনের ওপেনিং সঙ্গী ছিলেন সৌম্য সরকার। ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সব সংস্করণ মিলিয়ে ৮১ ইনিংস ওপেন করেছেন দুজনে। ফেসবুকে তামিমের অবসর নিয়ে সৌম্য লিখেছেন, নতুন শুরুর জন্য শুভকামনা। অবসর মানে শেষ নয়, এটা সুন্দর এক নতুন অধ্যায়ের শুরুও। সামনের অভিযাত্রা উপভোগের। অবসর শুভ হোক, ভাই। মাঠে আপনাকে মিস করব। 

জাতীয় দলের বাইরে থাকা ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম তামিমের অবসর নিয়ে ফেসবুক পেজে লিখেছেন, আপনার অবসরের মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্রিকেটে একটি যুগের অবসান ঘটল। দেশের অন্যতম সেরা ওপেনার হিসেবে নিজের দক্ষতা, নিবেদন ও নেতৃত্বগুণ দিয়ে আপনি এই খেলায় অমোচনীয় ছাপ রেখে গেলেন। বড় সেঞ্চুরি কিংবা চাপের মুখে দারুণ সব পারফরম্যান্সের অবদান আপনাকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সত্যিকারের আইকন বানিয়েছে। 

ফেসবুকে জাতীয় দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত লিখেছেন, প্রিয় তামিম ভাই, আপনার নেয়া সিদ্ধান্তকে আমি আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই। ২০১৬ সালে আবাহনীর হয়ে প্রথমবার আপনার সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করা থেকে শুরু করে জাতীয় দলে একসঙ্গে খেলার সুযোগ, আপনার কাছ থেকে শিখেছি অসংখ্য কিছু। আপনার ক্রিকেটীয় মেধা, সহ-খেলোয়াড়দের প্রতি আপনার যত্নশীলতা ও উদারতা আমাকে বারবার মুগ্ধ করেছে। 

শান্ত আরও লিখেছেন, আপনার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত অবশ্যই আপনাকে ভাবতে হয়েছে, এবং সেটিকে আমি শ্রদ্ধা জানাই। তবে ড্রেসিং রুমে এবং ২২ গজে আপনার সঙ্গ আমরা ভীষণভাবে মিস করব। আমি গর্বিত যে এমন এক কিংবদন্তি ব্যাটারের সঙ্গে ড্রেসিং রুম ভাগ করে নেয়ার সুযোগ পেয়েছি এবং জাতীয় দলে আপনার সঙ্গে খেলতে পেরেছি। দোয়া করি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায়ের সময়গুলো আনন্দময় হোক। ভালো থাকবেন, তামিম ভাই।

সবশেষ ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাঠে নামেন তামিম। এর কিছুদিন আগেই আফগানিস্তান সিরিজের মাঝপথে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম। পরে অনুরোধে ফিরেও আসেন।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকেও নিজের নাম সরিয়ে নেন। তবুও তাকে নিয়ে জল্পনা চলছিলই। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে শুধু যে বোর্ড থেকে নয়, প্রস্তাব পেয়েছিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর কাছ থেকেও; সেটিও জানিয়েছেন তিনি।  

২০২৩ বিশ্বকাপের আগে নানা নাটকীয়তা তৈরি হয়। এরপর তাকে বিশ্বকাপের স্কোয়াডেও রাখা হয়নি। টুর্নামেন্টে খেলতে যাওয়ার আগে এক টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাকে নিয়ে সমালোচনা করেন তখনকার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ওসব ঘটনার অভিমান যে আছে, তাও স্পষ্ট করেছেন তামিম।  

দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ব্যাটার হিসেবেই বিদায় নিলেন তামিম ইকবাল। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান (৮৩৫৭) তার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি (২৫টি) সেঞ্চুরির মালিক তিনি। তার ঝুলিতে আছে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি (১৪)। তিনিই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৫০ ছাড়ানো ইনিংস (১১৯টি) আছে তার নামের পাশে। এছাড়া দেশের অসংখ্য জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়