
প্রতীকী ছবি
সপ্তাহ ভালো কাটেনি ঢাকার শেয়াবাজারে, টানা পতনে কমেছে সবকটি সূচক। সূচকের পতনের পাশাপাশি সারা সপ্তাহে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম ছিল নিম্নমুখী।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাপ্তাহিক লেনদেন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পাঁচ কার্যদিবসে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ২৩ পয়েন্ট। ৫২২৫ পয়েন্ট নিয়ে শুরু হওয়া লেনদেন সপ্তাহ শেষে এসে ঠেকেছে ৫২০১ পয়েন্টে।
বাকি দুই সূচকের মধ্যে শরীয়া ভিত্তিক ডিএসইএস কমেছে১৩ পয়েন্ট ও বাছাইকৃত কোম্পানির ব্লু-চিপ শেয়ার ডিএস-৩০ কমেছে ৭ পয়েন্ট।
বেহাল দশা ছোট এবং মাঝারি আকারের কোম্পানিতেই। ডিএসই'র এসএমই সূচক কমেছে ১৬ পয়েন্ট। এক সপ্তাহের লেনদেনে এ খাত ১.৬৩ শতাংশ সূচক হারিয়েছে।
সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম ছিল নিম্নমুখী। সারা সপ্তাহে ১৪৯ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ২০৭ কোম্পানির। দর অপরিবর্তিত ছিল ৩৮ কোম্পানির এবং ১৮ কোম্পানি অংশ নেয়নি লেনদেনে।
সপ্তাহের শুরু থেকে বেশিরভাগ কোম্পানির দাম কমতে থাকলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রির ধুম লেগে যায়। এতে করে আদতে লেনদেন বাড়লেও বাড়েনি শেয়ারের সামগ্রিক দাম।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে পাঁচ কার্যদিবসের গড় লেনদেন ছিল ৪৭৮ কোটি টাকা। যা গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় ২২ শতাংশ বেশি।
তবে গড় লেনদেন বাড়লেও বাজার থেকে কমেছে মোট মূলধনের পরিমাণ। ব্রোকারেজ হাউজগুলোর দেয়া তথ্য অনুসারে, অনেক বিনিয়োগকারীই তলি তল্পা গুটিয়ে বাজার ছেড়েছেন। বাজারে বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস গিয়ে ঠেকেছে তলানিতে।
ডিএসই'র সাপ্তাহিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ৩৩৩ মিলিয়ন ডলার।
সপ্তাহজুড়ে ব্যাংক, আইটি, লাইফ ইনস্যুরেন্স, টেক্সটাইল, সাধারণ বীমা, ট্যানারি, টেলিকম ও পাটখাতে রিটার্ন কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে।
অন্যদিকে মিউচুয়াল ফান্ড, সিরামিক, রিয়েল স্টেট, কাগজশিল্প, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, করপোরেট বন্ড, প্রকৌশল, জ্বালানি এবং ঔষধশিল্পে ভালো রিটার্ন এসেছে। এদের মধ্যে মিউচুয়াল ফান্ডে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ রিটার্ন এসেছে।
সপ্তাহজুড়ে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে শাইনপুকুর সিরামিকসের। পাঁচ কার্যদিবসে কোম্পানিটির মোট ১৬ কোটি ১৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয়ে আছে স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস পিএলসি। সাপ্তাহিক হিসাবে কোম্পানিটির মোট ১৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
পাঁচ কার্যদিবসে ব্লক মার্কেটে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে মারিকোর শেয়ার। মারিকোর পরেই শেয়ার বিক্রিতে এগিয়ে আছে এক্সপ্রেস ইনস্যুরেন্স লিমিটেড, ব্যাংক এশিয়া, বিচ হ্যাচারি এবং খান ব্রাদার্স।
সারা সপ্তাহে লেনদেনে দরবৃদ্ধির তালিকায় শীর্ষে আছে প্রোগ্রেসিভ লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেড। জেড ক্যাটাগরির এ কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশের বেশি। ৪৭ টাকায় লেনদেন শুরু হওয়া কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সপ্তাহ শেষে হয়েছে ৬২ টাকা।
অন্যদিকে সাপ্তাহিক লেনদেনে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ৬৫ টাকায় শেয়ারপ্রতি লেনদেনে সপ্তাহ শেষে কমে হয়েছে ৫৬ টাকা।
শেয়ারবাজারে বেহাল দশা কাটিয়ে উঠতে গত সপ্তাহে সোমবার (১৭ মার্চ) শেয়ারবাজার উন্নয়নে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে সরকার। কমিটি গঠনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়, দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে অধিকতর শক্তিশালীকরণ ও সর্বোপরি দেশের পুঁজিবাজার উন্নয়নের জন্য কমিটি কাজ করবে।
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টাস্কফোর্স এবং কমিটি উভয়কেই কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। আর নইলে সভা করে বাজারে চলমান সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে না।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) বজায় ছিল সূচকের পতনের ধারা। সিএসইতে সার্বিক সূচক কমেছে ১৭ পয়েন্ট। ১৪৫৭৬ পয়েন্ট নিয়ে লেনদেন শুরু হলেও সপ্তাহান্তে সূচক দাঁড়িয়েছে ১৪৫৫৯ পয়েন্টে।
সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ৩০২ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৫৪, কমেছে ১২৪ ও অপরিবর্তিত আছে ২৪ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
পাঁচ কার্যদিবসে সিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের শেয়ার। এছাড়া লেনদেনে শীর্ষ তালিকায় আছে উত্তরা ব্যাংক, ফাইন ফুডস, রবি, ফু-ওয়ান সিরামিক ও শাইনপুকুরের শেয়ার।
সিএসইতে দরবৃদ্ধিতে শীর্ষে উঠে এসেছে প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্স কোম্পানি। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি দাম বেড়েছে ১০ টাকা করে।
এছাড়া ভালো অবস্থানে আছে শাইনপুকুর সিরামিকস, ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল, সেমি লেকচার ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট ও এস আলম কোল্ড রোলড স্টিলস।
অন্যদিকে দরপতনে শীর্ষে উঠে এসেছে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। সপ্তাহ ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কমেছে ১৫ টাকা। ডিএসই'র মতো সিএসইতেও ধস নেমেছে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজে। পাঁচ কার্যদিবসের লেনদেনে আলিফের শেয়ারপ্রতি দাম কমেছে ১৪ টাকা।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।