Apan Desh | আপন দেশ

বিএসইসির চেয়ারম্যান মাকসুদ বললেন একচুল পরিমাণ সরব না

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:৪৬, ৬ মার্চ ২০২৫

বিএসইসির চেয়ারম্যান মাকসুদ বললেন একচুল পরিমাণ সরব না

ছবি: আপন দেশ

শেয়ারবাজারে অনিয়ম নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার প্রশ্নে অবিচল থাকবেন বলে মন্তব্য করেছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। বলেছেন, সরকারের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাদেরকে সরকার এখানে পাঠিয়েছেন- একটা মিশন দিয়ে; সে মিশন থেকে আমরা একচুল পরিমাণ সরব না। কোনো ধরনের অন্যায় দাবির কাছে আমরা মাথা নত করব না। আমরা যে কাজটা নিষ্ঠা, নিয়মনীতির সঙ্গে করে যাচ্ছি, সে কাজটা করে যাব।

বৃহস্পতিবার (০৬ মার্চ) বিকেলে আগারগাঁওয়ে বিএসইসি ভবনে ব্রিফিংয়ে এ মন্তব্য করেন রাশেদ মাকসুদ।

গত মঙ্গলবার সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরের পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। সে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারসহ পাঁচ দাবিতে বুধবার (০৫ মার্চ) কমিশনকে অবরুদ্ধ করেছিলেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে সেনা নিরাপত্তায় কমিশন সদস্যরা কার্যালয় ছাড়েন।

এদিকে কমিশনের পদত্যাগ দাবিতে বৃহস্পতিবার কর্মবিরতি পালন করেন সংস্থার কর্মীরা। এর মধ্যে বিকেল ৩টার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় তিন কমিশনারকে নিয়ে কার্যালয়ে প্রবেশ করেন চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ।

পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, আজকে সরকার আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে। বলেছে- আমরা যে কাজগুলা করছি, সেগুলো যাতে আরও জোরদারভাবে করতে পারি। সে কাজটা করে যাব, এটুকুই আমরা বলব। 

সরকার বলতে কার সঙ্গে কথা বলেছেন, এ প্রশ্নের উত্তরে চেয়ারম্যান বলেন, আমরা সরকারের সঙ্গেই কথা বলেছি তো।

এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতিতে আছে, তো আপনি কাদেরকে নিয়ে কাজ করবেন। তাদের দাবি পুরো কমিশন অযোগ্য এবং শেয়ারবাজার নিয়ে আপনাদের কোনো ধরনের জ্ঞান নেই।

উত্তরে রাশেদ মাকসুদ বলেন, আমি আসলে এ ধরনের কমেন্টের কোন উত্তর এখনো দেইনি, আগেও কখনো দেইনি, এখনো দেবো না।

বিভিন্ন অভিযোগে যেসব তদন্ত হয়েছে, সে সব প্রতিবেদন প্রকাশ করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তুলেছেন কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করেছি যে, আমরা এ পর্যন্ত সাতটা তদন্ত রিপোর্ট পেয়েছি।

এর মধ্যে তিনটি এনফোর্সমেন্টে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, যখন আমাদের এনফোর্সমেন্ট অ্যাকশনটা শেষ হবে, তখন আমরা তদন্ত প্রতিবেদন আপনারা আমাদের ওয়েবসাইটে পেয়ে যাবেন।

সাংবাদিকরা জানতে চান, আগে যারা বিভিন্ন অনিয়মে জড়িত ছিলেন, অচলাবস্থা সৃষ্টিতে তাদের কি কোনো ভূমিকা রয়েছে?

রাশেদ মাকসুদ বলেন, আমাদের তদন্ত তো সমস্ত কিছু ২০২৪ সাল পর্যন্ত- যে সমস্ত অনিয়ম এবং দুর্নীতি হয়েছে। তো কাজেই এটাতে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের তো অবশ্যই সেখানে তাদের ইন্টারেস্ট আছে- এ তদন্ত যাতে ব্যাহত হয়।

আন্দোলনকারীরা যদি কাজে না ফেরেন? এ প্রশ্নের উত্তরে কমিশনার ফারজানা লালারুখ বলেন, আমরা আহবান জানাব- ওনাদেরকে কাজে ফিরে আসার জন্য।

যদি না আসেন? ফারাজানা বলেন, সেটা দেখা যাবে।

নিয়মতান্ত্রিকভাবে সাইফুর রহমানকে অবসরে পাঠানো হয়নি বলে ভাষ্য আন্দোলনকারীদের।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ বলেন, মানা হয়েছে, সমস্ত কিছুর নিয়ম মেনেই করা হয়েছে।

তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলেছেন আন্দোলনকারীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাশেদ মাকসুদ বলেন, একেবারেই মিথ্যা অভিযোগ।

এসময় কমিশনার মহসীন চৌধুরী, আলী আকবর উপস্থিত ছিলেন।

‘কর্মবিরতি চলবে’

এর আগে বেলা ২টায় বিএসইসি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে আসেন আন্দোলনকারীরা। সেখানে আগের দিনের পাঁচ দাবি থেকে সরে এসে চার দাবি তুলে ধরা হয়।

বর্তমান কমিশনকে অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।‘মিথ্যা তথ্য দিয়ে’ সেনা সদস্যদের ডাকার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লাঠিচার্জ করার ঘটনায় কমিশনকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টার সরাসরি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বিএসইসির জন্য শেয়ারবাজার সম্পর্কে অভিজ্ঞ, যোগ্য চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগ দিতে হবে।

সংস্কারের অংশ হিসেবে কমিশনকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের আহবায়ক মোহাম্মদ আবুল হাসান বলেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।

বিএসইসি কমিশনার মহসীন চৌধুরীকে ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ আখ্যা দিয়ে তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, ২০১৭ সালে যুগ্মসচিব পদে থাকাকালীন মহসীন চৌধুরী স্বৈরাচারী সরকারের তৎকালীন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নুরুল ইসলামের একান্ত সচিব ছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোট ডাকাতির কাজে সহযোগিতার পুরস্কার হিসাবে ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে নিয়োগ পান। পরবর্তীতে তার তোষামাদির পুরস্কার স্বরূপ তাকে (আওয়ামী লীগ আমলে) সচিব পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়।

বিএসইসি নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব মোহাম্মদ মিরাজ উস সুন্নাহ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়