ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম
একটা শক্ত, সক্ষম, কার্যকর ও স্বচ্ছ শেয়ার মার্কেট আমরা উপহার দেয়ার অঙ্গিকার করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি পরিবর্তনের বাতাস বইতে শুরু করেছে। আশা করি সবার চেষ্টায় নতুন একটি গল্প আমরা তৈরি করতে পারব।
সোমবার (১১ নভেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে বণিক বার্তা আয়োজিত তৃতীয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। আয়োজনের বিষয় ছিল ‘বৈষম্য, আর্থিক অপরাধ ও বাংলাদেশের অর্থনীতির নিরাময়’।
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, আমরা অতীতে দেখেছি, আমাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা দুষ্কৃতিকারীদেরকে শাস্তি না দিয়ে অনেক ক্ষেত্রে তাদের সহযোগী হয়েছেন। আবার অনেকক্ষেত্রে তারাও দুষ্কৃতিকারী হয়েছেন। যার ফলে এ বাজার (শেয়ারবাজার) থেকে যারা পুঁজি সংগ্রহ করবেন বা পুঁজি জোগান দেবেন তারা আশা হারিয়েছেন। একইসঙ্গে আমাদের পুঁজিবাজার অর্থনীতিতে যে কার্যকর ভূমিকা রাখার কথা ছিল তা রাখতে পারেনি।
মমিনুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাজার মূলধন এবং জিডিপির অনুপাত এই মুহূর্তে ৮ শতাংশের নিচে। যেখানে আমাদের পার্শ্ববর্তী কিছু দেশ বিশেষ করে পাকিস্তানের প্রায় ১০ শতাংশ, শ্রীলঙ্কাতে ১৫ শতাংশ, ভিয়েতনামে ৪১ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়াতে ৪৪ শতাংশ এবং ভারতে এটির পরিমাণ ১২০ শতাংশ। তবে আশার কথা হচ্ছে, আমরা একটি পরিবর্তনের সুবাতাস পাচ্ছি। আমরা এমন একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছি যেখানে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য আমাদের একটি বিরল সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমাদের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের নতুন কমিশন গঠন করা হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে। রেগুলেটরি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। অতীতের অনিয়ম ও দুর্নীতিগুলো তদন্ত করার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। ফলে আমরা আশাবাদী যে একসঙ্গে কাজ করলে এই মার্কেটের বর্তমান দুর্দশা থেকে বেরিয়ে আসতে পারব।
তিনি বলেন, মার্কেট নিয়ন্ত্রণে যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করে তাদের অভ্যন্তরীণ দক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। সেবা প্রদানের যে দায়বদ্ধতা সেটি নির্ধারণ করার সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক প্রশাসন এবং বাজার নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতাও বৃদ্ধি করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, আমরা অতীতে দেখেছি রেগুলেটরি মার্কেটের দৈনন্দিন কার্যক্রমে অযাচিতভাবে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে আমাদের বাজার ব্যবস্থায় স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর ভূমিকা কি হবে সেটা নির্ধারণ করার সময় এসেছে। সেক্ষেত্রে আমাদের আঞ্চলিক সফল মার্কেটগুলো রয়েছে সেগুলোর অভিজ্ঞতা অনুসরণ করতে পারি। এই মুহূর্তে মার্কেট দুর্বল অবস্থায় আছে। ফলে স্বল্প সময়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায় সেটি ভাবতে হবে।
সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে মমিনুল ইসলাম বলেন, আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে নিয়ে আলোচনা করতে হবে। যেখানে আমাদের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে পারস্পরিক পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে সেটি নির্ধারণ করা প্রয়োজন। তবে হতাশ হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা দেখতে পাচ্ছি পরিবর্তনের বাতাস বইতে শুরু করেছে। আশা করি সবার চেষ্টায় নতুন একটি গল্প আমরা তৈরি করতে পারব। যেখানে একটা শক্ত, সক্ষম, কার্যকর ও স্বচ্ছ শেয়ার মার্কেট আমরা উপহার দিতে পারব।
অর্থনৈতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এ ছাড়া দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান, এমডিসহ চার শতাধিক অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।