Apan Desh | আপন দেশ

২০ কোম্পানির শেয়ারে মতিউরের বিশাল প্লেসমেন্ট বাণিজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:১৩, ২৪ জুন ২০২৪

২০ কোম্পানির শেয়ারে মতিউরের বিশাল প্লেসমেন্ট বাণিজ্য

ছবি: সংগৃহীত

ছাগলকাণ্ডে দেশজুড়ে ভাইরাল ইফাতের বাবা ড. মতিউর রহমানের একের পর এক দুর্নীতির খবর বেরিয়ে আসছে। শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত এবং তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়ায় থাকা ২০ কোম্পানিতে তার প্লেসমেন্ট বাণিজ্যের খবর জানা গেছে। এসব কোম্পানিতে প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় নিজের ও স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, বোনসহ নিকটাত্মীয় এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানির নামে শেয়ার নেয়ার তথ্য মিলেছে। ২০১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এসব শেয়ার কেনেন তিনি।

শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি অনুমোদিত আইপিও প্রসপেক্টাস থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মতিউর রহমান নিজের ও স্বজনদের নামে যে পরিমাণ প্লেসমেন্ট শেয়ার নিয়েছেন, অভিহিত বা প্রকৃত মূল্য হিসাবে এসব শেয়ারের দাম অন্তত অর্ধশত কোটি টাকা। এর দু-একটি বাদে সব কোম্পানির শেয়ারই শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। তালিকাভুক্তির পর প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় নেয়া এসব শেয়ার উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে কয়েকশ কোটি টাকা মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।

বিভিন্ন সূত্রে থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, মতিউর রহমান প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় যেসব কোম্পানির শেয়ার নিয়েছেন, সেগুলো হলো– এক্‌মি পেসটিসাইডস (৩৮ লাখ শেয়ার), অনিক ট্রিমস (৫৩.১৯ লাখ), অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন (১০ লাখ), বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার (৭৫ হাজার), সিএনএটেক্স (১০.৩০ লাখ), ডমিনেজ স্টিল (১৫.৮০ লাখ), ই-জেনারেশন (৫০ হাজার), ফরচুন সুজ (৪৩.১০ লাখ), কাট্টলী টেক্সটাইল (২১ লাখ), ল্যুবরেফ (৮ লাখ);

মামুন এগ্রো (৩৭.৮৭ লাখ), এমএল ডাইং (১৬ লাখ), রিং সাইন (১০ লাখ), এসকে ট্রিমস (৯০ লাখ), টেকনো ড্রাগস (১.৫০ লাখ), ওয়েব কোস্টস (১৩.৯৭ লাখ) শেয়ার। প্যাসিফিক ডেনিম ও সিলভা ফার্মারও কিছু শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে এসকে ট্রিমস কোম্পানি নিজেই গড়েছেন মতিউর। তবে এর বাইরেও তার নামে আরও শেয়ার থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রাইভেট প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় এখন পর্যন্ত মতিউর নিজ নামে ১১ কোম্পানির শেয়ার নিয়েছেন। এসব শেয়ার নিতে আইল্যান্ড ও ইমতিয়াজ হোসাইন নামের দুইটি ব্রোকারেজ হাউস এবং শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট নামে একটি মার্চেন্ট ব্যাংকে খোলা তিনটি বিও অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেছেন তিনি।

এনআরবি ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের মালিক ও শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের মালিকদের একজনসহ চার-পাঁচজন নিয়ে মতিউর গড়ে তোলেন একটি সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই প্লেসমেন্ট শেয়ার বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির মালিকপক্ষকে ব্ল্যাকমেইল করে শেয়ার হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মতিউর রহমান নিজেই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, ফরচুন সুজের মালিক মিজানুর তার বন্ধু। তাকে ১০ টাকা দামের শেয়ার ৮ টাকা দরে দিয়েছেন। এ শেয়ার বিক্রি করেই ১৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছিলেন তিনি।

জানা গেছে, মতিউর রহমান শুধু তার নিজের নামে নেয়া শেয়ার বিক্রি করেই অন্তত ৫০ কোটি টাকা মুনাফা করেছেন। প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় স্ত্রীর নামে নেয়া শেয়ারগুলো তিনি এরই মধ্যে বিক্রি করে থাকলে অন্তত ২৫ কোটি টাকা আয় করেছেন।

মতিউর রহমান তার মেয়ে ফারজানা রহমান ঈপ্সিতার নামে তিন ব্রোকারেজ হাউসে তিনটি বিও অ্যাকাউন্ট খুলে প্লেসমেন্ট শেয়ার নিয়েছেন। প্রাইভেট প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় আট কোম্পানির ৬৪ লাখ শেয়ার নিয়েছেন তিনি। অভিহিত মূল্যে এসব শেয়ারের মোট মূল্য ৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা। 

এছাড়া তার বোন নূর বেগমের নামে দুটি বিও অ্যাকাউন্ট খুলে প্রাইভেট প্লেসমেন্ট শেয়ার নিয়েছেন। যার অভিহিত মূল্য ১০ টাকা দরে মোট ৫ কোটি টাকা।

আপন দেশ/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়