Apan Desh | আপন দেশ

বাজেট ঘিরে গুঞ্জনই কি শেয়ার বাজারে দরপতন?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:৩৪, ৩ জুন ২০২৪

বাজেট ঘিরে গুঞ্জনই কি শেয়ার বাজারে দরপতন?

ফাইল ছবি

শেয়ার বাজারে আরও একটি মে মাস কাটল হতাশায়। বিনিয়োগকারীদের জন্য মাসটি ছিল খুবই খারাপ একটি মাস। ২০১৮ সালের পর এ রকম খারাপ মে মাস আর দেখতে হয়নি বিনিয়োগকারীদের। সেই হিসাবে শুধু মে মাস বিবেচনায় গত ছয় বছরের মধ্যে চলতি বছরের মে মাসটিই ছিল সবচেয়ে সংকটময়।

দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত মে মাসের ১৯ কার্যদিবসের মধ্যে ১৪ দিনই বাজারে শেয়ারের দাম কমেছে। দাম বেড়েছে মাত্র ৫ দিন। এর আগে সর্বশেষ ২০১৮ সালের মে মাসে ২১ কার্যদিবসের মধ্যে ১৮ দিনই বাজারে দরপতন হয়েছিল, দাম বেড়েছিল মাত্র ৩ দিন। এ কারণে গত মে মাসকে শেয়ার বাজারের জন্য ‘খারাপ মাস’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মে মাসের ১৯ কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩৩৩ পয়েন্ট বা প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ কমেছে। মে মাসের শুরুতে ডিএসইএক্স সূচকটি ছিল ৫ হাজার ৫৮৫ পয়েন্টের অবস্থানে। গত বৃহস্পতিবার সর্বশেষ কার্যদিবসে ডিএসইএক্স সূচকটি কমে দাঁড়ায় ৫ হাজার ২৫২ পয়েন্টে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবছর বাজেট সামনে রেখে মে মাসে শেয়ার বাজারে কিছুটা অস্থিরতা বিরাজ করে। বাজেটে শেয়ার বাজারের জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ থাকবে—এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় বাজেটের আগের মাস হিসেবে মে মাসে এ অস্থিরতা বিরাজ করে। তবে গত সাত বছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ২০১৮ সালের পর এবারই বাজেটের আগের মাসে সবচেয়ে বেশি সংকটে ছিল শেয়ার বাজার। 

এরপর ২০১৯ সালের মে মাসে মোট ২১ দিন লেনদেন হয়েছিল বাজারে। তার মধ্যে সূচক কমেছে ৯ দিন আর সূচকের উত্থান ঘটে ১০ দিন। বাকি দুই দিন সূচক অপরিবর্তিত ছিল। ২০২০ সালে করোনার কারণে পুরো মে মাস শেয়ার বাজারে লেনদেন বন্ধ ছিল। ২০২১ সালের মে মাসের ১৯ কার্যদিবসের মধ্যে ১৪ দিনই সূচক বেড়েছে। কমেছে মাত্র ৫ দিন। 

এছাড়া ২০২২ সালের মে মাসে ১৮ কার্যদিবসের মধ্যে ১১ দিন বাজারে দরপতন হয়েছিল। ওই মাসে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দিন। আর গত বছরের মে মাসে ২১ কার্যদিবসের মধ্যে ১০ দিনই বাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল। ওই মাসে দরপতন হয়েছিল ৯ দিন, বাকি ২ দিন সূচক অপরিবর্তিত ছিল।

আরও পড়ুন>> লোকসানে ১৮ খাতের বিনিয়োগকারীরা

২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের তুলনায় চলতি বছরের মে মাসই ছিল সবচেয়ে হতাশার। এমনিতেই গত ফেব্রুয়ারি থেকে বাজারে মন্দাভাব চলছে। তার মধ্যে বাজেট সামনে রেখে শুরু হয়েছে মূলধনি মুনাফার ওপর করারোপ নিয়ে একধরনের অনিশ্চয়তা। তাতে মে মাসজুড়ে বাজারে ধারাবাহিক দরপতন হয়েছে। 

দৈনিক প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী বাজেটে শেয়ার বাজার থেকে নির্দিষ্ট সীমার বেশি মূলধনি আয় বা ক্যাপিটাল গেইন হলে তার ওপর করারোপের পরিকল্পনা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এনবিআরের এ পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে। 

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী বাজেটে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মূলধনি আয়ের ওপর নতুন করে করারোপ করা হলে সেটি হবে বাজারের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। এজন্য ডিএসই কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন করে শেয়ার বাজারে কোনো ধরনের কর আরোপ না করতে সরকার ও এনবিআরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

জানতে চাইলে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ব্যাংক খাতে ট্রেজারি বিলের সুদহার ১৩ শতাংশের ওপরে উঠেছে। ব্যাংকগুলো সাড়ে ৮ শতাংশের বেশি সুদে বিদেশে থাকা লোকজনের কাছ থেকে ডলারে আমানত সংগ্রহ করছে। আর ব্যাংকে সাধারণ আমানতের সুদহার ১০ শতাংশের কাছাকাছি। এ যখন পরিস্থিতি, তখন বেশি সুদে নিরাপদ বিনিয়োগের সুযোগ ছেড়ে কেউ শেয়ার বাজারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগে আসবে না—এটাই স্বাভাবিক। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও এখন শেয়ার বাজারের চেয়ে ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগে বেশি মুনাফা পাচ্ছে। সব মিলিয়ে তাই শেয়ার বাজারে হতাশা বিরাজ করছে; যার প্রভাবে টানা দরপতন চলছে।

ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী আরও বলেন, বাজার যেখানে নেমেছে, তাতে দরপতনের আর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। এখন বিনিয়োগকারীরা ভয় ও আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। বাজেট ঘিরে নানা পদক্ষেপের গুঞ্জনে এ ভয় আরও বেড়েছে।

আপন দেশ/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়