সংবাদ সম্মেলনে আবেগ আপ্লুত তামিম ইকবাল
তিনি তামিম ইকবাল খান, তর্কাতিতভাবেই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান এবং সেরা ওপেনার। ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখার পর থেকেইে আপন আলোয় উদ্ভাসিত ছিলেন।
বাবা (ইকবাল খান), চাচা (আকরাম খান) ও বড় ভাই নাফিস ইকবালের পথ অনুসরণ করে ক্রিকেটে আসা এই ব্যাটসম্যানকে ছাড়া বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস কল্পনাও করা যাবে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশকে বর্তমান অবস্থানে তুলে আনতে যে অল্প কয়েকজন ক্রিকেটারের অসামান্য অবদান রয়েছে, তার মধ্যে তামিম ইকবাল অন্যতম।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর গত ১৬ বছর বেশ দাপটের সঙ্গেই এ দেশের ক্রিকেটকে শাসন করতে পারলেও বারবার ইনজুরির কবলে পড়ায় সম্প্রতি ফর্ম ভালো যাচ্ছিল না এই মারকুটে ওপেনারের। সেই সঙ্গে ফিটনেসও ভালো না থাকায় দলের কোচ এবং বোর্ড কর্মকর্তাদেরও রোষানলে পড়েছিলেন।
এ অবস্থায় বুধবার চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম ওয়ানডেতে কোচ ও বোর্ড কর্মকর্তাদের আপত্তি সত্ত্বেও খেলতে নামেন। তবে চোটের কারণে শুরু থেকেই ধুকতে দেখা যায় তাকে। বিদায় নেন মাত্র ১৩ রানেই। দলও হারে বৃষ্টি আইনে। এরপর তার বিরুদ্ধে সরব হন বোর্ড কর্মকর্তারা এবং কোচ হাতুরাও। যা হজম করতে পরেননি তামিম। ফলে ক্ষোভ ও অভিমানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে অবসরের আকষ্মিক ঘোষণা দেন আজ (বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই)। নিজ শহরে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই গোষনা দেওয়ার সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে তামিম বলেন, ‘এটাই অবসর নেয়ার সেরা সময়।’
এক নজরে তামিম ইকবালের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার: ২০০৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি, হারারে স্পোর্টস ক্লাবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডেতে অভিষেক। এরপর ২০০৮ সালের ৪ জানুয়ারি, ডানেডিনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক। আর টি-টোয়ন্টিতে অভিষেক ২০০৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর, নাইরোবির জিমখানা স্টেডিয়ামে কেনিয়ার বিপক্ষে।
ব্যাটিং রেকর্ড: ওয়ানডেতে ২৪১ ম্যচে করেছেন ৮৩১৩ রান, সর্বোচ্চ ১৫৮, গড় ৩৬.৬২, স্ট্রাইক রেট ৭৮.৫৪, ১৫ সেঞ্চুরি এবং ৫৬ হাফ সেঞ্চুরি। ওয়ানডেতে তার চেয়ে রানে এগিয়ে নেই কেউ। আর ফিল্ডিংয়ে ক্যাচ নিয়েছেন ৬৮টি, যা বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
টেস্টে ৭০ ম্যাচে করেছেন ৫১৩৪ রান, সর্বোচ্চ ২০৬। গড় ৩৮.৩৯, সেঞ্চুরি ১০টি এবং হাফ সেঞ্চুরি ৩১টি। এই ফরম্যাটে তার সামনে আছেন শুধু মুশফিকুর রহিম (৫৫৫৩ রান)। তবে এ জন্য তাকে খেলতে হয়েছে তামিমের চেয়ে ১৬ টি ম্যাচ বেশি। আর ফিল্ডিংয়ে ক্যাচ নিয়েছেন ২০টি।
৭৮ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে করেছেন ১৭৫৮ রান, সর্বোচ্চ ১০৩*, গড় ২৪.০৮, স্ট্রাইক রেট ১১৬.৯৬। এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে একমাত্র সেঞ্চুরির মালিকও তিনি। ১টি সেঞ্চুরির সঙ্গে রয়েছে ৭টি হাফ সেঞ্চুরিও। আর ক্যাচ নিয়েছেন ১৮টি। এই ফরম্যাটে তামিম বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ২১২২ রান নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন মাহমুদুল্লাহ এবং ২৩৪৫ রান নিয়ে শীর্ষে সাকিব আল হাসান।
পার্টনারশিপ রেকর্ড: টেস্ট: ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনায় প্রথম উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ ৩১২ রান করেছিলেন তামিম ইকবাল এবং ইমরুল কায়েস। ওপেনিংয়ে তামিমের প্রিয় পার্টনারও ছিলেন এই ব্যাটসম্যান।
ওয়ানডে: ২০২০ সালে সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম উইকেটে ২৯২ রানের জুটি গড়েন তামিম ইকবাল এবং লিটন দাস।
টি-টোয়েন্টি: ২০১২ সালে মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ ১৩২* রান করেন তামিম ইকবাল এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
অধিনায়ক তামিম: টেস্ট: ১ ম্যাচ, জয়: নাই, পরাজয়: ১। ওয়ানডে: ৩৭ ম্যাচে জয়: ২১, পরাজয়: ১৪, ফল হয়নি: ২টির।
বিশ্ব রেকর্ড: ওয়ানডে ক্রিকেটে কোনো নির্দিষ্ট ভেন্যুতে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করার রেকর্ড তামিম ইকবালের। মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৮৫ ম্যাচ খেলে ২৮৫৩ রান করেন তিনি। এর মধ্যে সেঞ্চুরি ৫টি। মজার বিষয় হলো, এ তালিকায় শীর্ষ তিনজনই বাংলাদেশের। তামিমের পর রয়েছেন মুশফিকুর রহিম (৯৫ ম্যাচে ২৬৬৬ রান) এবং সাকিব আল হাসান (৮৯ ম্যাচে ২৬৫৬ রান)। চতুর্থ স্থানে রয়েছে শ্রীলংকার বিশ্বকাপ জয়ী তারকা ব্যাটসম্যান সনৎ জয়সুরিয়া। কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে তিনি করেছেন ৭১ ম্যাচে ২৫১৪ রান।
এছাড়া ওয়ানডে ক্রিকেটে ৬ষ্ঠ সর্বকনিষ্ট ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি রয়েছে তামিমের। ২০০৮ সালে মিরপুরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯ বছর ২দিন বয়সে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। সেদিন তার ব্যাট থেকে এসেছিল ১২৯ রানের ঝকঝকে ইনিংস।
আপন দেশ/এমএমজেড
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।