টাইগারদের হারিয়ে আফগান ক্রিকেটারদের উল্লাস
চট্টগ্রামে সিরিজ বাঁচানোর লক্ষ্যে নেমে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের কাছে পাত্তাই পায়নি লিটন দাসরা, হেরেছে ১৪২ রানের বিশাল ব্যবধানে। টাইগারদের এই হারে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করেছে আফগানিস্তান।
প্রথম ওয়ানডেতে বৃষ্টি আইনে হার। তাতে কিছুটা আক্ষেপ ছিল, যদি পুরো খেলা হতো! তবে আজকের ম্যাচে আর সেই আক্ষেপের সুযোগ নেই। ম্যাচের শুরু থেকেই দাপট দেখিয়ে টাইগারদের ধরাশয়ী করেছে আপগানরা।
টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটে ৩৩২ রানের পাহাড় গড়ে। এর মধ্যে ওপেনিং জুটিতেই আসে ২৫৬ রান। ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান আর রহমানুল্লাহ গুরবাজ দুজনেরই তুলে নেন সেঞ্চুরি।
পরে আফগানিস্তানের রানপাহাড় অতিক্রমে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুর দিকেই উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের বড় হার নিশ্চিত হয়ে যায়। ৩৩২ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে রশিদ-নবিদের তোপে ৭২ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে বসে টাইগাররা। তারপর কেবল পরাজয়ের ব্যবধান কমানোর চেষ্টা।
পরে সপ্তম উইকেটে মুশফিকুর রহিম আর মেহেদি হাসান মিরাজ মিলে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। গড়েন ১০৮ বলে ৮৭ রানের লড়াকু এক জুটি। তাদের সেই জুটিটি পর্যন্ত ভাঙেন আফগান অফস্পিনার মুজিব। তাকে তুলে মারতে গিয়ে লংঅনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন মিরাজ। ৪৮ বলে তার ২৫ রানের ইনিংসে ছিল ২টি বাউন্ডারি।
এর আগে বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকে বাংলাদেশ। প্রথম ওভারে আফগান ফজলহক ফারুকির বলে নাইম শেখ কোনো রানই করতে পারেননি। ফলে মেইডেন দিয়ে শুরু হয় আফগান বোলিং। এরপর দ্বিতীয় ওভারেই স্পিনারেদের আক্রমণে নিয়ে আসেন আফগান অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শহিদি। তাকে টানা দুই বাউন্ডারি হাঁকান টাইগার অধিনায়ক লিটন দাস।
এরপরই বল প্যাডে লাগলে আফগানদের আবেদনে আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। তবে সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নিয়ে সে যাত্রায় বেঁচে যান লিটন দাস। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল প্যাডে আঘাত হানার সময় ব্যাটেও লেগেছে। তখন তার ব্যক্তিগত রান ছিল ৮।
তবে সেই জীবন পাওয়াকে কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। পরে আফগান পেসার ফারুকিকে পুল করতে গিয়ে মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন টাইগার অধিনায়ক। আউট হওয়ার আগে ১৫ বলে ৩ বাউন্ডারিতে করেছেন ১৩ রান।
এরপর নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হন ১ রান করেই। মুজিব উর রহমানের ঘূর্ণি বল বুঝতে না পারায় স্টাম্প উড়ে যায়। তার বিদায়ের পর ২৭ বলে ৯ করেন দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা নাইম শেখ, তার স্টাম্প পড়েছে ফারুকির বলে। এভাবে ২৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে বাংলাদেশ।
এই অবস্থায় অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান আর তরুণ তাওহিদ হৃদয় সেই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ৫০ বলে তাদের ৪০ রানের জুটিতে ভাঙন ধরান রশিদ খান নিজের প্রথম ওভারেই। তার দুর্দান্ত গুগলি বুঝতে না পেরে বোল্ড হন হৃদয়। ৩৪ বলে ২ বাউন্ডারিতে ১৬ রান করেন তিনি।
তার বিদায়ের পরও চাপের মুখে সাকিব খেলছিলেন দায়িত্ব নিয়েই। কিন্তু ১৮তম ওভারে আম্পায়ার্স কলে ফিরতে হয় তাকেও। মোহাম্মদ নবির বলে এলবিডব্লিউয়ের আবেদন হলে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায় বল প্রায় লেগস্টাম্প বেরিয়েই যেত, একটুখানি পেয়েছে। ফলে ২৯ বলে ৩ চারে সাকিবে ফেরেন ২৫ রানে।
পরের ওভারে 'গোল্ডেন ডাক' মারেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। রশিদ খানের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই বাঁহাতি। সেখান থেকে মিরাজ নিয়ে লড়াই শুরু করেন মুশফিক রহিম। তবে শেষ রক্ষা করতে পারেননি তারা। তাদের লড়াই যা একটু পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়েছে মাত্র।
এদিন মুশফিক তার ক্যারিয়ারের ২৫০তম ওয়ানডে খেলতে নেমেছিলেন। যা একটু লড়াই করেছেন তিনিই। শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হন ৬৯ রান করে, ফারুকির বলে। ফলে ৪৩.২ ওভারে বাংলাদেশ থামে ১৮৯ রানে। মুশফিকের ৮৫ বলের ইনিংসে ছিল ৬টি বাউন্ডারি। আর চোটের কারণে ব্যাটিংয়ে নামতে পারেননি এবাদত হোসেন।
এদিনে আফগানিস্তানের ফজলহক ফারুকি ও মুজিব উর রহমান নিয়েছেন ৩টি করে উইকেট। আর ২টি উইকেট রশিদ খানের।
চট্টগ্রামে প্রথম ওয়ানডেতে আগে ব্যাটিং নিয়ে সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে তাই টস জেতার পর প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেননি অধিনায়ক লিটন দাস। আফগানিস্তানকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান তিনি।
কিন্তু শুরু থেকেই তার সেই সিদ্ধান্তকে ভুল প্রমাণ করতে থাকেন দুই আফগান ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ এবং ইব্রাহিম জাদরান। ২৫৬ রান পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন ছিলেন তারা। দুজনেই সেঞ্চুরি করেছেন। তাদের আউট করতে রীতিমত ঘাম ঝরেছে টাইগারদের। শুধু জুটি গড়াই নয়, মারমুখী ব্যাটিংয়ে আফগানিস্তানকে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন এই দুই ওপেনার।
আরেকটু হলেই রেকর্ড হয়ে যেত। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে প্রথম উইকেটে সেরা জুটিটি ২৮২ রানের। ২০১৭ সালে কিম্বারলিতে হাশিম আমলা আর কুইন্টন ডি কক গড়েছিলেন এই রেকর্ড।
৩৭তম ওভারে সেই জুটি ভাঙেন সাকিব আল হাসান। সেঞ্চুরিয়ান গুরবাজকে এলবিডব্লিউ করে ফেরান তিনি। তার আগেই অবশ্য নিজের ক্যারিয়ারসেরা ১২৫ বলে ১৪৫ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন তিনি। ইনিংসটিতে ছিল ১৩ চার আর ৮টি ছক্কা। এটি তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি।
গুরবাজকে আউট হওয়ার পরের বলেই আরেকটি উইকেট পেতে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু রহমত শাহকে রানআউট করার সুযেগা মিস করেন মুশফিক। বল ধরার আগেই শরীর দিয়ে বেল ফেলে দেন। তবে রহমত শাহ জীবন পেয়েও সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। পরের ওভারে প্রথম বলেই এবাদত হোসেনকে পুল করে ফাইন লেগ বাউন্ডারিতে মোস্তাফিজুর রহমানের ক্যাচ হন তিনি (২)।
পরের ওভারে মেহেদি হাসান মিরাজ ফিরিয়ে দেন আফগান অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শহিদিকে। টাইগার অফস্পিনারকে সুইপ করতে গিয়ে ২ রানে বোল্ড হন শহিদি।
নাজিবুল্লাহ জাদরান স্লগে নামলেও ঠিক সুবিধা করতে পারেননি। ১৫ বল খেলে ১০ রান করে মিরাজকে তুলে মারতে যান। লংঅনে সহজ ক্যাচ নেন লিটন।
এ অবস্থায়ও ইব্রাহিম জাদরান অবশ্য সেঞ্চুরি তুলে নিতে ভুল করেননি। ১১৯ বলে ৯ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় ১০০ করে আউট হন তিনি। ৪৩ রানের মধ্যে ৫ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ।
এরপর রশিদ খান ৬ করে সাকিবকে এগিয়ে মারতে গিয়ে মুশফিকের স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হয়ে বিদায় নেন। এরপর টেল এন্ডারদের আর বাড়তে দেননি মোস্তাজি-হাসান মাহমুদরা।
২টি করে উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, সাকিব আল হাসান আর মেহেদি হাসান মিরাজ।
আপন দেশ/এমএমজেড
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।