Apan Desh | আপন দেশ

শেয়ার বাজার টালমাটাল, কেমন যাবে আগামী

মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান

প্রকাশিত: ২১:২৩, ১৭ মার্চ ২০২৪

আপডেট: ১৭:২৬, ১৮ মার্চ ২০২৪

শেয়ার বাজার টালমাটাল, কেমন যাবে আগামী

ছবি: আপন দেশ

জাতীয় নির্বাচন ঘিরে আতঙ্ক ছিল; তা আপাতত কেটে গেছে। অর্থনীতির ওপর স্যাংশনের আওয়াজ ছিল; সেটাও নেই। বাজারে যোগ হয়েছে নতুন নতুন কোম্পানি। এদিকে বাজারের গতি স্বভাবিক রাখতে তুলে দেয়া হয় ফ্লোর প্রাইস। কিন্তু আশায় গুড়েবালি। উল্টো শুরু হয়েছে অস্থিরতা? ঈদের আগে বাজার যেন টালমাটাল।

মূল্য সূচক ও টাকার অঙ্কে লেনদেন প্রায় তলানিতে। এ ক্ষত কাটতে না কাটতেই নতুন উপসর্গ দেখা দিয়েছে। শেয়ার বাজার নীতি নির্ধারকদের ঘনঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন অস্থিরতায় ঘি ঢেলেছে। এরই মধ্যে আইএমএফ নামক আরেক আতঙ্ক ভর করেছে। জারি করেছে নতুন বিধি। সে বিধির আগাগোড়া বুঝতে পারছে না খোদ মার্চেন্ট ব্যাংকারাও। সাধারণ তো বাদই দিলাম।

গেল সপ্তায় বাজার থেকে উধাও ৬৬ হাজার কোটি টাকা। তাহলে কেমন হবে আগামীর শেয়ার বাজার? এ নিয়ে শুধু সাধারণ বিনিয়োগকারীরই নয়, অর্থনীতিবিদসহ বাজার বিশ্লেষকরাও উদ্বিগ্ন।

তবে তিনপক্ষই ধারণা থেকে দোষারোপ করছেন নীতি নির্ধারকদের। বাজারের নীতি নির্ধারক বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)। অভিযোগ উঠেছে, একই বিষয়ে ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন, নানা রকম গুজবে শেয়ার বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

বিএসইসির প্রতি বাজার সংশ্লিষ্টদের যে প্রত্যাশা তার ধারে-কাছেও যেতে পারেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। উল্টো বাজার সহায়তাকারী রেগুলেটরি বোর্ড ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে (ডিএসই) দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে সক্ষমতা আর সহযোগিতা নিয়ে। ঘরের প্রবল দ্বন্দ্ব প্রকাশ পেয়েছে বাইরে। ফলে নেতিবাচক সে প্রভাবটাও পড়েছে বাজারে। তাহলে বাজারের হাল ধরবে কে? গতি ফেরাবে কে? কার দিকে তাকাবে বিনিয়োগকারীরা? হতাশায় বাজারবিমুখ হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।  

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও দ্বিতীয় শেয়ার বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। উভয় শেয়ার বাজারে বিদায়ী সপ্তাহে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর ছিল নিম্নমুখী। সূচক কমেছে ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে। শেয়ার বাজারের এ দৈন্যদশায় দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা। ইতোমধ্যে ‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ার নিয়ে বিএসইসির ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন এনেছে। আতঙ্কে সেসব শেয়ারের দিকে তাকাচ্ছেই না বিনিয়োগকারীরা।

আরও পড়ুন>> সপ্তাহ গেল পতনে, উধাও ৬৬ হাজার কোটি টাকা

বাজারের এমন নাজুক পরিস্থিতিতে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল মনিটিরি ফান্ডের (আএমএফ) মতামত খড়গ। ঋণদাতা সংস্থাটি শেয়ার বাজার থেকে আয়ের উপর কর ছাড় বাতিলের পক্ষে মত দিয়েছেন। এছাড়াও সরকারি সিকিউরিটিজ, মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট, পাবলিকলি লিস্টেড সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও কর ছাড় বাতিল অথবা কমিয়ে আনার কথাও বলেছে আইএমএফ। হতাশাগ্রস্থ বাজারে আইএমএফের এমন মতামতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

তারা বলছেন, বাজার থেকে প্রায় সকল ধরনের আয়ের বিপরীতে কর দিচ্ছেন। ব্যক্তি পর্যায়ে ডিভিডেন্ড গেইনের ওপর ২৫ শতাংশ, প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ, ক্যাপিটাল গেইনের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ১০ শতাংশ কর প্রদান করতে হয়। বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ কর দিয়ে সিকিউরিটিজের লেনদেন করতে হয়। তবে ক্যাপিটাল গেইনের ক্ষেত্রে ক্যাটাগরি অনুযায়ী বিনিয়োগকারীরা কর ছাড় পান। আর জিরো কুপন বন্ডের ক্ষেত্রে কর ছাড় রয়েছে। 

এছাড়া শেয়ার বাজার থেকে বিনিয়োগকারীদের ৯৫ শতাংশ আয়ের বিপরীতে সরকারকে কর প্রদান করতে হয়। তাহলে কেনো আইএমএফ এমন মতামত দিয়েছে? তাদের মতে, এতো সব নেতিবাচক ঘটনায় চলতি সপ্তাহে বাজার কেমন যাবে তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, চলতি বছরের শুরু থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মোট পাঁচটি কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। কোম্পানিগুলো শেয়ার ছেড়ে মোট ৫৬৬ কোটি টাকা বাজার থেকে উত্তোলন করেছে। যার মধ্যে, এরআরবি ব্যাংক ১০০ কোটি টাকা, শিকদার ইন্স্যুরেন্স ১৬ কোটি টাকা, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ ৯৫ কোটি টাকা, বেস্ট হোল্ডিংস সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা ও ওয়েব কোটস ৫ কোটি টাকা উত্তেলন করেছে। কোম্পানিগুলো শেয়ার ছেড়ে বাজারকে কিছুটা গতিশীল করেছে। তবে কোম্পানিগুলোর যদি বছর শেষে পারফর্মেন্স খারাপ হয়, সেক্ষেত্রে শেয়ারগুলো থেকে বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। যার নেতিবাচক প্রভাব বাজারে আগামীতে পরতে পারে।

আরও পড়ুন>> শেয়ার কেলেঙ্কারীতে দন্ডপ্রাপ্ত সেই এনআরবি ব্যাংক বাজারে! 

অর্থনীতিবিদ এ. বি. মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম আপন দেশকে বলেন, আইএমএফের শর্তের সঙ্গে আমি একমত নই। শেয়ার বাজার এমনিতেই ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। সংস্থাটির এমন শর্ত বিনিয়োগকারীদের মনে ভীতির সঞ্চার হতে পারে। আমি বাজারে ঘন ঘন প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) আসার পক্ষে। তবে সে আইপিও যেন ভালো হয়। কারণ যত বেশি ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হবে তত বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্র তৈরি হবে। বিনিয়োগের জন্য বিনিয়োগকারীরা নতুন নতুন কোম্পানি পাবে। যা বাজারকে ত্বরান্বিত করবে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান আপন দেশকে বলেন, বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বাজার থেকে ৯৫ শতাংশ আয়ের বিপরীতে কর প্রদান করে থাকি। তাহলে এখানে কর অব্যাহতি বাতিলের বিষয়টি আসছে কেন? বিভিন্ন গণমাধ্যম আইএমএফের বক্তব্যটি তুলে ধরেছে। কিন্তু সংস্থাটির মতামতের সঙ্গে বাস্তবতা যে ভিন্ন, সেটি তুলে ধরেনি। এতে করে বিনিয়োগকারীদের মনে প্যানিক সৃষ্টি হতে পারে। তারা ভাবতে পারে তাদের উপর নতুন করে আবার কি চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে? তাদের এ ভাবনা আগামীতে বাজারের জন্য খারাপ বই ভালো হবে না।

আপন দেশ/টি/এবি/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়