ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে গণভবনে ডেকে পাঠান। পরে অভিমান ভুলে অবসরের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেন ড্যাশিং এ ওপেনার।
বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) ক্রিকেট বোর্ডকে না জানিয়ে ব্যক্তিগতভাবে সংবাদ সম্মেলন ডেকে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম ইকবাল। অপ্রত্যাশিত সেই ঘোষণার এক দিন পর ওয়ানডে অধিনায়ককে দলে ফেরান স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্ত্তজার হস্তক্ষেপে তামিমকে গণভবনে ডেকে নিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী।
তামিমের অবসর ঘোষণার পরপরই ধারণা করা যাচ্ছিল, ক্ষোভ কিংবা অভিমানে এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন ওয়ানডে অধিনায়ক। তবে ক্রিকেট বোর্ডেরও তেমন কিছু করার ছিল না। কারণ, অশ্রুসিক্ত বিদায়ের পর তামিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে বোর্ড। শেষমেশ মাশরাফী তামিমকে নিয়ে যান গণভবনে।
গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অনেক বিষয়ে কথা হয়েছে তামিমের। দেশের ক্রিকেট এবং ক্রিকেট দলের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে তাদের। এর আগেও বিভিন্ন সময় দেশসেরা ওপেনারের সঙ্গে আলোচনা হলেও এবার আলোচনাটা তামিমের কাছে বিশেষ। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা তাকে দারুণভাবে ছুঁয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন এই অধিনায়ক।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঘণ্টা তিনেকের বৈঠক শেষে সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশের একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন তামিম ইকবাল। সেখানে এই তিন ঘণ্টার অনেক বিষয়ের পাশাপাশি অবসরের পরের অনেক ঘটনা নিয়ে কথা বলেছেন তামিম।
তামিম বলেন, চট্টগ্রাম থেকে সকালেই ফিরে আসি ঢাকায়। আমার ফোন কখনো বন্ধ আবার কখনো ‘আনরিচেবল’ অবস্থায় ছিল। সত্যি বলতে, অবসরের ঘোষণা দেয়ার পর এত এত ফোন, মেসেজ–এসব ভালো লাগছিল না। পরিবারের সঙ্গে একটু নিজের মতো থাকতে চাচ্ছিলাম। কখনো কখনো ফোন খুলেছি বটে, তবে কারো কল বা মেসেজে সেভাবে সাড়া দিইনি। তবে মাশরাফি ভাইয়ের কল তো ইগনোর করার কোনো উপায়ই নেই। অবসরের ঘোষণার পর ভাইয়ের সঙ্গে মেসেজে কথা হয়েছিল। শুক্রবার দুপুরে আবার তার ফোন পেলাম। ভাই বললেন, কীরে, প্রধানমন্ত্রী তোকে খুঁজতেছে, তোর কোনো খবর নাই! আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম। এ রকম একটা খবর ছড়িয়ে পড়েছিল, সাংবাদিকদের কয়েকজন আমার কাছে জিজ্ঞেস করেছিলেন। আমি তো হেসেই উড়িয়ে দিয়েছি। কারণ, আসলে এ রকম কিছু হয়নি। মাশরাফি ভাই বলার পর বললাম, কোথায়, আমি তো জানি না! উনি তখন বললেন যে প্রধানমন্ত্রী ওনাকে বলেছেন। ভাই আমাকে বললেন দ্রুত রেডি হতে।
গণভবনে ঢোকার পরের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তামিম বলেন, দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে আমরা যাই গণভবনে। কক্ষে পা দেয়ামাত্র প্রধানমন্ত্রী আমাকে বললেন, কী তামিম, কীসব পাগলামো নাকি করছো! এসব করলে তো চলবে না। সবকিছু মাথা থেকে সরিয়ে ফেলো…। তিনি সবসময় এত আন্তরিকতা নিয়ে কথা বলেন, কোনো জবাব থাকে না। আমি শুধু হাসলাম।
অবসর বিষয়ে আলোচনার প্রসঙ্গে তামিম বলেন, শুরুতে মাশরাফি ভাইয়ের সামনে আমার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। পরে আলাদা করে কথা বলেছেন, সেখানে আমি আর আয়েশা ছিলাম শুধু। পাপন ভাই আসার পরও একসঙ্গে সবার কথা হয়েছে। তবে দুই ঘণ্টার বেশি সময় মনে হয় আলাদা করেই কথা বলেছেন আমার সঙ্গে। আমার অবসরের কারণ আমি ব্যাখ্যা করেছি ওনার কাছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেক কিছুও বলেছি, যতটা সম্ভব। উনি সময় নিয়ে মনোযোগ দিয়ে সব শুনেছেন, প্রশ্ন করেছেন, নিজে থেকে অনেক কিছুই জানতে চেয়েছেন। খুব আন্তরিকভাবেই সবকিছু শুনেছেন, কথা বলেছেন।
রাগ-অভিমান কিংবা ভুল বোঝাবুঝির প্রসঙ্গে তামিম বলেন, ফিটনেস নিয়ে মিডিয়ায় কথা বলার প্রসঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। আমি পাপন ভাইয়ের সামনেই বলেছি যে আমি তো কোচের সঙ্গে কথা বলেই সংবাদ সম্মেলনে গিয়ে কথা বলেছি। কোচ তো কনভিন্সড ছিলেন। এরপর পাপন ভাই একটি মিডিয়াকে যেভাবে বলেছেন, সেটি আমার খারাপ লেগেছে। তাকে হয়তো কেউ ভুল তথ্য দিয়েছে। তবে পাপন ভাইয়ের সেই কথাই যে অবসরের কারণ নয়, প্রধানমন্ত্রী তা বুঝতে পেরেছেন। উনি বলেছেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু খেলায় ফিরতে হবে। শুধু তা-ই নয়, চট্টগ্রামে-যে লোকে মিছিল করছে, অনেকে কান্নাকাটি করেছে, এসব ছবি-ভিডিও দেখে প্রধানমন্ত্রী বললেন, দেখো, শুধু আমার কথা নয়, মানুষের কথা ভাবো। কত মানুষ তোমাকে ভালোবাসে। সেটির মূল্য দিতে হবে না? দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন এভাবে বলেন, এরপর তো আর কিছু বলার থাকে না।
আপন দেশ/আরএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।