Apan Desh | আপন দেশ

বিসিবির বিরুদ্ধে বোমা ফাটালেন হাথুরুসিংহে

ক্রীড়া ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৪৬, ২১ এপ্রিল ২০২৫

বিসিবির বিরুদ্ধে বোমা ফাটালেন হাথুরুসিংহে

বাংলাদেশ দলের সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের পছন্দের ব্যক্তি ছিলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। যে কারণে দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পেয়েছিলেন এ শ্রীলঙ্কান। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল খেলোয়াড়কে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার। তবুও নতুন করে তার চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছিল বিসিবি। তবে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর তৎকালীন সভাপতি পাপন দেশ ছেড়ে পালালে হাথুরুরও বিদায় ঘন্টা বেজে উঠে। 

পাপন পদত্যাগ করলে বিসিবির নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন ফারুক আহমেদ। এরপর ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভরাডুবি ঘটে বাংলাদেশের। তারপর হাথুরুও আর টেকেননিও। তার বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ আনে বিসিবি। একটি ছিল ‘মিসকনডাক্ট উইথ প্লেয়ার’, আরেকটি ছিল ‘মিসকনডাক্ট এজ এমপ্লয়ি।’ ২৩ বিশ্বকাপের ঘটনা বাদেও চুক্তির সময়কালে নির্ধারিত ছুটির চেয়ে বেশি ছুটি কাটানোর অভিযোগ ছিল হাথুরুর বিরুদ্ধে। সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানিয়েছিলেন ফারুক।

২০২৩ বিশ্বকাপের ঘটনার তদন্ত রিপোর্টে খেলোয়াড়কে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি উল্লেখ ছিল বলে জানান ফারুক। এছাড়া তিনি নিজে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টির ব্যাপারে নিশ্চিত হন বলেও জানিয়েছিলেন বোর্ড সভাপতি। অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান কোচ হিসেবে ফিল সিমন্সকে নিয়োগ দেয় বিসিবি।

হাথুরুকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলে হাথুরু তার জবাবও দিয়েছিলেন। যদিও সে জবাবকে অগ্রহণযোগ্য এবং অসন্তোষজনক হিসেবে আখ্যায়িত করে তার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে বিসিবি। পরে প্রধান কোচের দায়িত্ব দেয়া হয় সিমন্সকে। এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচের দায়িত্বে আছেন ফিল সিমন্স।
 
বিসিবি থেকে অব্যাহতি দেয়ার প্রায় ৭ মাস পর এসে বাংলাদেশ থেকে বিদায় নেয়ার সময়ের কথা নিয়ে বোমা ফাটিয়েছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। অজি গণমাধ্যম কোড স্পোর্টসকে হাথুরু জানান, আমার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের সিইওর (বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী) শেষ কথাটি ছিল, আমার চলে যাওয়া উচিত। এ ব্যাপারে বোর্ডের কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। আপনার কাছে কি (বিমানের) টিকিট আছে?” এটা আমার কাছে একটা সতর্কীকরণ সংকেত মনে হলো। তখনই আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম।

হাথুরুসিংহে আরও বলেছেন, সাধারণত সে দেশে (বাংলাদেশে) ভ্রমণের সময় আমি একজন গাড়িচালক এবং একজন বন্দুকধারী পেতাম। সেদিন তিনি বললেন, আপনার সঙ্গে কি আজ বন্দুকধারী এবং গাড়িচালক আছেন? আমি বললাম, না, আমার সঙ্গে শুধু গাড়িচালক আছেন।

এরপর টাকা তোলার জন্য ব্যাংকে যান হাথুরুসিংহে। সেখানের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে হাথুরু বলেন, আমি সরাসরি ব্যাংকে গিয়েছিলাম, দেশ ছেড়ে যাওয়ার জন্য টাকা তোলার চেষ্টা করছিলাম। আমি যখন ব্যাংকে ছিলাম, তখন টিভিতে একটি ব্রেকিং নিউজ যাচ্ছিল, চন্ডিকাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তিনি একজন খেলোয়াড়কে লাঞ্ছিত করেছেন। যখন এ খবর এলো, তখন ব্যাংক ম্যানেজার বললেন, কোচ, আমাকে আপনার সঙ্গে যেতে হবে। লোকেরা আপনাকে রাস্তায় দেখলে সেটা আপনার জন্য নিরাপদ হবে না।

হাথুরু আরও বলেন, তখন আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়ি, কারণ আমাকে দেশ থেকে চলে যেতে হবে। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের মধ্যরাতের ফ্লাইটের জন্য এক বন্ধু আমাকে বিমানবন্দরে নিয়ে গেল এবং আমি একটি টুপি ও একটি হুডি পরে গেলাম, সেখানে কোনো নিরাপত্তা নেই।

স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের পতনের পর তাদের দোসরদের অনেককেই গ্রেফতার করা হচ্ছিল। সেসব ঘটনা দেখে গ্রেফতারের ভয় মনে ঢুকে গিয়েছিল হাথুরুরও। তিনি জানান, দেশ ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করার জন্য তারা আমাকে বিমানবন্দরে গ্রেফতার করতে পারত। একটা ঘটনা ঘটেছিল যে, আগের সরকারের একজন মন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছিলেন, রানওয়েতে বিমানটি থামিয়ে তাকে বের করে আনা হয়। এসব আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল। তারপর প্রবেশপথে এক্স-রে মেশিনে, বিমান বাহিনীর একজন কর্মকর্তা আমাকে বললেন, আমি দুঃখিত কোচ, আমি খুব দুঃখিত যে, আপনি চলে যাচ্ছেন (আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন)। আমি আমার প্রাণ নিয়ে ভয়ে ছিলাম এবং তিনি বলেছিলেন যে, আমি তাদের দেশের জন্য অনেক কিছু করেছি।

হাথুরুসিংহে আরও বলেছেন, এটাই (ক্রিকেট) সবকিছু, কারণ এটাই আমার ক্যারিয়ার। তারা আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে অভিযোগ এনে আমার ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দিয়েছে।

খেলোয়াড়কে শারীরিক হেনস্থার অভিযোগ প্রসঙ্গে হাথুরু জানিয়েছেন, আমি কখনও কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গে ঝগড়া করিনি। খেলোয়াড়দের সঙ্গে আবেগ দেখাই না আমি। হয়তো হতাশা থেকে আমি একটি ডাস্টবিনে লাথি দিয়েছি, যে কোনো কোচের ক্ষেত্রেই এমনটা হয়। কিন্তু যা হয়েছে, তার থেকে এটা একেবারেই আলাদা। এটা আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। আমি জানি না অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত কত সুযোগ আমি হারিয়েছি। তারা কেবল আমার চুক্তি বাতিল করার চেষ্টা করেছে। নতুন সভাপতির পূর্বপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত ছিল এটা।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়