
ছবি: সংগৃহীত
নানা চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে আইসিসির ওয়ানডে পরিবারের সদস্য হিসেবে প্রায় ২৮ বছর কাটিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। স্বরণ রাখার মতো তেমন সাফল্য না পেলেও এ সময়ে বেশ কয়েক জন আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড় উঠে এসেছে। তাদের মধ্যে অন্যতম সাকিব আল হাসান। বিশ্বখ্যাত এ অলরাউন্ডার দীর্ঘ দিন তিন ফরম্যাটের র্যাংকিংয়ে রাজত্ব করেছেন। সাম্প্রতিক কালে নানা কারণে দলের বাহিরে রয়েছেন অভিজ্ঞ এ ক্রিকেটার।
অবসরে চলে গেছেন দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটরার তামিম ইকবাল। তাদের ছাড়াই এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে হচ্ছে লাল সবুজ দলকে। খানিকটা বাধ্য হয়েই অভিজ্ঞতার বদলে তারুণ্যকে প্রাধান্য দিয়ে আইসিসির এ বৈশ্বিক আসরের দল গড়তে হয়েছে নির্বাচকদের। সে দলে রয়েছেন তানজিদ তামিম, তানজিম সাকিব, নাহিদ রানা, রিশাদ হোসেন ও পারভেজ হোসেন ইমনের মতো উদীয়মান ক্রিকেটাররা। যারা এরইমধ্যে নিজেদের সামর্থর প্রমাণ দিয়েছেন।
বৈশ্বিক আসরে তেমন সাফল্য না থাকলেও সবশেষ ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ভারতের সঙ্গে পেরে ওঠেননি মাশরাফি-তামিম-সাকিবরা। আট বছর পর সে ভারতের বিপক্ষে এবারের মিশন শুরু হচ্ছে টাইগারদের। কিন্তু প্রস্তুতিটা যুতসই হয়নি বাংলাদেশের। সে কথা স্বয়ং প্রধান কোচ ফিল সিমন্স নিজেই স্বীকার করেছেন। তবে তিনি সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছেন। আমি স্বীকার করি যে এটি সেরা প্রস্তুতি নয়। তবে একবার আমরা যদি নিজেদের ঠিক মানসিকতায় আনতে পারি এবং দুবাইয়ের জন্য সঠিক বিষয়গুলোর উপর কাজ করতে পারি, আমি মনে করি আমরা প্রতিযোগিতাটি ভালোভাবে শুরু করতে পারব।
দেশ ছাড়ার আগে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যেই যাচ্ছে। অধিনায়কের কথার সুর ধরেই বোঝা যাচ্ছে, যে লক্ষ্যের কথা তিনি জানিয়েছেন, সেটা অর্জন করা মোটেও সহজ হবে না বাংলাদেশের। আট বছর পর হতে যাওয়া এ টুর্নামেন্টের শিরোপাকে পাখির চোখ করেছে সবগুলো দল। আর সেজন্য প্রস্তুতির কমতিও রাখেনি তারা। সে প্রস্তুতির ফলই প্রদর্শনের পালা।
মূল পর্বে মাঠে নামার আগে বাংলাদেশের প্রস্তুতি বাকিদের তুলনায় খানিকটা পিছিয়ে। যার প্রমাণ মিলেছে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে পাকিস্তানের এ দল ‘শাহিনসের’ বিপক্ষে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে। আগে ব্যাটিং করে ২০২ রান তুলতে ৩৮.২ ওভাইরেই গুটিয়ে যায় লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। ফলে ইনিংসের ৯১ বল আর ৭ উইকেট হাতে রেখেই ম্যাচটা জিতে নিয়েছে শাহিনস।
প্রশ্ন উঠেই পারে যে, পাকিস্তানের ‘এ’ দলের বিপক্ষেই যদি এমন হাল হয় বাংলাদেশের, তাহলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে গ্রুপ পর্বে পাকিস্তান, ভারত, নিউজিল্যান্ডের জাতীয় দলের বিপক্ষে অবস্থা কেমন হবে শান্তদের? যদিও প্রস্তুতি ম্যাচের ফল দিয়ে সব যাচাই করা উচিত নয়। কিন্তু মূল পর্বে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাংলাদেশ আসলে কতটা প্রস্তুত?
যদি এ বছরের শুরু থেকেও বিবেচনা করা হয়, জাতীয় দলে থাকা ক্রিকেটাররা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যস্ত ছিলেন দেশীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট বিপিএল নিয়ে। অর্থাৎ লম্বা এ সময়টাতে টি-টোয়েন্টির ডামাডোলেই ছিলেন তারা। কোচ বা বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, তারা তো ক্রিকেটের মধ্যেই ছিলেন। কিন্তু বিপিএল আর চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সংস্করণ পুরো আলাদা। একটা ২০ ওভারের, আরেকটা ৫০ ওভারের। দীর্ঘ সময় সংক্ষিপ্ত সংস্করণের বলয়ে থেকে হুট করে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে শিফট করা মোটেও সহজ নয়।
দলের বর্তমান অবস্থা ও সম্ভাবনা নিয়ে সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান বলেন, বাংলাদেশের আমি খুব বেশি সম্ভাবনা দেখি না। প্রস্তুতি ম্যাচেও ভালো করতে পারেনি। আমার মনে হয়, ভালো করলে সর্বোচ্চ সেমিফাইনাল পর্যন্ত যেতে পারবে। আমার আশা এটা।
তিনি বলেন, দলকে ভালো করতে হলে ব্যাটিং বিভাগের অনেক ভালো করতে হবে। বেশ কিছু দিন ধরেই ব্যাটিংটা ঠিকঠাক হচ্ছে না। দলের বোলিং ও ফিল্ডিং তুলনামূলক ভালো আছে। ব্যাটসম্যানরা পারফর্ম করতে পারছে না। তাদের অনেক উন্নতি করতে হবে। ব্যাটিংয়ে ভালো করতে পারলে দলের সম্ভাবনাটা বাড়বে।
আরেক সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাসার বলেন, বাংলাদেশ দলের জন্য চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিটা খুব কঠিন হবে। এ গ্রুপটা খুব শক্তিশালী। দল একটু ফর্মহীনতায় ভুগছে। প্রস্তুতি ম্যাচটাও আমাদের তেমন সাহায্য করেনি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আমাদের ভালো কিছু করতে হলে এক্সট্রা অর্ডিনারি পারফরম্যান্স করতে হবে।
জাতীয় দলের সাবেক এ নির্বাচক বলেন, ব্যাটিং-বোলিং দুই দিকে আমাদের খুব ভালো করতে হবে। খুবই শক্ত একটা গ্রুপে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচই শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সঙ্গে। তাই সব মিলিয়েই ভালো খেলতে হবে। ব্যাটিংয়ের টপ-অর্ডার ভালো করলে বা বোলিংয়ে নির্দিষ্ট ধাপে ভালো করলে হবে না। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভালো কিছু করতে হলে দলগত পারফরম্যান্স লাগবে।
খেলোয়াড়দের মানসিকতার পরিবর্তন ও ওয়ানডে আমেজ ফিরিয়ে আনতে বিসিবি অবশ্য ৮ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি- এ ৫ দিন লম্বা সময় অনুশীলনের ব্যবস্থা রাখে ক্রিকেটারদের। এরপর দুবাইতে গিয়েও অনুশীলন সেরে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচটা খেলতে নামেন শান্তরা। কিন্তু সেখানে নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি শান্ত-সৌম্য-হৃদয়রা।
নাজমুল হোসেন শান্তর দল এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তেমন কিছু করতে পারবে না, সে বার্তা আগেই দিয়ে রেখেছেন রিকি পন্টিং, এবি ডি ভিলিয়ার্সরা। তবে আশা ছাড়ছেন না অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। নিজের ফেইসবুক পেজে তিনি জানিয়েছেন, প্রস্তুতি ম্যাচে যাই হোক চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তারা কাঁপিয়ে দেবেন!
শান্ত লিখেছেন, বাংলাদেশের বাঘেরা গর্জন করতে প্রস্তুত আর ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে কাঁপিয়ে দেব। তৈরি হও বিশ্ব। একটা ঝড় আসছে। নিজের একটা ব্যাট তাক করা ছবিও দিয়েছেন শান্ত। তাতে মনে হচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সমালোচকদের উড়িয়ে দেয়ার অপেক্ষায় তিনি।
এদিকে শান্তর মতো বাংলাদেশকে নিয়ে আইসিসিও আশাবাদী। লাল সবুজ দলকে নিয়ে আবারও পোস্ট করেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। শান্ত, জাকের আলী, মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ বাংলাদেশের এ চার ক্রিকেটারের বিভিন্ন ভঙ্গিতে ছবি দিয়েছে আইসিসি। এরপর ক্যাপশন দিয়েছে, বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে গর্জন করতে প্রস্তুত। এখন দেখার বিষয় মাঠে কতটা পারফর্ম করতে পারে টাইগাররা।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।